বরিশালে মসজিদ,সরকারী রাস্তা ও বিক্রিত সম্পত্তি মর্গেজ রেখে বি ডি বি এল ব্যাংকের লোন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মসজিদ, সরকারী রাস্তা ও বিক্রিত সম্পত্তি মর্গেজ রেখে লোন প্রদানের অভিযোগ পাওয়া গেছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড’র বিরুদ্ধে। অভিযোগের তীর ব্যাংকটির বরিশাল ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ও লোন অফিসারের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে। বর্তমান ম্যানেজারের দাবী তিনি লোন প্রদান করেনি।

লোন প্রদান করেছেন সাবেক ম্যানেজার ও লোন অফিসাগণ। তিনি শুধু ওই লোনের তদারকি করছেন। অনিয়মের মাধ্যমে লোন প্রদানের বিষয় জানতে চাইলে বর্তমান ম্যানেজার বলেন, এবিষয় কর্তৃপক্ষকে জানানো তার কাজ না।



তিনি ম্যানেজারের দায়িত্বে আছেন এটাই তার কাজ। কোথায় কেউ অনিয়ম-দুর্নীতি করলে সে বিষয় কোন পদক্ষেপ নেওয়ার বা কর্তৃপক্ষকে জানানো তার দায়িত্বের মধ্যে পরে না। তবে ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, বাংলাদেশের যেকোন ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে বর্তমান ম্যানেজার তার উপরস্থ্য অফিসার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিকে অবগত করতে বাধ্য। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

ঘটনাসূত্রে জানা যায়, বরিশাল সদর উপজেলার ২নং কাশিপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড বিল্ববাড়ির বাসিন্দা কাবির আহম্মদ পোষা ২০১৩ সালের দিকে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা লোন গ্রহণ করেন উক্ত ব্যাংক থেকে। লোন প্রদানের নীতিমালা না মেনেই কবির আহমেদ পোষাকে লোন প্রদান করেন ওই সময়কার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ও লোন অফিসার।

অনুসন্ধান করে দেখা যায় কবির আহম্মেদ পোষা লোন গ্রহণের সময় যে সকল জমির কাগজপত্র ব্যাংকে মর্গেজ রেখে লোন নিয়েছেন, তার ভিতর অধিকাংশ জমি মসজিদের নামে ওয়কফ, কিছু পূর্বেই বিক্রি হয়েছে এবং কিছু জমিতে সরকারী রাস্তা বিদ্যমান।

এমনকি লোন গ্রহণের পরে মর্গেজকৃত সম্পত্তির অবশিষ্ট অংশ থেকেও বেশ কিছু সম্পত্তি বিক্রি করেছেন কবির আহম্মেদ পোষা। অনুসন্ধানে যার তথ্য প্রমাণ আসে সময়ের বার্তা’র কাছে। বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ৮ নং বিল্বাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মৃত কাসেম আলী ফকিরের ৪ ছেলে। যথাক্রমে শাহ জাহান ফকির, ফরিদ উদ্দিন ফকির, কবির আহমেদ পোষা ও ছোট ভাই মামুন ফকির মোট ৪ ভাই সমান ভাগে ১৯৭৫ সালের ৯ মে ২একর ১৩ শতাংশ জমি ক্রয় করেন জুরান চন্দ্র মূখোপাধ্যয় এবং গিরি দেবীর কাছে থেকে।

যার দলিল নং-৮২০৮। ৪ ভাই সমানভাবে ভাগ করে জনপ্রতি পায় ৫৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। ৫৩ দশমিক ২৫ শতাংশ সম্পত্তির ভিতর থেকে সরকারী রাস্তায় ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ, ১৯৯৩ সালে ১৯ মে ৫ শতাংশ সম্পত্তি কাসেমিয়া জামে মসজিদ ও ফোরকানিয়া মাদ্রাসার নামে ওয়াকফ, ২০০৩/৪ সালে ইনা বিক্স এর মালিক ইউনুস এর কাছে বিক্রি করেন ৪ শতাংশ। বানারীপাড়ার বাসীন্দা কবির নামক আরেক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন আরো ৫ শতাংশ।

কবির আহমেদ পোষার প্রাপ্ত ৫৩ দশমিক ২৫ শতাংশ সম্পত্তি থেকে মোট ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ বাদ গেলে বাকি অংশ অবশিষ্ট থাকে ৩২ শতাংশ। অথচ ব্যাংকে দেখানো হয়েছে ৪৪ শতাংশ জমির মালিক কবির আহমেদ পোষা। প্রতারণা করে ব্যাংকের লোন অফিসার এবং ব্যাংক ম্যানেজারের যোগসাজে উক্ত জমি মর্গেজ রেখে মেসার্স মেমি এন্টারপ্রাইজ নামক একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নামে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা ২০১৩ সালের দিকে লোন প্রদান করা হয়েছে।



বিশেজ্ঞ আইনজীবি এ্যাড.বিপুল চন্দ্র রায় সময়ের বার্তাকে জানান, ওয়াকফ বা বিক্রিত সম্পত্তি মগের্জ রেখে লোন দেওয়া এবং ব্যাংকের কাছে তথ্য গোপন করে ব্যাংকে থেকে ঋণ আদান-প্রদান সম্পূর্ণ আইন বহিভূর্ত ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ্যাড. বিপুল চন্দ্র রায় সময়ের বার্তাকে আরো জানান, দেশের যেকোন ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করতে হলে প্রথমে প্রয়োজন ওই ব্যাংকের লিগাল এ্যাডভাইজারের ক্লিয়াররেন্স গ্রহণ করা।

পরবর্তিতে ব্যাংকের লোন অফিসার ও ব্যাংক ম্যানেজার সরজমিনে তদন্ত করে লোন পাওয়ার উপযুক্ত হলেই সে লোন পাবেন। স্থানীয়রা জানান, মেমি এন্টারপ্রাইজ নামে যে প্রতিষ্ঠানকে লোন দেওয়া হয়েছে উক্ত প্রতিষ্ঠানটির কোন বৈধ ভাড়া চুক্তিপত্র নেই। কারণ যে সম্পত্তির ওপরে দোকান নির্মিত তা পানি উন্নায়ন বোর্ডের সরকারী সম্পত্তি, যা তিনি বেআইনি ভাবে দখল করে রেখেছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষ জানান, তারা কাবির আহমেদ পোষার নামে কোন জমি লিজ দেননি । এদিকে ২০১২ সালের  ৮ মে বানারীপাড়া উপজেলার বাসীন্দা কবির নামে এক ব্যক্তি কবির আহমেদ পোষার সাথে ৫ শতাংশ জমি বায়না চুক্তি করেন। পরবর্তিতে দলিল না দিয়ে বায়নার টাকা আত্মসাত করার অপচেষ্টা চালায়, একপর্যায় বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করা হলে ২০১৪ সালের ৩০ জুন দলিল দিতে বাধ্য হন। কবির সময়ের বার্তাকে জানান, লোন গ্রহণ করে উক্ত সম্পত্তি বিক্রি করে তার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। তিনি আইনি পদক্ষেপ নেবেন।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

Check Also

প্রধান বিচারপতির কাছে নাজির কামরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ

প্রধান বিচারপতির কাছে নাজির কামরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ

প্রধান বিচারপতির কাছে নাজির কামরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ।।  মিথ্যা মামলা দিয়ে অর্থ বাণিজ্যপ্রভাব খাটিয়ে রায়ের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *