ব্রীজের কাজ শেষ না করেই বিল পরিশোধ! বরিশালে ব্রীজের কাজ শেষ না করেই বিল পরিশোধ! এম. লোকমান হোসাঈন ॥ কাজ শেষ না করেই প্রকল্প কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের যোগসাশে বিল পরিশোধের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করা হয়েছে বলে দাবী স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ এলাকাবাসীর। মাত্র দুই বছরের মাথায় পরিত্যক্ত পথে অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় ব্রীজ। কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
বরিশালে ব্রীজের কাজ শেষ না করেই বিল পরিশোধ!
এদিকে নিম্নমানের কাজের পাশাপাশী কাজ সম্পূর্ণ না করে অর্থ উত্তোলনের সাথে যারা জড়িত তাদের সকলের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে আইনগত যথাযত ব্যবস্থা নেয়া হবে এমনটাই জানালেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মহা পরিচালক মো: আতিকুল হক। স্থানীয়দের অভিযোগ সকল অনিয়মের পিছনে আছেন প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান।
- আরো পড়ুন: ছাত্রদলের বিতর্কিত সভাপতি মিঠুর বিরুদ্ধে তদন্ত!
- আরো পড়ুন: বরিশাল ছাত্রদলের সভাপতি মিঠুর যৌন কেল্কারী ফাঁস
- আরো পড়ুন: মেয়েকে দিয়ে দেহ ব্যবসা: মা-বাবা সহ গ্রেফতার-৩
তার যোগসাশেই বরিশাল সদর উপজেলার বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি বেড়েই চলছে। নানা অনিয়মের পরেও বহাল তবিয়তে আছেন এই কর্মকর্তা। বেশ কিছুদিন যাবত বরিশাল সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ব্রীজ নির্মাণ কাজের অবস্থা সম্পর্কে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, খুব বেহাল অবস্থায় রয়েছে ব্রীজগুলো। নিম্নমানের। রড দিয়ে নির্মাণ করা হয় ব্রীজগুলোকে। যার ফলে দুই বছরের মাথায় ব্রীজ ভাঙ্গা শুরু করছেন।
ইতোপূর্বে বরিশাল সদর উপজেলাধীন চরবাড়িয়া ইউনিয়ন এর ৯নং ওয়ার্ড দক্ষিন লামছরি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন খালের উপর নির্মাণাধীন ব্রীজ এর গাডারের একাংশ ফেটে আলাদা হয়ে গেছে। পরিত্যাক্ত অবস্থায় পরে আছে ব্রীজটি। ব্রীজের গাডার আলাদা হয়ে যাওয়া ওই ব্রীজ দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুন সময়ের বার্তাকে বলেন, গত বছর ব্রীজের কাজ সঠিকভাবে না করে ঠিকাদার কবির চলে যান।
ব্রীজ নির্মাণের ৮ মাস পরে এসে ব্রীজের দুই পাশে মাটির কাজ শেষ করেন। কাজ মান নিয়ে এই ইউপি সদস্য বলেন, এলাকার জনবসতি মানুষের জন্য একটি ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে গতবছর। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঠিক তদারকি না থাকায় কোন মতে ব্রীজটি নির্মাণ করে টাকা আত্মসাত করেন ঠিকাদার কবির। ভালোভাবে কাজ করার জন্য কবিরকে অনুরোধ করা হলে তা তিনি রাখেননি। কবিরের মন মতো কাজ করেই বিদায় নেন এই ঠিকাদার।
২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এর মাধ্যমে বরিশাল সদর উপজেলাধীন চরবাড়িয়া ইউনিয়ন এর ৯নং ওয়ার্ড দক্ষিণ লামছরি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন খালের উপর ৩৬ ফুট র্দীঘ একটি ব্রীজ ৩০ লাখ ৭০ হাজার ৪৮ হাজার টাকা ব্যয় নির্মাণ করা হয়েছে, প্রথমে শুধু ব্রীজ নির্মাণ করে দুই পাশে মাটির কাজ শেষ না করেই প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের যোগসাশে বিল উত্তোলন করে আত্মসাত করেন, মেসার্স রাতুল এন্টারপ্রাইজ এর মালিক কবির।
এবছরের প্রথম দিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চাপের মুখে মাটির কাজ শেষ করেন কবির। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্রীজ নির্মাণ কাজের নিয়ম হচ্ছে, ৬ ইঞ্চি পর পর ১২মিলি রড ব্যবহারের বিধান। উক্ত ব্রীজে অধিকাংশ স্থানে ব্যবহার করা হয়েছে ৭/৮ইঞ্চি পর পর ৬ মিলি রড। যার উত্তর-পশ্চিম পাশের একাংশ ভেঙ্গে যাওয়াতে ব্রীজের গাডারে এমনটাই দেখা যায়। ব্রীজের গাডার কাজেও করা হয়েছে বড় ধরনের অনিয়ম।
নিয়ম অনুযায়ী সঠিক পরিমাণের রড ব্যবহারসহ মোড়ানো অংশে রড় এঙ্গেল করে রড না দেয়াতে দ্রুত ভেঙে যায় গাডারটি। কাজের মান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কবিরের কাছে। কবির সময়ের বার্তাকে বলেন, ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে ৩ বছর আগে। জামানতও উত্তোলন করা হয়েছে। কাজের মান সম্পর্কে প্রকল্প কর্মকর্তা কামরুজ্জামান নিজেই ভালো বলতে পারবেন। এর বেশী মন্তব্য করতে নারাজ ঠিকাদার কবির। চরকাউয়া ইউনিয়নের চরকাউয়া নয়আনী সোহরাফ (কাঠ ব্যবসায়ী) এর বাড়ির সামনে খালের উপর নির্মাণ করা হয়েছে, ১৮ লাখ ২৬ হাজার ৯শ ৯৪ টাকা ব্যয়ে ২০ ফুট নির্মান করা হয়েছে আরো একটি ব্রীজ।
- আরো পড়ুন: ফেসবুক থেকে আয়ের নতুন উপায়
- আরো পড়ুন: বিপদে আল্লাহর পরীক্ষায় যে আমল করতেন নবিজী (সা.)
- আরো পড়ুন: নামাজে নারীদের পোশাক যেমন হওয়া প্রয়োজন
ব্রীজ নির্মাণ হলেও দুই পাশে মাটির কাজ শেষ না করেই কাজের সকল বিল উত্তোলন করে চম্প্ট মেসার্স ফাতেমা এন্টারপ্রাইজের মালিক মিজান। স্থানীয়রা বলেন, মাটির কাজ না শুধু! কাজের মানও নিম্নমানের। এছাড়া কাজটি কোন প্রকল্পর তার কোন তথ্য দেয়া হয়নি। শুধুমাত্র একটি সাদা নেমপ্লেট বসিয়ে দেয়া হয়েছে। দুই পাশে মাটি না দেয়ায় স্থানীয়রা নিজেদের উদ্যোগে সাকো তৈরী করে চলাচল করেন স্থানীয়রা, ৪ মাস পূর্বে একজন ভ্যান চালক সাকো ভেঙে গুরুত্বর আহত হন।
ঠিকাদার মিজানের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মুঠোফোন রিসিভ না করায় বরিশাল সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। নিম্নমানের কাজের পাশাপাশী কাজ সম্পূর্ণ না করে অর্থ উত্তোলনের সাথে যারা জড়িত তাদের সকলের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মহা পরিচালক মো: আতিকুল হক।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।