ব্যাংকের সিস্টেমে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেওয়ার সুযোগে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে গেছেন গ্রাহকরা, যার কোনো হিসাব মিলছে না। সম্প্রতি অনভিপ্রেত এই ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ায়। দেশটির বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্মাশিয়াল ব্যাংক অব ইথিওপিয়া (সিবিই) থেকে ৪০০ কোটি টাকার বেশি তুলে নিয়েছেন গ্রাহকরা।
বিবিসি জানিয়েছে, গত শনিবার (১৬ মার্চ) মধ্যরাতে সিবিইর গ্রাহকরা আবিষ্কার করেন, তাদের অ্যাকাউন্টে যত টাকা রয়েছে, তার চেয়ে বেশি অর্থ তুলে নিতে পারছেন। এ কথা মেসেজিং অ্যাপ ও ফোনকলের মাধ্যমে ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে গ্রাহকদের কাছে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
স্থানীয় মিডিয়ার খবর অনুসারে, কারিগরি ত্রুটির সুযোগ নিয়ে সিবিই থেকে চার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি (অন্তত ৪৩৮ কোটি টাকা) তুলে নেওয়া বা অন্যান্য ব্যাংকে স্থানান্তর করেছেন গ্রাহকরা।
এসব ট্রানজেকশন স্থগিত করতে কয়েক ঘণ্টা লেগে গিয়েছিল কর্তৃপক্ষের। ততক্ষণে হাতছাড়া হয়ে যায় বিপুল পরিমাণ অর্থ। এর বেশিরভাগই নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সিবিই প্রেসিডেন্ট আবে সানো গত সোমবার সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন।
সিস্টেমে ত্রুটির খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ক্যাম্পাস এলাকায় থাকা এটিএম বুথগুলোতে দীর্ঘ লাইন লেগে যায়। এক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, পুলিশ এসে বন্ধ করার আগপর্যন্ত মানুষজন এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলছিলেন।
জিম্মা ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ওই শিক্ষার্থী বলেন, তিনি প্রথমে বিশ্বাস করেননি, যখন বন্ধুরা তাকে বলেছিল, এটিএম বুথ থেকে প্রচুর টাকা তোলা বা ব্যাংকের অ্যাপ ব্যবহার করে অন্যত্র স্থানান্তর করা যাচ্ছে।
দক্ষিণ ইথিওপিয়ার ডিলা ইউনিভার্সিটির আরেক শিক্ষার্থী বলেছেন, স্থানীয় সময় মধ্যরাত থেকে দুপুর ২টার মধ্যে তার কয়েকজন সহপাঠী সিবিই থেকে অর্থ তুলেছিল।
৮২ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটির বর্তমানে গ্রাহক রয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখের বেশি।
ইথিওপিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত রোববার এক বিবৃতি বলেছে, ‘রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিদর্শন কার্যক্রম চলাকালীন’ ব্যাংকটিতে ‘একটি ত্রুটি’ দেখা দিয়েছিল। তবে এই ত্রুটির কারণে সিবিইর কী পরিমাণ অর্থ হাতছাড়া হয়েছে তা জানায়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সিবিই প্রেসিডেন্টও নির্দিষ্ট করে বলেননি শনিবারের ঘটনায় কী পরিমাণ অর্থ তোলা হয়েছিল। তবে তিনি দাবি করেছেন, ব্যাংকের মোট সম্পদের তুলনায় ক্ষতির পরিমাণ সামান্যই।
গ্রাহকদের আশ্বস্ত করে আবে সানো বলেছেন, সিবিই কোনো সাইবার আক্রমণের শিকার হয়নি। সবার অ্যাকাউন্টের অর্থ অক্ষত রয়েছে।
ব্যাংকের সিস্টেমে ত্রুটির সুযোগে তুলে নেওয়া অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছে অন্তত তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়। অর্থ ফেরত দেওয়া কারও বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনা হবে না বলে জানিয়েছেন সিবিই প্রেসিডেন্ট।
তবে তাদের এই প্রচেষ্টা কতটা সফল হচ্ছে তা নিশ্চিত নয়। জিম্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই শিক্ষার্থী বলেছেন, কেউ টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে বলে তিনি শোনেননি। তবে ক্যাম্পাসে পুলিশের গাড়ি দেখেছেন।