কোনো পত্রিকায় দুর্নীতির সংবাদ প্রচার হলেই ওই পত্রিকা হাউজে ফোন করে রিপোর্টারের নাম ও ফোন নম্বরটি নিতো তারা। এরপর যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির নিউজ হয়েছে দুদকের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সেই ব্যক্তিকে ফোন করে বিষয়টি দুদক তদন্ত করছে বলে জানানো হতো। তারা চাইলে বিষয়টি রফাদফা করতে পারবেন এমন আশ্বাস দিয়ে ওই ব্যক্তিকে দেখা করতে বলতো। বিকাশ নাম্বারে টাকা পাঠালে তদন্ত রিপোর্ট হালকা করে দেওয়ারও আশ্বাস দিতো। আবার কখনো টিভির রিপোর্টার পরিচয় দিয়ে কারও অসুস্থতার কথা বলে চিকিৎসা সহায়তা চেয়ে টাকা নিতো। এভাবে রিয়াজ ও ফিরোজ খান নামে দুজন বিভিন্নজনের সঙ্গে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
বিষয়টি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ এলে সংস্থাটি একটি মামলা করে। সেই মামলায় গতরাতে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর তাদের থেকে প্রতারণার এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটি।
গ্রেফতারকৃতরা হলে- রিয়াজ (১৮), ফিরোজ খান (৫২) এবং হাসান মুন্না (২৮)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১১টি মোবাইল ফোন, ২৯টি সিম কার্ড, বিভিন্ন পত্রিকার রিপোর্টারের তিনটি আইডি কার্ড, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও মহাপরিচালক প্রশাসন স্বাক্ষরিত সহকারী পরিচালক সিদ্দিকুর রহমানের নকল দুটি আইডি কার্ড, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তাদের নামে বানানো ৫০টি ভিজিটিং কার্ড এবং বিভিন্ন সংবাদপত্রের রিপোর্টারদের ১২টি ভিজিটিং কার্ড উদ্ধার করা হয়।
সোমবার দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, গ্রেফতার ফিরোজ খান একজন প্রতারক। তিনি বিভিন্ন সময় প্রতারণা করে প্রতারণার নানা বুদ্ধি করেন। প্রায় ১২ বছর ধরে ফিরোজ খান প্রতারণা করে আসছিলেন। তার সঙ্গে রিয়াজের সম্পর্ক শালা দুলাভাই। আর মুন্না হলেন রিয়াজের সম্বন্ধী। রিয়াজ গত তিন বছর ধরে এমন কাজ করে আসছিলেন। তারা তিনজন মিলে প্রতারণা করতেন।
তাদের প্রতারণার ধরন ও কৌশল সম্পর্কে মশিউর রহমান বলেন, কোনো পত্রিকায় দুর্নীতির নিউজ হলেই তারা সেই ব্যক্তির ফোন নম্বর সংগ্রহ করতো। পরে দুদকের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ফোন দিতো। বিষয়টি তদন্ত করে ‘দুর্নীতিবাজ’ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয় বলে তাকে সার্টিফিকেট দেওয়ার আশ্বাস দিতো। এজন্য টাকা দাবি করতো। অনেকের কাছে প্রতারণা করে চক্রটি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকে দুদকে খোঁজ নিয়ে দেখেন তাদের ব্যাপারে কেউ ফোনই করেনি। যে নামে তাদের কল করা হয়েছে সেই নামে কেউ নেই। তখন তারা প্রতারণার শিকার হওয়ার বিষয়ে বুঝতে পারেন। এমন ঘটনায় বেশ কিছু ভুক্তভোগী রমনা থানায় অভিযোগ করেন। তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করতে নেমে এই চক্রের সন্ধান পায় ডিবি। এছাড়া অনেকদিন ধরে কিছু লোক দুদকের সহকারী পরিচালক পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করছে বলে দুদক কর্মকর্তারা অবগত হন। এরপর দুদকের সহকারী পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান রুবেল বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
ডিবি জানায়, এছাড়াও গ্রেফতারকৃতরা কখনও এনটিভির সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার, কখনও এসটিভির সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টারসহ একাধিক টিভি ও প্রিন্ট মিডিয়ার সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার পরিচয় দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা/উপজেলা চেয়ারম্যান/ওয়ার্ড কমিশনারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি সম্পর্কে খোঁজ নেন। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কিছু পেলে নিউজ করবে না মর্মে টাকা দাবি করে বিকাশের মাধ্যমে টাকা নিতো। তাদের বিরুদ্ধে এর আগেও দুদকসহ বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার পরিচয়ে চাঁদাবাজির একাধিক মামলা আছে।