অমর একুশে বইমেলার ২০তম দিনে ৯৯টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২১টি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও ১৯টি উপন্যাস ও ১৫টি গল্পসহ বিভিন্ন বিষয়ের বই রয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বাংলা একাডেমি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। এদিন মেলা বেলা ৩টা থেকে শুরু হয়ে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত চলেছে।
২১টি কবিতার বই ছাড়াও এদিন প্রকাশিত অন্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে— ১৫টি গল্প, ১৯টি উপন্যাস, দুইটি প্রবন্ধ, একটি গবেষণা, একটি ছড়া, দুইটি শিশুসাহিত্য, ১০টি জীবনী, একটি করে রচনাবলী, মুক্তিযুদ্ধ ও নাটকের বই। এছাড়া বিজ্ঞান বিষয়ক তিনটি, ভ্রমণ দুইটি, একটি ইতিহাস, রাজনীতি বিষয়ক দুইটি, সায়েন্স ফিকশন দুইটি, অনুবাদ দুইটি, একটি করে ধর্মীয় ও রম্য/ধাঁধা এবং অন্যান্য বিষয়ক ১১টি বই।
এদিকে বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ: জামাল নজরুল ইসলাম শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজ্ঞানবক্তা আসিফ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সুব্রত বড়ুয়া ও আরশাদ মোমেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান।
প্রাবন্ধিক তার বক্তব্যে বলেন, অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গাণিতিক, পদার্থবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং বিশ্ববরেণ্য কসমোলজিস্ট। আন্তর্জাতিক মহলে তিনি জে এন ইসলাম হিসেবে পরিচিত। পঞ্চাশ বছরের বৈজ্ঞানিক জীবনে তিনি ধ্রুপদি সব বিজ্ঞান-ধারার ওপর কাজ করে গেছেন। তার মধ্যে রয়েছে কোয়ান্টাম ক্ষেত্রতত্ত্ব, আপেক্ষিকতার সূত্র, নক্ষত্রের গঠন ও মহাবিশ্ব তত্ত্ব। তবে তার গবেষণার প্রধান বিষয় ছিল আপেক্ষিকতাবাদ ও মহাবিশ্বতত্ত্ব। তার লিখিত দ্য আলটিমেট ফেট অব দ্য ইউনিভার্স গ্রন্থটি ফরাসি, ইতালিয়, জার্মান, পর্তুগিজসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। পৃথিবীর বড়ো বড়ো বিশ্ববিদ্যালয়ে বইটি পাঠ্যবই হিসেবে পড়ানো হয়।
আলোচকরা বলেন, অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলামের বিজ্ঞানচিন্তা ও গবেষণার পরিসর ছিল অনেক বিস্তৃত। তিনি আন্তর্জাতিক বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমন্ডলে বিশিষ্ট অবস্থান অধিকার করেছিলেন। তিনি কেবল বড় বিজ্ঞানীই ছিলেন না, একজন সংস্কৃতিবান ও দেশপ্রেমিক মানুষও ছিলেন। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা থেকে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা ছেড়ে বাংলাদেশে চলে আসেন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে যোগদান করেন। গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণা তাকে কখনও সমাজ ও মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করেনি।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম বড় বিজ্ঞানী হয়েও ছিলেন নিরহংকারী, অত্যন্ত আন্তরিক, সদাশয় ও সরল মনের অধিকারী একজন মানুষ। তিনি বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে জামাল নজরুল ইসলামের বিজ্ঞানচেতনা দ্বারা উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি আতাহার খান, কথাসাহিত্যিক মোস্তফা কামাল, গবেষক চৌধুরী শহীদ কাদের এবং লেখক ও পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিল।এছাড়া রিকশাচিত্র প্রদর্শন বই ও সংলাপ মঞ্চের আয়োজন মঞ্চে বিকেল ৫টায় ড. হাসান কবীর রচিত ও বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের কৃষি বই নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি রহিমা আখতার কল্পনা, বিপ্লব মুস্তাফিজ, প্রত্যয় জসীম, ফারুক আহমেদ, মনিরুজ্জামান মিন্টু, মনিরুজ্জামান রোহান এবং কাজী আনিসুল হক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ইকবাল খোরশেদ, দেওয়ান সাইদুল হাসান, অনন্যা রেজওয়ানা, মীর মাসরুর জামান রনি, সংগীতা চৌধুরী, জিনিয়া ফেরদৌস রুনা এবং চন্দ্রিমা দেয়া। এছাড়া মনিরুল ইসলামের পরিচালনায় দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে ‘স্বরব্যঞ্জন বাচনিক উৎকর্ষ ও চর্চা কেন্দ্র’।