মশার উপদ্রবে থাকতে পারছে না,বি.এম কলেজের শিক্ষার্থীরা > মোঃ ইমন খন্দকার হৃদয়ঃ বরিশালের ঐতিহ্যবাহী সরকারি ব্রজমোহন কলেজে (বি.এম কলেজ) মশার উপদ্রবে নাজেহাল সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দিনে ও রাতে মশার আক্রমণ প্রবল থাকে। যারা হলে থাকে তাদের অবস্থা শোচনীয়, দিনে- রাতে মশারী ও কয়েল নিত্যদিনের সঙ্গী।
দিনের বেলায় ক্লাস থাকা অবস্থায় মশার যন্ত্রণা বেশ কষ্ট পেতে হয়, অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীদের।যার ফলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া সহ ভাইরাসজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। বি.এম কলেজ ক্যাম্পাসে হল ও চারটি একাডেমিক ভবনের আশেপাশে প্রচুর ময়লা- আবর্জনা,ময়লায় ভরা ডোবা -পুকুর, ঝোপ -ঝাড় ইত্যাদির কারণে মশা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কলেজ প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের সঠিক তদারকির অভাবকেই দুষছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এই সকল বিষয়ে সার্জেন্ট জহুরুল হক ( মুসলিম হল) হলে থাকা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ২০১৭-১৮ শিক্ষার্ষের মোঃ বাইজিদ মাতুব্বর সময়ের বার্তা কে বলেন,” আমি কয়েক বছর ধরে এই হলে রয়েছি কিন্তু মশার উপদ্রবে দিন দিন হলে না থাকার মত অবস্থা হয়েছে।সারাদিন মশারি টানিয়ে থাকতে হয়। আমি সহ হলে থাকা অনেক শিক্ষার্থী মশার উপদ্রবে ভুক্তভোগী”।
মুসলিম হল ও হিন্দু হল পরিদর্শন করলে দেখা যায় আশেপাশে প্রচুর ময়লা জমে রয়েছে,এই ময়লা বেশিভাগই হলে থাকা শিক্ষার্থীদের ফালানো,যার ফলে মশার আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে আরেক সাধারণ শিক্ষার্থী কবি জীবনানন্দ দাশ ( হিন্দু হল) হলে থাকা মার্কেটিং বিভাগ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সজল হালদার সময়ের বার্তাকে বলেন,” আমাদের হলে কোন ডাস্টবিন নেই,কলেজ প্রশাসন কে বলার পরেও তারা কোন ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করেনি তাই বাধ্য হয়েই হলের আশেপাশে ময়লা- আবর্জনা ফেলতে হচ্ছে”।
৪০ তম বি সি এস প্রিলিমিনিয়ারি প্রশ্নের সমাধান
কলেজ প্রশাসন ও হলের প্রভোস্ট সহ হল পরিচালনা কমিটি এ সকল বিষয়ে তদারকি বা কোন উদ্যোগ নিয়েছে কিনা? এসকল বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলে জীবনানন্দ দাশ হলে থাকা শিক্ষার্থী পদার্থবিভাগ ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শ্রী অভিজিৎ কুমার দাস সময়ের বার্তা কে বলেন,” কলেজ প্রশাসন মশার উপদ্রব জেনেও তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না,এমনকি তারা মাসেও হল মনিটারিং করতে আসেন না,একাধিক বার বলা সত্বেও যাবতীয় কোন ব্যবস্থা তারা নেয়নি। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন থেকে মাঝে মাঝে মশা নিধন ঔষধ স্প্রে করলেও তা যথেষ্ট নয়”।
বি.এম কলেজের আরেকটি বৃহৎ হল “ডিগ্রি হল” যেখানে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীরা বসবাস করছে তাদের সমস্যাও একই। হলের চারপাশে প্রচুর ময়লা -আবর্জনা যা বছরের পর বছর রয়েছে। ডিগ্রি হলে থাকা মার্কেটিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী সময়ের বার্তা কে বলেন,
” কয়েল ছাড়া এমন কোন দিন নেই যে হলে থেকেছি,কয়েলের ধোয়ায় মারাত্নক শারীরিক সমস্যা আমাদের হচ্ছে,মশার উপদ্রবের ফলে সন্ধার পরে ঠিকমত পড়তে বসতে পারিনা।যার ফলে আমাদের স্বাভাবিক পড়ালেখায় বিগ্ন ঘটছে।কলেজ প্রশাসন যদি চাইতো তাহলে এসব ময়লা – আবর্জনা পরিস্কার করে সুন্দর পড়ালেখার পরিবেশে নিশ্চিত করতে পারতো কিন্তু তারা এ ব্যাপারে উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে”।
৪২ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান
বি.এম কলেজে প্রতিদিন দিনের বেলায় ক্লাস করে শতাধিক শিক্ষার্থী। অনেক শিক্ষার্থীই বলছে দিনের বেলায় ক্লাসে অনেক মশার কামড় সহ্য করতে হয়। এ বিষয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সাধারণ শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল ইসলাম সময়ের বার্তা কে বলেন,” আমরা অনেক সময় মশার উপদ্রবে ঠিকমত ক্লাস করতে পারিনা।
