কাজীরহাটে পুলিশের ছিনতাই মামলা নাটক!

কাজীরহাট পুলিশের ছিনতাইর নাটক ফাঁস ভিডিওসহ

কাজীরহাট পুলিশের ছিনতাইর নাটক ফাঁস ভিডিওসহ> এম. লোকমান হোসাঈন ॥ রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় নিজ দলের কর্মীকে হত্যা চেষ্টা! অত:পর নিজেদের বাচাঁতে উল্টো ছিনতাই মামলার নাটক সাজানো হয়েছে। সব কিছুই করা হয়েছে পুলিশের সহযোগিতায়। ঘটনার ৫ বছর পরে বেড়িয়ে আসে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।

মামলা বাদী জাকিরের  দেয়া ভিডিও বক্তব্যে এমনটাই বেড়িয়ে আসে। ওই সময়কার থানার এসআই মো: আলী আজম ও থানার ওসি মাছুম তালুকদারের (বিপি-৭৪০২০৪৮৭৬৪) চাঁপে মামলার বাদী হন তিনি।

মামলাটি মিথ্যা..

যদিও মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হয় আদালতে। বরিশাল জেলা কাজীরহাট থানা আওয়ামীলীগের সহ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, বিদ্যানন্দপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য এবং একই এলাকার বাসীন্দা, শান্তি রঞ্জন শীলের ছেলে সঞ্জয় চন্দ্র শীল এর দায়েরকৃত মামলার তদন্তে পিবিআই ও সিআইডির প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে আসামীরা উভয়ে আওয়ামীলীগের সাথে জড়িত।

রাজনৈতিক প্রতিহিংসা

রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফলে হামলার ঘটনা ঘটে। ছিনতাই করার অপরাধে স্থানীয় লোকজন গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দেন। পুলিশ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে চিকিৎসা করা জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। এভাবেই রম্য রচনা লিখে ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনে আওয়ামীলীগ কর্মীকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। পঙ্গু অবস্থায় দীর্ঘদিন থাকতে হয় জেল হাজতেই।

জেল থেকে বের হয়ে ঘটনার কারন সম্পর্কে জানতে আদালত পাড়া থেকে শুরু করে একের পর এক পুলিশ দপ্তরে ছুটতে শুরু করেন ভুক্তভোগী আওয়ামীলীগ কর্মী সঞ্জয় চন্দ্র। ঘটনাটি বরিশাল জেলার কাজীর থানাধীন ভাসানচর এলাকার সাতহাজার বিঘা গ্রামে গত ৫ বছর পূর্বের। ভুক্তভোগী সঞ্জয় চন্দ্র কাজীর থানা আওয়ামীলীগের সহ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, কাজীরহাট থানাধীন বিদ্যানন্দপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য এবং একই এলাকার বাসীন্দা,শান্তি রঞ্জন শীলের ছেলে।

সঞ্জয় চন্দ্র সময়ের বার্তার কাছে দাবী করছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জের ধরে ২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল বেলা ১টার দিকে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল মিয়া, বিদ্যানন্দপুর ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির সিকদার, ৯নং বিদ্যানন্দপুর ওয়ার্ড‘র ইউপি সদস্য শাহ আলম মীর, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল মিয়ার ছেলে মনির মিয়া, উপজেলা মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যানের স্বামী রহিম শরিফ,

ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আনজার হোসেন ও মশিউর রহমান পলাশ সহ ১৭/১৮ জন ক্যাডার বাহিনী সাতহাজার বিঘা এলাকার সাইক্লোন সেন্টারের সামনে রাস্তার উপর ফেলে চাপাতি ও হাতুরী দিয়ে মারধর করেন। এসময় সঞ্জয় চন্দ্র শীলের একটি হাত দুইটি পা ভেংঙ্গে শরীরে বিভিন্ন যায়গায় গুরুতর আঘাত করেন। আসামীরা সাইক্লোন সেন্টারের সামনে থেকে তুলে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূর অবস্থিত মাইনুদ্দিন নামক এক ব্যক্তির চায়ের দোকানের সামনে ফেলে পালিয়ে যায় ক্যাডার বাহিনীরা।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি

পরে সঞ্জয়ের ছোট ভাই ও স্থানীয়রা উদ্বার করে মুলাদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করান। আহত সঞ্জয়ের অবস্থা গুরুতর দেখে কর্তবরত ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল সেবাচিম হাসপাতালে প্রেরন করা হলে, ঘটনার দিন ২০ এপ্রিল বিকাল ৪টা ২ মিনিটে সেবাচিমে ভর্তি করা হয়েছে।

