মোঃ বিলায়েত হোসেন বাংলাদেশ পুলিশের ডিবি (উত্তর) ঢাকায় সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত। বাবা মো.আলতাফ মোল্যা সাবেক শিক্ষক। মা খালেদা বেগম গৃহিণী। বিলায়েত হোসেনের জন্ম ১৯৯২ সালের ১৪ই মে ফরিদপুর জেলায়। তিনি কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক ও এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।
সম্প্রতি তার সফলতা ও অসাধারণ স্বপ্নের কথা শেয়ার করেছেন দৈনিক বাংলার ধূমকেতুর সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন লেখক ও সাংবাদিক লুৎফর রহমান শাওন—
বাংলার ধূমকেতু: আপনার ছোটবেলা কেমন কেটেছে?
মো. বিলায়েত হোসেন: গ্রামাঞ্চলে আট-দশটা সাধারণ ছেলেদের মতোই কেটেছে। স্কুলে যাওয়া,দোকান-ব্যবসা করা,বাগান করা,মাছ ধরা,তাবলীগ করা,স্কুলে নেতৃত্ব দেওয়া,সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা ইত্যাদি। খেলাধুলায় অনেক ভালো ছিলাম তাই প্রচুর খেলাধুলা করতাম, বিশেষ করে ক্রিকেট।কম্পিউটার ও ড্রাইভিংয়ে আমার অভিজ্ঞতা রয়েছে।তরুন বয়সে আমার কিছু বাজে অভ্যাস ছিলো যেমনঃ কোল্ড ড্রিংকস,ভাজাপোড়া বেশি খেতাম;খুব চঞ্চল ছিলাম।
বাংলার ধূমকেতুঃপড়াশোনা করতে গিয়ে কোন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা?
মোঃ বিলায়েত হোসেন: পড়াশোনা স্বাভাবিকভাবেই চলেছে। তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। ক্লাসে প্রথম হওয়ায় শিক্ষকদের কাছ থেকে ফি-বেতনে বিশেষ সুবিধা পেয়ে লেখাপড়া করেছি;বাবাকেও কাজে সাহায্য করেছি। এখনকার মতো প্রতিবছর নতুন বই পেতাম না,পাঠাগার থেকে বই কিনে পড়তাম।প্রতি ক্লাসেই ফার্স্ট হওয়ার গৌরব অর্জন করেছি।তখন আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ ছিলো না তাই হারিকেনের আলোতে পড়তাম।কখনো কখনো চাঁদের আলো বা জোনাকি পোকার আলোতে পড়তাম।চোখে ঘুম আসলে বাঁশি বাজাতে-বাজাতে খোলা হাওয়ায় হেঁটে আসতাম।
বাংলার ধূমকেতুঃ
পুলিশে চাকরির স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?মোঃ বিলায়েত হোসেন: আমার আপন বড় ভাই মোঃ এনায়েত হোসেন জেলা বিশেষ শাখার একজন পুলিশ অফিসার;
বড় ভাইয়ের পোশাক আর আইনের বই দেখেই আমার মাথায় পুলিশ হওয়ার ভূত চেপে বসে।এছাড়াও আমাদের গ্রামে অনেকেই পুলিশের চাকরি করে।দেখতাম,যখন তারা ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসতো, তখন নানা সমস্যা সমাধানের জন্য এলাকার মানুষের ভিড় লেগেই থাকতো।
বাংলার ধূমকেতুঃ
আপনি কিভাবে পড়াশোনা করতেন? আমি ক্লাসে খুব মনোযোগ দিতাম;প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিনই শেষ করতাম।অংক অনেক ভালো লাগতো তাই কর্মাসে পড়েছি।প্রতিদিন ক্লাসে নোট করতাম;কোন পড়া না বুঝলে সেদিন আমার ঘুমই আসতো না;কারো না কারো বাসায় গিয়ে বুঝে আসতাম;শিক্ষকদের অনেক প্রশ্ন করতাম।
গ্রামাঞ্চল থেকে কলেজে ভর্তি হয়ে অনেকের মতো আমিও নিজের অর্থ সংস্থানের চেষ্টা করি। প্রথমে টিউশনি করতাম, পরে কিন্ডারগার্টেন স্কুলও কোচিংয়ের শিক্ষকও ছিলাম।
প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়েই রাস্তা দিয়ে দৌড়াতাম।
সবাইকে অনেক হেল্প করতাম তাই সকলের প্রিয়পাত্র ছিলাম।দৈনিক ইংরেজি মুভি দেখতাম ও ইংলিশ পত্রিকা পড়তাম। ফলে,ইংরেজি নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয়নি। লেখালেখির একটা অভ্যাস ছিলো এবং বিভিন্ন চাকরির বই পড়তাম।এসআই চাকরির আগে সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগ গাইড কিনে সারাদিন-রাত পড়তাম।গভীররাত পর্যন্ত টেবিলে পড়ে ঐ জায়গায়ই ঘুমিয়ে যেতাম।
বাংলার ধূমকেতু:হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষকে নিয়ে আপনার স্বপ্ন কি?
