বর্তমানে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মহামারি আকারে ছড়াচ্ছে এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যে অনেক লোক মারাও গেছে। ডেঙ্গু হলে যে সমস্যার জন্য সবচেয়ে বেশি রোগী মারা যায় তা হলো রক্তে দ্রুত প্লাটিলেট কমে যাওয়া।
একজন সুস্থ মানুষের প্রতি প্রতি ১০০ মিলিমিটার রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা এক লাখ পঞ্চাশ হাজার থেকে চার লাখ থাকা উচিত। ডেঙ্গুর কারণে এই প্লাটিলেটের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যায় ও দেহে রক্তক্ষরণ সহ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দেয়।
এই সংখ্যা যদি ২০ হাজারের নীচে নেমে যায় তাহলে কোনো প্রকার আঘাত না পেলেও দেহে রক্তক্ষরণ হতে পারে। চলুন ডেঙ্গু জ্বর হলে এই প্রয়োজনীয় রক্তের প্লাটিলেট বাড়াতে বা স্বাভাবিক রাখতে যেসব খাবারদাবার খেতে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিই।
আমলকি
আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। তাই যদি ডেঙ্গু রোগীরা নিয়মিত আমলকি খান তাহলে তাদের রক্তের প্লাটিলেট ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা সহ দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
ভারতের ফর্টিস-এসকর্টস হাসাপাতালের পুষ্টিবিদ রূপালি দত্ত বলেন, ভিটামিন সি প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের বিভিন্ন ক্ষতিকর মুক্ত মৌলগুলোর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
কাঁচা আমলকি শরীরের বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ধীর করে ত্বক, চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আমলকী থেকে সবচেয়ে কার্যকর উপকারিতা পেতে হলে জুস করে খাওয়া ভালো।
মিষ্টি কুমড়া ও বীজ
মিষ্টি কুমড়ায় রয়েছে রক্তে প্লাটিলেট তৈরির উপাদান ভিটামিন ‘এ’। নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খেলে রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ বাড়ে। এছাড়া মিষ্টি কুমড়ার বীজেও রয়েছে প্লাটিলেট বৃদ্ধিকারী উপাদান। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার কারণে রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে গেলে তাঁকে নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া ও মিষ্টি কুমড়ার বীজ খেতে দিন।
পেঁপে ও পেঁপের পাতা
মালয়েশিয়ার গবেষণা সংস্থ্যা এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজির করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর রক্তে কমে যাওয়া প্লাটিলেটের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধিতে পেঁপে পাতার রসে সাহায্য করে। এছাড়া পাকা পেঁপের জুসও রক্তের প্লাটিলেটের পরিমাণ খুব দ্রুত বাড়াতে পারে।
তাই বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগিকে প্রতিদিন তাজা পেঁপে পাতা বেটে রস করে এক চামচ করে দুবেলা খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়াও রোগীকে পাকা পেঁপের জুসও খেতে দিতে পারেন। যা রোগীর রক্তের প্লাটিলেটের পরিমাণ বৃদ্ধি করবে।
লেবুর রস
আমলকির মত লেবুর রসেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’। যা রক্তের প্লাটিলেটের পরিমাণ বাড়াতে খুবই সহায়ক। এছাড়া এতে থাকা ভিটামিন ‘সি’ রক্তে প্লাটিলেট ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধেও ব্যাপক ভুমিকা পালন করে।
ডেঙ্গু রোগীকে সকালে খালি পেটে এক গ্লাস লেবুর রস পান করতে দিন। এরপর ১৫ থেকে ৩০ মিনিট পরে সকালের নাস্তা দিন। এর ফলে শরীর অধিক পরিমাণে পুষ্টি শোষণ করতে সক্ষম হবে। তবে শুধু রসই নয়, ডেঙ্গু রোগীকে প্রচুর লেবু শরবতও খাওয়ানো উচিত।
পানি ও তরল খাবার
বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের দৈনিক কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করানোর পরামর্শ দেন। তবে জ্বরের কারণে রোগীর শুধু পানি পানের ইচ্ছে নাও করতে পারে। তাই দেহে পানির চাহিদা পূরণে রোগীকে বাড়ীতে বানানো ফলের জুস ও ডাবের পানি পান করতে দেয়া যেতে পারে। বিভিন্ন ফলের রসে ভিটামিন সি রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
রোগীকে এসময় বিশেষ করে কমলা, মাল্টা, লেবু, পেয়ারা, স্ট্রবেরি, পেঁপে ইত্যাদির জুস ইত্যাদি খেতে দিন। এসব ফলের জুস রোগীর মুখে রুচি বাড়াতেও সাহায্য করবে। ডাবের পানিতে খনিজ বা ইলেট্রোলাইটস থাকে বলে ডেঙ্গু জ্বরে এটি খুবই উপকারী।
শেষ কথা
বর্ষায় চারিদিকে পানি জমে থাকার কারণে ডেঙ্গু রোগ বেশ ছড়ায়। বিশেষ করে ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর বেশি হচ্ছে। আর এ রোগে আক্রান্ত রোগীর রক্তে বেশির ভাগ সময় প্লাটিলেটের সংখ্যা দ্রুত কমে যায়। তাই রোগীর রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ বাড়ায় এমন খাবার দাবারের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে।
শুধু ডেঙ্গু জ্বরই না, অন্যান্য ভাইরাস জ্বরের কারণেও প্লাটিলেট কমে যেতে পারে। তাই ডেঙ্গুর লক্ষণসমূহ দেখা দেওয়া মাত্রই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হোন। প্রয়োজনে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।