বেঞ্চে পা ফেলতেই মশা কামড়ায়। স্যারদের বললেও তেমন সাড়া পাওয়া যায়না।কলেজে ড্রেন না থাকার কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই সেই জমে থাকা পানিতে মশার বংশবৃদ্ধি ঘটে যার ফলে অচিরেই এই সমস্যায় আমাদের ভুগতে হয়”।
কলেজ প্রশাসনের চরম গাফিলতি ও ভবিষ্যতে মশার দমনে কলেজ প্রশাসন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করবে কিনা? এই সম্পর্কে জানতে চাইলে সরকারি ব্রজমোহন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া সময়ের বার্তা কে বলেন, ” বি.এম কলেজের মত পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন কলেজ বাংলাদেশে নাই। এখানে পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন কর্মীরা নিয়মিত ক্যাম্পাস পরিষ্কার করে।মশার দমনের দায়িত্ব বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের। আমরা অনেকবার বরিশাল সিটি কর্পোরেশনকে জানাইছি তারা মাঝে মধ্যে ক্যাম্পাসে এসে ওষুধ স্প্রে করে।তবে তা যথেষ্ট নয়”।
এছাড়াও তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের করা অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলেন।কলেজ প্রশাসন সার্বক্ষণিক হল মনিটরিং করে। কলেজ প্রশাসন সর্বদা ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করছে কিন্তু কলেজে ময়লা- আবর্জনা, ঝোপ- ঝাড় দেখা যাচ্ছে,হলে ডাস্টবিন নেই
এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ” আমাদের ক্যাম্পাসে রাস্তায় ডাস্টবিন রয়েছে তবে হলে ডাস্টবিন নেই কিন্তু আমরা ডাস্টবিনের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। মশা দমনে ও হলের আশেপাশে ঝোপ-ঝাড় পরিষ্কারে কার্যক্রম অব্যাহত রাখছি “।
বি.এম কলেজে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন থেকে মশা দমনে যথেষ্ট ওষুধ স্প্রে করা হয় না। এমন অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ও কলেজ প্রশাসনের। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ২০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব সময়ের বার্তাকে বলেন,” বিএম কলেজের সব থেকে বড় মশা প্রিন্সিপাল ও স্টাফ কাউন্সিলের সেক্রেটারি।
এই দুই মশাকে যদি উৎখাত করা যায় তবেই বি.এম কলেজের সম্পূর্ণ মশা দমন হবে। বি.এম কলেজে প্রচুর মশা রয়েছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে যা আমি আগে থেকেই জানি।যার পরিপ্রেক্ষিতে আমি সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের জানিয়েছি কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা তা আমি জানিনা।
আমি সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধি কিন্তু আমার ওয়ার্ডে কোথায় মশার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে বা হবে এ সম্পর্কে তারা আমায় জানায় না। যার ফলে আমি অনেক চেষ্টা করলেও কিছু করতে পারিনা,আমি কাউন্সিলর ঠিকই কিন্তু আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব অন্যরা করে”।
এছাড়াও তিনি কলেজ প্রশাসন কে দায়ী করে আরও বলেন ” কলেজ প্রশাসন সিটি কর্পোরেশনকে কোটি টাকা ট্যাক্স দেয়। তবুও কেন? কলেজ প্রশাসন তাদের প্রাপ্ত সেবা সিটি কর্পোরেশন থেকে নিতে পারছে না, যা খতিয়ে দেখা উচিত।”
ঐতিহ্যবাহী বি.এম কলেজে বিকালে ও সন্ধ্যার পরে অনেক সাধারণ মানুষ এবং ডায়াবেটিকসের রোগীরা হাটা-চলা করেন। তাদের ভিতর অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে সন্ধার পরে বিএম কলেজে বসার মত অবস্থা থাকে না। তারা অতি দ্রুত এর সমাধান চান।
সেইসাথে হাজারো সাধারণ শিক্ষার্থীরদের দাবি বি.এম কলেজ ও কলেজের হল মশামুক্ত এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যকর একটি শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ গড়ে উঠুক।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।