পুলিশ যখন সত্য-মিথ্যা নিয়ে বিপাকে পড়ে

মেয়ে আর মেয়ের আন্টি এসেছেন! লাজুক(!) মেয়ের পক্ষে আন্টির অভিযোগ, মেয়ে ক্লাস এইটে একটা প্রেম করেছিল, এখন সে অনার্স পড়ে। সম্প্রতি মেয়ের বিয়ে হয়েছে সরকারি চাকরি করা এক ছেলের সাথে, অনেক দূরে তার পোস্টিং। সেই এইটের প্রেমিক এখন মেয়ের স্বামীকে কি সব ছবি পাঠাচ্ছে! জামাই বাবার মন ঘুরে গেছে মেয়ের দিক থেকে; স্যার, প্লিজ জামাই বাবার মনটা একটু ঘুরায়ে দেন আর সংসারটা ঠিক করে দেন!! এই মন ঠিক করার বায়না শুনে রাস্তায় বের হলাম যে চটপট কিছু করোনা তাড়িয়ে আসি! রাস্তায় একটা উপজেলা বাজারের চেকপোস্ট এ অফিসার ইন চার্জ সহ দাঁড়িয়েছি। পাশে ডিউটিরত সার্জেন্ট এক মোটর সাইকেল আরোহী থামিয়ে পড়েছে বিপাকে! খুব টেনশনের সাথে আমার কাছে এসে বললো, স্যার, এক মন্ত্রী মহোদয় ফোন দিয়েছেন, এই ছেলের হোন্ডা ছেড়ে দেয়ার জন্য; মন্ত্রী মহোদয়ের আগে আবার তার শালাও ফোন দিয়েছিল। আমার সেই ভি আই পি বাইকারকে দেখতে ইচ্ছে হলো!

তাকে সামনে আনা হলো। হুমায়ুন আহমেদের একটা নাটক আছে, “মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম। “সেই নাটকের দু একটা ডায়ালগ মনে পড়ায়, হাসি হাসি মুখে বললাম, বাটপারি কতদিন ধরে করিস? বল, কাকে মন্ত্রী বানিয়ে ফোন করেছিস?? ধরা খাবে বুঝতে পারে নি! ফোন করে মন্ত্রীর মত ভাবসাব নিয়ে কথা বলা বাটপারের লোকেশনে বড় গড়বড়! অবশ্য কথিত মন্ত্রীর লোকেশন নেয়ার আগেই সে তদবিরকারী বাইকার স্বীকার করলো, মন্ত্রী নয়, সে তার মামা শ্বশুর, চুয়াডাঙ্গায় হালকা পাতলা রাজনীতি করে! আরেকটু ধমক দিলে এবার স্বীকারোক্তি বদলে বললো, ওর চাচাত ভাই! বললাম ওর নাম কী? বলে, মাসুদ!! নাহ, এভাবে হয় না, এরা ভালো হবে না! পাশেই দেখি ১১-১২ বছরের ছেলেকে ইজিবাইক সহ থামানো হয়েছে।


জিজ্ঞাসা করে জানা গেল, একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবার ৩ দিন ধরে জ্বর চলে! এতকিছুর পর আর কাউকে-ই বিশ্বাস হচ্ছিল না। তাই, ওর বাবাকেও ফোন দেয়া হলো। জ্বরের কথা সত্য, তবে তার বাড়ি ৮-১০ কিমি দূরে, সেখানেই গাড়ি চালানোর কথা ছিল ছেলের। কিন্তু বাড়তি আয়ের আশায় সে উপজেলা সদরে এসে পুলিশের সামনে পড়েছে। একে তো সে চালক না বলে দূর্ঘটনায় পতিত হতে পারে; আবার এখন ফেরার সময় ফাঁকা রাস্তায় এই বাচ্চার ইজিবাইক ছিনতাই হলে তা হবে পুলিশের আরো মাথা ব্যাথার পারে; আবার এখন ফেরার সময় ফাঁকা রাস্তায় এই বাচ্চার ইজিবাইক ছিনতাই হলে তা হবেব্যাপার। এই সব ব্যাথা মাথায় না নিয়ে আপাতত তার অভাবী সংসারের ছোট্ট শিশু বাচ্চা আর জ্বরে পড়া ঋণগ্রস্ত বাবার জন্য মনে ব্যাথা হচ্ছিলো!

হরহামেশা মানুষের এসব বায়না কখনো প্রতারণা আবার কখনো বা দুঃখের কথা শুনলে কখনো কখনো মনে হয়, পুলিশকে ট্রেনিং না দিয়ে ম্যাজিক শেখানো বেশি দরকার; কখনো ভাবি হাজী মুহম্মদ মুহসিন হতাম বা এক গোছা টাকা নিয়ে বের হতে পারতাম! ধমক দিয়ে বাসায় যাইতে বলার আগে অন্তত ভ্যানওয়ালাদের হাতে দুইশো করে টাকা দিলে টাকার গোছার কি আর ক্ষতি হতো!! প্রয়োজনে মানিব্যাগ হাতিয়ে দেখি টাকার বদলে মানুষের কার্ডের গোছা; নীলক্ষেতের মোড়ে বানানো সব পরিচয় পত্রের গোছা। পুলিশ ভেবে কত্ত শত মানুষ পরিচয় দিয়ে গেছে; অথচ সবসময় মানুষ হতে চেয়েছি মনে হয়!! ছবিতে কথোপকথন- মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে কথা বলা আমি, জ্বরাক্রান্ত বাবার সাথে কথা বলা ক্ষুধার্ত ছেলে আর আমার সাথে আছেন সেই ভি আই পি মামা শ্বশুর এর বাইকার ভাগ্নে! মোঃ মোহাইমিনুল ইসলাম অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।

Check Also

অমিমাংসিত মেরিলিন মনরো

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:  টেলিফোনে হাত রাখা অচেতন শরীরটি পরে আছে বিছানায়, পাশেই গড়াগড়ি খাচ্ছে শূন্য ওষুধের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *