বরিশাল অফিস॥ ক্ষমতাসীন দলের দাপট দেখিয়ে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে মোট অংকের চাদাঁ তোলা, জমি দখল এবং সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে বিভিন্ন মানুষের উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছে বরিশাল নগরীর ১৫নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারন সম্পাদক নকীবুর রহমান নকীবের বিরুদ্ধে। নকীবের এসকল অপকর্মে অতিষ্ট হয়ে তার বিরুদ্ধে বিসিসি মেয়র বারাবর লিখিত গনঅনাস্থা দিয়েছেন ১৫নং ওয়ার্ডের আমিরকুটির এলাকার বাসিন্দারা।
এদিকে দলের নাম ভাঙিয়ে নকীবের এমন অপকর্মে ওই এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সরেজমিন সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকায় পুরনো একটি ভবনের নিচে সামান্য চা বিক্রেতা নকিব এখন ক্ষমতাসীন দলের দাপটে চাঁদাবজি, ভূমিদখল ও সাধারন মানুষের উপরে হামলাসহ দীর্ঘদিন যাবত নানান অপকর্ম চালিয়ে আসছে। বিগত দেড় যুগ আগে নগরীর ১৫নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারন সম্পাদক হয়ে অজ্ঞাত অর্থ বিত্তের মালিক হয়ে গড়ে তুলেন সন্ত্রাসী বাহিনী।
- আরো পড়ুন: গুগলে যুক্ত হচ্ছে সার্চ থেকে ফটো ডিলিট করার অপশন
- আরো পড়ুন: দুবাই থেকে কানাডায় সরাসরি ভিসা
- আরো পড়ুন: ২২ লাখের বেশি হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট বন্ধ হলো
আর এই সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে গত কয়েক বছর ধরে সন্ত্রাসী কায়দায় তান্ডব চালিয়ে আসছে এলাকার নিরীহ মানুষের উপর। তার এই তান্ডব থেকে রেহাই পাচ্ছে না বৃদ্ধ থেকে শুরু করে কলেজের শিক্ষার্থীও। সূত্র মতে, বিগত পাঁচ বছর আগে গৌরনদী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে গালাগালি করলে নকীবকে এক বছরের জন্য ভ্রাম্যমান আদলতের মাধ্যমে কারাদন্ড দেয়া হয়।
শুধু সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা নয়, তার হাত থেকে রেহাই পায়নি দলীয় নেতা-কর্মীও। নগরীর পলিটেকনিক এলাকার এক ভুক্তভোগী কাসেম বলেন, দীর্ঘদিন আমি নকীবের সাথে বিভিন্ন ব্যবসায়িক কাজ করতাম। কিন্তু তিনি আমার লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছে। নকীবের মেয়ের ফরম ফিলাপ ও তার কাঠের ব্যবসার জন্য টাকার প্রয়োজন হলে আমার মেয়ের দেড় ভরি কানের দুল তাকে দেই। কিন্তু আজ পর্যন্ত সে ফেরত দেয়নি।
এনিয়ে আমার মেয়ের জামাই অভিমান করে এখনো আমার সাথে কথা বলে না। তিনি ক্ষোভ নিয়ে আরো বলেন, নকীব আমার জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে। গত দুই বছর আগে পরশ সাগর পুকুরে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার আয়েজন করার কথা বলে আমার কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা ধার নেয়। আমি সুদের উপর টাকা এনে তাকে দেই। এখন সুদ সহ প্রায় তেরাশি হাজার টাকা হয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত সে পরিশোধ করেনি।
একই এলাকার অপর এক ভুক্তভোগী রাজু বলেন, আমার কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা ধার নিয়ে এখন পর্যন্ত পরিশোধ করেনি। শুধু তাই নয়, আমাদের পলিটেকনিক এলাকার চায়ের দোকানদার ফারুকের কাছ থেকে জোর করে এক লক্ষ টাকা নিয়েছে। ফারুক টাকা চাইতে গেলে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি দেয়া হয়। একই অভিযোগ করেন আশ্রাফ সড়কের বাসিন্দা মৃত কাশেম আলী সিকদারের ছেলে জুয়েল। তিনি বলেন, আমার বাবার কাছ থেকে মেয়রের কাজের কথা বলে বিভিন্ন সময় ইট, বালু ও সিমেন্ট নিয়েছে। বর্তমানে তার কাছে একাশি হাজার টাকা পাওনা রয়েছে।
- আরো পড়ুন: দুবাই থেকে নিউইয়র্ক যাওয়া ২৬ মিনিটে !
- আরো পড়ুন: দুবাই টুরিস্ট ভিসা প্রসেসিং লিংক সহ এ টু জেড
- আরো পড়ুন: K ভিসা আবেদনকারী
টাকা চাইতে গেলে নকীব বিভিন্ন টালবাহানা করে এবং বলে মেয়র সাদেক কাজের বিল আটকিয়ে রেখেছে, আমি টাকা কোথা থেকে দিব। এদিকে বটতলা এলাকার এক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যবসার কথা বলে নকীব আমার লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছে। আমি আইনের সহায়তা নিয়ে তাকে দুইবার জেলে পাঠিয়েছি। দলের দাপট দেখিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য গড়ে তুলেছেন নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। হামলার চালিয়েছে ওয়ার্ডের প্রতিটি মানুষ উপর। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, নকীব হাত থেকে রেহাই পায়নি তার পরিবারের সদস্যরাও।
এ বিষয়ে তার আপন ছোট ভাই মিজানুর রহমান তুফান বলেন, আমার বাড়ির কাজের সময় লেবারকে মারধর করে এবং আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালি করে কাজ বন্ধ করে দেয়। বিষয়টি এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের জানালে কেউ নকীবের ভয়ে এগিয়ে আসেনি। একই অভিযোগ করেন নকীবের মৃত বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব। তিনি বলেন, আমার বাবার মৃত্যুর পর নকীব চাচা অবৈধভাবে আমাদের জায়গা দখল করে নিয়েছে।
আমার বিল্ডিং এর পাশের দুই ফুট জায়গা দখল করে নিয়েছে এবং আমার বিল্ডিং এর ওয়াল দখল করে তার বিল্ডিং নির্মান করেছে। আমার বাবা না থাকায় তার এমন অত্যাচার আমরা মুখ বুঝে সহ্য করে যাচ্ছি। এদিকে সরেজমিন সূত্রে আরো জানা গেছে, নকীবের অত্যাচার থেকে বাদ পরেনি সাংবাদিক সমাজও। সাংবাদিক জুয়েল এর জমি অবৈধভবে দখল করে নেয় নকীব। পরে মেয়র বিষয়টি জানতে পারলে তার হস্তক্ষেপে জমি ফেরত পায় জুয়েল। একই সাথে সিটি মেয়র নকীবকে এধরনের অপকর্ম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। এর পরেও থেমে নেই নকীবের অপকর্ম।
এক পর্যায় নকীবের এ সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে রুখে দাঁড়ায় দৈনিক দেশ জনপদ পত্রিকার সম্পাদক এবং বরিশাল প্রকাশক ও সম্পাদক পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক মির্জা রিমন। নকীবের অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ২৪ অক্টোবর মির্জা রিমনের উপরে হামলা চালায় নকীব ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী।
এতে মির্জা রিমনের পরিবারের কয়েকজন সদস্য আহত হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় মির্জা রিমনের মামা মিজানুর রহমানকে চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত মিজানুর রহমানের বাম হাতের বাহুতে রড দিয়ে আঘাত করে নকীব। এতে তার হাতে মারাত্মক জখমের সৃষ্টি হয়। এই ঘটনায় মির্জা রিমন বাদী হয়ে নকীব সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে বরিশাল কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নুরুল ইসলাম বলেন, মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে মির্জা রিমনের পরিবারের উপরে হামলার ঘটনায় ওই এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ও নিন্দার ঝড় উঠেছে। এ বিষয়ে মির্জা রিমন বলেন, নকীব বিভিন্ন সময়ে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলেন। এমনকি পবিত্র হজ্ব নিয়েও বাজে মন্তব্য করেন। সম্প্রীতি নকীব আমার পরিবারের নামে বাজে মন্তব্য করায় আমি তাকে বাধা দেই। এতে তিনি আমার উপরে ক্ষিপ্ত হয়ে মারতে আসে। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে নকিব পালিয়ে যায়।
পরে ২৪ অক্টোবর মাতাল অবস্থায় নকীব ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী মিলে আমার পরিবারের উপরে হামলা করে। এতে আমার ছোট মামা মিজানুর রহমান চৌধুরী গুরুতর আহত হয়। আমি ঘটনার দিন বাদি হয়ে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় নকীবকে প্রধান আসামি করে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করি। হামলার ঘটনায় আহত মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, নকীব প্রায়ই আমার ভাগ্নে মির্জা রিমন ও তার পরিবারকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করে।
এমনকি এলাকাবাসী ও মাননীয় মেয়রকে নিয়েও বাজে মন্তব্য করতে দ্বিধাবোধ করে না। তাকে অনেকবার নিষেধ করা হলেও সে কর্নপাত করত না। গত ২৪ অক্টোবর নকীব আমার বোন ও ভাগ্নেকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করলে আমি প্রতিবাদ করি। এতে নকীব ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। আমরা এলাকাবাসি নকীবের নানান কু-কীর্তির বিরুদ্ধে মেয়রের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এছাড়াও নকীব শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের লামছড়িতে এক মাদ্রাসার নামে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে।
তিনি আরো বলেন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন থেকে প্লান পাশ করিয়ে দেবার কথা বলেও এক ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আত্মসাত করেছে। এলাকা থেকে দুই/তিনবার নির্বাচন করে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। আমির কুটির এলাকার অপর এক বাসিন্দা সামির ইসলাম বলেন, নকীব এই বয়সেও মেয়েদের নানান রকমের খারাপ কথা বলে। অনেক মেয়ে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করতে পেরে কান্না করতে করতে চলে যায়। কিছুদিন আগে এক বৃদ্ধা রিক্সা চালক তার গাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার অপরাধে তাকে রাস্তায় ফেলে ব্যাপক মারধর করেছে।
তার অত্যাচারে আমরা অতিষ্ট হয়ে উঠেছি। নকীবের বিষয়ে ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর লিয়াকত হোসেন লাবলু বলেন, মির্জা রিমন নকীবের বিরুদ্ধে আমার কাছে অভিযোগ জানিয়েছে। আমি নকীবের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ সিটি মেয়রের কাছে জানিয়েছি। এদিকে নকীবের বিরুদ্ধে মেয়র বরাবর গনঅনাস্থা’র ব্যাপারে জানতে চাইলে মহানগর আ’লীগের সভাপতি এ্যাড. একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ-খবর নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।