অবসর জীবনকে নিজের মতো করে কাটাতে চান ৭৮ বছর বয়সী লুবভ মোরখোডোভা। হিমশীতল বরফাচ্ছন্ন এলাকায় একাই বাস করেন এ বৃদ্ধা। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে গভীরতম হ্রদ বৈকলে বসবাস করেন। এ নারী একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রযুক্তি প্রকৌশলী।
২০১১ সালে তার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে একাই বাস করছেন সাহসী এ নারী। তবে তিনি নিজেকে একা দাবি করেন না। কুকুর, বিড়াল, মোরগ-মুরগি, ষাঁড়, গরুসহ নানা প্রাণীদের যত্ন নিয়েই কেটে যায় তার জীবন।
ভোর হলেই তিনি বেরিয়ে পড়েন গরু, বাছুর ও ষাড়দের খাওয়াতে। তাদেরকে নিয়ে পাহাড়ে গিয়ে খাওয়ান। ৭ বছর বয়স থেকেই স্কেটিংয়ে পারদর্শী লুবভ। তাই তিনি বরফের মধ্যে স্কেটিং করেই চলাফেরা করেন।
পশু-পাখি সামলে অবসর পেলে লুবভ অ্যাম্ব্রোয়েডারি এবং অন্যান্য কারুশিল্প করতে পছন্দ করেন। পাশাপাশি ছবি আঁকা ও লেখালেখির প্রতিও আগ্রহ রয়েছে তার। তার কয়েকটি গল্প স্থানীয় প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃত হয়েছিল।
সারা বছর একাকী থাকলেও গ্রীষ্মের সময় লুবভের নাতি-নাতনিরা তার কাছে বেড়াতে আসেন। যদিও পরিবার অনেকবার তাকে এ পরিবেশ থেকে নিয়ে যেতে চেয়েছে; তবে যেতে নারাজ লুবভ। তিনি সাইবেরিয়ার এ হিমশীতল পরিবেশই উপভোগ করেন বলে জানান।
তিনি বলেন, ‘আমি বৈকাল হ্রদের প্রেমে পড়েছি। এর সৌন্দর্য আমাকে সবসময় পাগল করে দেয়। এখানে বসবাস করার আনন্দ হয়ত ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এর পানির স্বাদ অতুলনীয়।’
বৈকাল হ্রদ সাইবেরিয়ার নীল নয়ন বা সাইবেরিয়ার মুক্তা নামে পরিচিত। বৈকাল হ্রদ রাশিয়ার সাইবেরিয়ার দক্ষিণভাগে অবস্থিত একটি সুপেয় পানির হ্রদ।
হ্রদটির আয়তন প্রায় সাড়ে ৩১ হাজার বর্গকিলোমিটার। এটি বিশ্বের গভীরতম হ্রদ। এর সর্বাধিক গভীরতা ১ হাজার ৬৩৭ মিটার। ৩০০টিরও বেশি নদীর পানি এসে এ হ্রদে পড়েছে।
বৈকাল হ্রদের পানি অত্যন্ত অক্সিজেনসমৃদ্ধ। হ্রদের ৫ হাজার ফুট গভীরেও জলজ প্রাণীর বাস আছে। ১৯৯৬ সালে এটিকে একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ঘোষণা করা হয়। এটি বিশ্বের বৃহত্তম মিষ্টি পানির হ্রদ। বৈকাল হ্রদ প্রায় আড়াই কোটি বছরের পুরনো; এটিই বিশ্বের প্রাচীনতম হ্রদ।
এই হ্রদে রয়েছে ছোট-বড় ২৭টি দ্বীপ। সবচেয়ে বড় দ্বীপটির নাম ওলখন, যা লম্বায় ৭২ কিলোমিটার। বিশালতার কারণে প্রাচীন চীনা পাণ্ডুলিপিতে এই হ্রদকে ‘উত্তর সাগর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
হ্রদের পাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ১ হাজার ৭০০টিরও বেশি জাতের গাছপালা ও জীবজন্তু রয়েছে। যার এক-তৃতীয়াংশ পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যায় না।
বৈকাল শীতপ্রধান এলাকা। শীতকালে এখানকার তাপমাত্রা শূন্যের নিচে ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস; আর গ্রীষ্মকালে সর্বোচ্চ ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতকালে হ্রদের পানি বরফ হয়ে পুরো আস্তরণ তৈরি হয়; তখন তার ওপর দিয়ে দিব্যি হেঁটে যাওয়া যায়।