মোঃ বিলায়েত হোসেন:
আমি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে যেতে চাই।আমি মনে করি,আজকের শিশুরা আগামীদিনে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।অবসরে যাওয়ার পরে প্রত্যেকটি পথশিশু ও অসহায় মানুষের বিশেষ হোম,বিশেষ স্কুল,বিশেষ হাসপাতাল নির্মান করতে চাই।
সবার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে দেশে কেউ অপরাধ করবে বলে আমার মনে হয় না।
বাংলার ধূমকেতু:
পুলিশের চাকরিতে কেমন লাগছে?হতাশায় আচ্ছন্ন বেকারদের সম্পর্কে কি বলবেন?
মোঃ বিলায়েত হোসেন:
বাংলাদেশে সরকারী চাকুরীতে বর্তমানে ৩৮০৯৫৫ টি পদ খালি। সবাই স্বপ্ন পূরনের পথে এগিয়ে যান।
(সূত্রঃ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়)
এছাড়া বেসরকারি চাকুরিতেও অনেক পদ খালি রয়েছে।কঠোর পরিশ্রম,ধৈর্য্য,সততার কোন বিকল্প নেই।আপনারা কর্মমুখী শিক্ষায় নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তুলুন এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে চান।ইনশাআল্লাহ, তিনি আপনাদের কথা শুনবেন।
আপনারা জানেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সর্বপ্রথম রাজারবাগে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে পুলিশ। তারই ধারাবাহিকতায় ১৫ই আগস্টে ইন্সপেক্টর সিদ্দিকুর রহমান;হোলি আর্টিসানে ওসি সালাউদ্দিনও এসি রবিউল স্যার নিহত হন।করোনায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে পুলিশ।
পুলিশ একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা;আমার চ্যালেঞ্জ নিতে ভালো লাগে;জনগণের পাশে বন্ধুর মতো মেশা যায়।আমরা যখন পবিত্র দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পরিবারের সাথে ঈদ করতে ছুটি পাই না;বিনোদনের সময় পাইনা;তখন আপনারা গালি দিলে অনেক বেশি কষ্ট হয়। সরকার যখন লকডাউন ঘোষণা করে, সেটি কার্যকর করতে পদক্ষেপ নিই আমরা;আমাদের বেশিরভাগ সময় কাটাতে হয় চোর-ডাকাত-খুনীর সাথে। করোনায় বাহিনীর পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছি।
আসামি ধরতে একজেলা থেকে অন্যজেলায় ছুটাছুটি করি;বাসায় শুধু গোসল করি
বাকিটা সময় গাড়ীতেই কাটাই।অনেক ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার পরে যখন দেখি সাধারণ মানুষের মুখে এক চিলতে আনন্দের হাঁসি তখন সব ক্লান্তি কেটে যায়।
কাউকে উপকার করে ধন্যবাদ পেলে অনেক ভালো লাগে।
কাজ করে পুরুষ্কারস্বরূপ ৪ বার ঢাকা বিভাগের শ্রেষ্ঠ অফিসার হয়েছি;পেয়েছি পিপিএম(প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল)।এটা নিয়ে বের হয়েছে নিউজ;টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছে।
আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী বাবা-মাকে বলে আপনার ছেলেকেতো টিভিতে দেখলাম। সবাই আমাকে নিয়ে গর্ব করে।
যদিও পুলিশের চাকুরিতে ঝুঁকি আছে তবুও এটি রয়েল জব।সবাই অনেক সম্মান করে;এটিই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।তরুনদের বলবো,
এ চাকুরিতে আসুন; এ চাকুরির মাধ্যমে ইন্টারপোল ও জাতিসংঘে কাজ করে নিজের দেশকে তুলে ধরুন।
পুলিশ সারারাত জেগে থাকে বলেই আপনারা শান্তিতে ঘুমাতে পারেন।
আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন; যাতে আমি আপনাদের আরো সেবা করতে পারি।