অথচ, কাজীরহাট থানার সাধারন ডাইরী সূত্রে পুলিশ দাবী করছেন, জাকির সিকদার নামক জনৈক ব্যক্তিকে পথরোধ করে গলায় দেশী অস্ত্র ধরে ভয়ভীতি দেখাইয়া জাকিরের পকেট নগদ ১৫ হাজার টাকা জোরপূর্বক ছিনাইয়া নিয়ে পালিয়ে যাবার সময় জাকিরের ডাকচিৎকারে লোকজন এসে সঞ্জয়কে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের কাছে প্রেরন।

পুলিশ ৫৪ ধারার ক্ষমতা

পুলিশ ৫৪ ধারার ক্ষমতা বলে গ্রেফতার করে পুলিশ পাহাড়ার মাধ্যমে চিকিৎসার জন্য মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ভর্তি করায়। ঘটনার দিন ৭০৯ নং জিডির মূলে ৫৪ ধারায় পুলিশ বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে সঞ্জয়কে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। সময়ের বার্তা‘র কাছে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, ঘটনার দিন সঞ্জয়কে যে জিডির মূলে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, তাতেও রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম।

পুলিশের দাবী

পুলিশের দাবী অনুযায়ী সঞ্জয়কে তাদের মাধ্যমে চিকিসা করা হলে, কেন পুলিশ প্রবিধান-৩১২, (১৮৬১ সালের ৫নং আইনের ১২) ধারামতে সঞ্জয়কে বি,পি ফরম নং- ৩৮৬৫ এর মাধ্যমে একটি প্রতিবেদন মেডিকেল অফিসারের নিকট পাঠানো হয়নি। অনুসন্ধানে আরো দেখায়, মামলার বাদী কাজীরহাট থানা অফিসার ইনচার্জ বরাবর দাখিলকৃত অভিযোগ পত্রে দাবী করেছেন, জাকির সহ স্থানীয় একাধিক লোকজন মিলে সঞ্জয়কে আটক করে থানার উদ্দেশ্যে যাবার পথে একটি দোকানের সামনে থেকে জনসাধারণের রোষানল হইতে উদ্বার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

রম্য রচনা লিখে প্রতিবেদন

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো: আলী আজিম (বিপি-৭৫৯৩০৪৩৮১৮)  এজাহারের প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে ঘটনার স্থান থানা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দেখানো হয়েছে। বাস্তবে ৮ কিলোমিটার ২১শ ফুট। শুধু এখানেই শেষ নয়, এজাহারের সংক্ষিপ্ত বিবরণ  ও তদন্তে তার মনগড়া রম্য রচনা লিখে প্রতিবেদন উল্লেখ করেছেন।

এছাড়া প্রতিবেদনে সঞ্জয়কে পুলিশ পাহাড়ায় চিকিসা করানোর কথা উল্লেখ করা হলেও যার কোন প্রমান দেখাতে পারেননি তদন্তকারী এই কর্মকর্তা। মূলত ঘটনার দিন সঞ্জয়কে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তার ছোট ভাই সুমন উদ্বার করে চিকিসার ব্যবস্থা করেছেন। যার প্রমান স্বরুপ সেবাচিমের চিকিসাপত্রে পরিচিতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

সঞ্জয় চন্দ্র শীল সময়ের বার্তাকে…

এবিষয় সঞ্জয় চন্দ্র শীল সময়ের বার্তাকে জানান, তাকে তিন হাত-পা পঙ্গু অবস্থায় বরিশাল সেবাচিম হাসপাতালে চিকিসরত কালীন পুলিশ  বাম হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে রশি দিয়ে হাসপাতালের সিটের সাথে বেধে রাখা হয়। তিনি আরো জানান, তৎকালীন বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার যিনি বর্তমানের বরিশাল জেলা রেঞ্জ ডিআইজি  এস এম আক্তারুজ্জামান সঞ্জয়-কে বলেন, হাই কমান্ডের নির্দেশে তাকে হ্যান্ডকাপ পড়ানো হয়েছে। পরে জানতে পারেন তার বিরুদ্ধে দ্রুত বিচারিক আদালতে ছিনতাই মামলা করা হয়েছে। উক্ত মামলায় তাকে দীর্ঘদিন জেল হাজতে রাখা হয়েছে।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

Check Also

প্রধান বিচারপতির কাছে নাজির কামরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ

প্রধান বিচারপতির কাছে নাজির কামরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ

প্রধান বিচারপতির কাছে নাজির কামরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ।।  মিথ্যা মামলা দিয়ে অর্থ বাণিজ্যপ্রভাব খাটিয়ে রায়ের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *