গ্যাসের সমস্যায় ভুগে গ্যাস্ট্রিক থেকে চিরমুক্তির উপায় খোঁজেন না, এমন মানুষ নেই বললেই চলে। প্রতিদিন ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকরা খাদ্য গ্রহণের ফলে সবারই কমবেশি এই সমস্যায় ভুগতে হয়। অনেকেই গ্যাস্ট্রিক থেকে চিরমুক্তির জন্য ঔষধ সেবন করে থাকেন। তবে এ সকল ঔষধ সাময়িক স্বস্তি দিলেও সমস্যার আসল সমাধান কিন্তু হয় না।
আবার অনেকেই আছেন, ঔষধের পাশাপাশি এই সমস্যা সারিয়ে তুলতে নিয়মিত চিকিৎসা করান । যদিও গ্যাস্ট্রিক সমস্যা সমাধানের কার্যকরী কিছু ঔষধও রয়েছে। তবে সত্যিকার অর্থে শুধু ওষুধ খেলে আপনি কিছু সময়ের জন্য ভালো থাকবেন। কয়েক ঘণ্টা পরে আবার সেই একই সমস্যা তৈরি হবে। গ্যাস্ট্রিক থেকে চিরমুক্তির উপায় হিসেবে প্রাকৃতিক কিছু উপায় রয়েছে, যা আপনার অনুসরণ করা উচিত।
একজন ব্যক্তির পেটে গ্যাসের সমস্যা হওয়ার পেছনে প্রতিদিনকার জীবনযাত্রা একটা বড় ভূমিকা পালন করে। দৈনন্দিন বিভিন্ন অভ্যাস, বদ্যাভাস এবং খাদ্যাভ্যাস এইসব ব্যাপারগুলো পরিপূর্ণ সঠিক নিয়ম হচ্ছে কি না, তার উপর গ্যাসের সমস্যা অনেকাংশে দায়ী। তাই গ্যাস্ট্রিক থেকে বাঁচার জন্য এমন কিছু বাজে অভ্যাস আপনার পরিবর্তন করা উচিত, যা পরবর্তীতে আরো ভয়ঙ্কর রোগের দিকে আপনাকে ঠেলে নেবে। তাহলে চলুন, জেনে নেই সমাধানগুলো।
গ্যাস্ট্রিক থেকে চিরমুক্তির উপায় কী?
১. সঠিক খাবার গ্রহণ
অতিরিক্ত তেল এবং ঝাল মশলা জাতীয় খাদ্য থেকে দূরে থাকতে হবে এটা তো আমরা সবাই জানি। গ্যাস্ট্রিক থেকে চিরমুক্তির জন্য আরও কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। আমরা প্রায়শই একসাথে অনেক কিছু খেয়ে ফেলি। আমরা মনে করি এতে করে আমাদের শরীরে প্রচুর পুষ্টির যোগান হবে। আর এভাবেই আমরা গুরুত্বপূর্ণ খাবারগুলো নির্বাচনে ভুল করে থাকি।
তবে এতে করে আমাদের আসলে উপকারের চেয়ে ক্ষতিটাই বেশি হয়। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পরিমাণে খাদ্য গ্রহণে হজমে সমস্যা হয় এবং গ্যাসের সৃষ্টি হয়। অনেকেই দুপুরে খাবার পর সঙ্গে সঙ্গে ফল খান। এটি একদমই ভুল কাজ। আপনার মূল খাবার ও ফল গ্রহণের মধ্যে অন্তত এক ঘণ্টা বিরতি দেয়া উচিৎ।
আবার অনেকেই রাতে দুধের সাথে অন্যান্য তরকারী বা রুটি খেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, রাতে দুধ খাওয়ার প্রয়োজন হলে তা মূল খাবার খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর খান। তবে অবশ্যই দুধের সাথে কোন নোনতা বা ভাজা খাবার একদমই গ্রহণ করা উচিত না।
২. খাওয়ার সঠিক সময় নির্বাচন
আমাদের সবার জীবন নির্দিষ্ট একটি নিয়ম মেনে চলে। অথচ খাবার খাওয়ারও যে সঠিক সময় রয়েছে, তা আমরা অনেকেই মানি না। সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে রাতের খাবার; সকিছুরই সঠিক একটি সময় রয়েছে। যেমন সকালে ৮ থেকে ৯ টার মধ্যে নাস্তা সেরে নেওয়া উচিৎ।
অথচ ঘুম থেকে উঠতে উঠতে যদি সকলা ১০/১১ টা বেজে যায়, তাহলে সকালের খাবার খেতেও অনেক দেরী হয়ে যায়। এর ফলে গ্যাস ও বদহজমের সমস্যা লেগেই থাকে। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শরীরকে উপযুক্ত খাবার দেওয়া উচিৎ। কারণ এ সময় শরীরে খাবারের প্রয়োজন থাকে সবচেয়ে বেশি।
অপরদিকে দুপুরের খাবারও ১২ টা থেকে ১ টার মধ্যে গ্রহণ করা উচিৎ। পাশপাশি রাতেও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খাওয়া শেষ করা জরুরী। আয়ুর্বেদের মতে সন্ধ্যা ৬ টায় রাতের খাবার সেরে ফেলার পরামর্শ দেয়া হয়। যদিও এটা অনেকাংশেই সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই অন্তত চেষ্টা করুন রাত ৯ টার মধ্যে ডিনার সেরে ফেলার।
আপনি যদি রাতে দ্রুত খাবার খান, তবে তা পরবর্তী দিন সকালের মধ্য হজম হয়ে যাবে। ফলে সকালে পুনরায় খাদ্যগ্রহণের জন্য আপনার শরীর আবার প্রস্তুত হয়ে যায়। কিন্তু রাতে খাদ্য গ্রহণ বেশি দেরী হলে হজম প্রক্রিয়া অনেক রাত অবধি চলতে থাকে। এতে করে ঠিকমত হজমের প্রক্রিয়া পরিচলিত হতে পারে না। যা আপনার পেটে গ্যাস জমার অন্যতম প্রধান কারণ।
৩. ভালো করে চিবিয়ে খান
খাবার গ্রহণের সময় অনেকেই বেশ তাড়াহুড়া করে থাকেন। দ্রুত খেতে গিয়ে আপনি যদি খাবার ভালো ভাবে না চিবিয়ে থাকেন, তাহলে তা আপনার গ্যাস্ট্রিক বাড়িয়ে দেয়ার জন্য অনেকাংশে দায়ী। কেননা খাবার হজমের সাথে চিবিয়ে খাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে।
খাবার সঠিকভাবে চিবিয়ে না খেলে পাকস্থলীর ওপর ভীষণ চাপ পরে। এতে করে পাকস্থলী ধীরে ধীরে খাবার হজমের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। অন্যদিকে ভালো করে চিবিয়ে খেলে খাবার সহজেই হজম হয়ে যায়। তাই খাবার খাওয়ার সময় তাড়াহুড়া না করে মনোযোগ দিয়ে খান। তাড়াতাড়ি করে বা অন্য কাজ করতে করতে খাবেন না।
৪. ক্ষতিকর খাবার ত্যাগ করুন
পথে-ঘাটে চলতে অতিরিক্ত অতিরিক্ত তেল সমৃদ্ধ খাবার ত্যাগ করুন। শুধু বাইরেই না, ঘরেও যতটা সম্ভব কম তেলে রান্নার চেষ্টা করুন। সবথেকে ভালো হয় তেল ছাড়া সেদ্ধ খাবার খেতে পারলে। এছাড়াও সন্ধ্যা বেলা চপ-সিঙ্গারা থেকেও একটু বিরত থাকার চেষ্টা করুন। এসব খাবারে প্রচুর তেল থাকে।
সাধারণত বিকেলের পর মানুষের শরীরে হজম ক্ষমতা একেবারেই কমে যায়। তাই সন্ধ্যাবেলা চপ সিঙ্গারা ঠিকমত হজম তো হয়ই না, তার ওপর রাতের খাবার। এতে করে শরীরের ওপর প্রচণ্ড চাপ পরে। ফলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যার পাশাপাশি অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও হতে পারে।
৫. ধূমপান পরিহার করুন
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু মানি ক’জন? ধূমপান বা অ্যালকোহল এমনিতেই বদ অভ্যাস। অতিরিক্ত ধূমপান বা অ্যালকোহল সেবন শরীরের হজম প্রক্রিয়ায় বাঁধার সৃষ্টি করে। ফলে পেটের ভেতরে গ্যাস জমতে থাকে।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানে ঘরোয়া প্রতিকার
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানের জন্য বেশকিছু ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক প্রতিকার রয়েছে। যারা নিজের মন মত ডাক্তারের পরামর্শ ব্যাতিত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবন করে থাকেন, তারা নিচের প্রাকৃতিক উপাদানগুলো খেতে পারেন। যেগুলো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক হওয়ায় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানে দারুণ কার্যকর।
- সতেজ আদা: হজমে সাহায্যের জন্য সতেজ আদা কুচি বা আদার চা অনেক উপকারী। তাই যখনই পেটে গ্যাস হবে এক চা চামচ আদা কুচি সামান্য লেবুর রস দিয়ে চিবিয়ে খেলে ধীরে ধীরে আরাম পাওয়া যাবে।
- টক দই: টক দই অন্ত্রের গুড ব্যাকটেরিয়ার উৎপাদনকে স্টিমুলেট করে। ফলে নিয়মিত টক দই খেলে বদ হজম বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কম হয়। তাই প্রতিদিন অন্তত ৩০-৬০ গ্রাম টক দই খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- ত্রিফলা: অর্ধেক চা চামচ ত্রিফলা পানিতে ১০-১৫ মিনিট ফুটিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে পান করলে আপনার পেটের অতিরিক্ত গ্যাস দূরীভূত হবে। এটি গ্যাস দূর করার পাশাপাশি আপনার হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করবে।
- জিরা: জিরাতে এসেন্সিয়াল অয়েল রয়েছে যা আমাদর স্যালিভারি গ্লান্ডকে স্টিমুলেট করে হজমে সাহায্য করে। এক টেবিল চামচ গোটা জিরা ২ কাপ গরম পানিতে ১০-১৫ মিনিট ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে নিন। খাবার খাওয়ার ৩০-৪০ মিনিট পর পানিটুকু পান করলে গ্যাস থেকে রক্ষা পাবে।
►► উচ্চ মাধ্যমিক: ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
শেষ কথা
এখনই ব্যবস্থা না নিলে পেটের অস্বস্তি আপনার জীবনকে ব্যাহত করতে পারে। এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক হওয়ায় এতে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। ফলে আপনি এ উপকরণগুলো নির্দিধায় গ্রহণ করতে পারেন।
তবে আপনার গ্যাস্ট্রিকের মাত্রা খুব বেশি হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একজন চিকিৎসকের সাথে সাক্ষাত করুন এবং চিকিৎসা শুরু করুন। এতে করে তাড়াতাড়ি আপনি আরও ভাল বোধ করতে পারবেন এবং ভালো মানের জীবন উপভোগ করতে পারবেন।
Photo by Freepik