১৯৯০ সালে বুড়িগঙ্গায় কমবেশি ১৩ শতাংশ (৬৭.৬৩ বর্গ কিলোমিটার) এলাকা জলাশয় বা জলাভূমি ছিল। ২০০০ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় কমবেশি ১৫ শতাংশে (৭৯.৯১ বর্গকিলোমিটার)। ২০০০ সাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত নদীর অববাহিকায় হঠাৎ করে জলাভূমির হার প্রায় ৬ শতাংশ কমে ৯ শতাংশে এসে দাঁড়ায়। ২০১০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত জলাভূমির পরিমাণ আরও কমে ৭.১৭ শতাংশ এসে দাঁড়ায়। বুড়িগঙ্গায় জলাভূমির পরিমাণ ১৯৯০ সাল থেকে ১২.৬৩ শতাংশ কমে ২০২০ সালে ৭.১৭ শতাংশে এসেছে। অর্থাৎ গত ৩০ বছরে জলাভূমি কমেছে ৫.৪৬ শতাংশ।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) রাজধানীর দৃকপাঠ ভবনে আয়োজিত ‘বুড়িগঙ্গা: নিরুদ্ধ নদীর পুনরুদ্ধার শীর্ষক’ গবেষণা ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন। তিনি বলেন, বুড়িগঙ্গা অববাহিকায় ভূমিরূপের পরিবর্তন বোঝার জন্য এই গবেষণায় ১৯৯০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১০ বছর ব্যবধানের উপগ্রহচিত্র বিশ্লেষণ করা হয়েছে। চারটি ব্যাপক মাত্রায় ব্যবহৃত সূচক এক্ষেত্রে বেছে নেওয়া হয়েছিল- নিম্নভূমি, বসতি, সবুজাঞ্চল, জলাভূমি। বুড়িগঙ্গা নদীপ্রবাহের দুই পাশে দুই কিলোমিটার বাফার এরিয়া ধরে এর অববাহিকা ৫৩৬ বর্গকিলেমিটার নির্ধারিত হয়েছে।
এছাড়াও গবেষণাটিতে বলা হয়, ১৯৯০ সালে বুড়িগঙ্গা অববাহিকার সবুজাঞ্চল ১৯৯০ সালের আগে ছিল প্রায় ৩৩.৭৬ শতাংশ। নতুন নতুন বসতি শুরু হলে ওই বছরই সেটা কমে ৩২.৯৪ শতাংশে দাঁড়ায়। এ সময় নিম্নভূমি ছিল ২০.৬৭ শতাংশ, সবুজাঞ্চলের তুলনায় দুই-তৃতীয়াংশ প্রায়। কিন্তু ২০২০ সালে এসে সবুজাঞ্চল কমে ২৩ শতাংশে দাঁড়ায়; অন্যদিকে বসতি ও নিম্নভূমি বেড়ে যথাক্রমে কমবেশি ৩৫ ও ২৮ শতাংশে দাঁড়ায়। এরপর থেকে সবুজাঞ্চল হ্রাস এবং বসতি ও নিম্নভূমির প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকে।
২০২০ সালে এসে দেখা যায়, নিম্নভূমি যেমন ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে; তেমনই ব্যাপক মাত্রায় কমেছে সবুজাঞ্চল ও জলাভূমি। নিম্নভূমি ১৯৯০ সালের ২০.৬৭ শতাশ থেকে বেড়ে ২০২০ সালে ৩৬.৪৩ শতাংশে দাঁড়ায়। অর্থ্যাৎ গত ৩০ বছরে নদীর অববাহিকায় নিম্নভূমি বেড়েছে ১৫.৭৬ শতাংশ। সবুজাঞ্চল ১৯৯০ সালের ৩৩.৩৭ শতাংশ থেকে কমে ২০২০ সালে ১৮.৭৬ শতাংশে দাঁড়ায়।
এর অর্থ দাঁড়ায়, বুড়িগঙ্গা অববাহিকায় সবুজাঞ্চল ও জলাভূমি ক্রমবর্ধমান হারে নিম্নভূমিতে পরিণত হয়েছে এবং সেখানে নতুন বসতি স্থাপিত হয়েছে।
দৃক পিকচার লাইব্রেরি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি, ক্যাপস, রিভারাইন পিপল, বেলা, দ্য ডেইলি স্টার, পিপিআরসির অংশগ্রহণে এই গবেষণাটি করা হয়।
গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে সভা প্রধান ছিলেন ফটোসাংবাদিক শহিদুল আলম, আলোচক হিসেবে ছিলেন বারসিকের পরিচালক পাভেল পার্থ। ভিডিও বার্তায় বক্তব্য দিয়েছেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।