ঢাকার সাভার এলাকায় আকাশ নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনায় আটজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তাদের গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ। মূলত গত জুনে অনুষ্ঠানে একটি মোবাইল হারানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চুরির অভিযোগে দুই যুবককে মারধর করা হয়। পরে এ ঘটনার জের ধরে সাভারের একটি খাবার হোটেলের ভেতর ‘হৃদয় গ্রুপ’ ও ‘পিনিক রাব্বি গ্রুপের’ সংঘর্ষের সময় আকাশকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- হৃদয় হোসেন ওরফে গিয়ার হৃদয় (২৪), আরিয়ান আহম্মেদ জয় ওরফে ড্যাগার আরিয়ান (২৩), নাসির উদ্দিন নাসু ওরফে বাবা নাসু (৫২), আবিরুল হক আবির ওরফে কাটা আবির (২৪), জোবায়ের হাসান খন্দকার ওরফে পাইটু জোবায়ের (১৯), জাকির হোসেন রনি (৩০), জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহেদ (৩৬) ও আমির হামজা (২১)।
সোমবার (২৫ মার্চ) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাবের মুখপাত্র জানান, এই গ্রুপের সদস্যরা গত ১২ মার্চ সাভার পৌর এলাকায় সোহেল নামক এক ব্যক্তিকে এবং গত ২১ মার্চ সোবহানবাগ এলাকায় আমজাদ নামক অপর এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে।
আল মঈন জানান, গ্রেফতার গিয়ার হৃদয় সাভার এলাকায় ৪-৫ বছর ধরে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ পরিচালনা করে আসছিলেন। তিনি বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতেন। গত বছরের ৯ জুলাই সাভারের এনাম মেডিকেলের সামনে আকাশকে হত্যা করা হয়। এ মামলার এক নম্বর আসামি হৃদয়।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মাদক, হত্যা, মারামারি ও ছিনতাইসহ ছয়টি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতার ড্যাগার আরিয়ান হৃদয়ের অন্যতম সহযোগী। তিনিও এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িত। তার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য এলাকায় তাকে সবাই ড্যাগার আরিয়ান বলে চিনতেন। তার বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মাদক মামলা রয়েছে।
অন্যদের ব্যাপারে জানাতে গিয়ে র্যাবের এই মুখপাত্র বলেন, গ্রেফতার নাসির উদ্দিন ওরফে বাবা নাসু গিয়ার হৃদয় গ্রুপের অন্যতম সক্রিয় সদস্য। তিনি গত ২১ মার্চ রাতে সাভারের সোবাহানবাগ এলাকায় আমজাদ হোসেন হত্যা মামলার অন্যতম সন্দেহভাজন আসামি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারি ও হত্যাসহ চারটি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতার আবিরুল ওরফে কাটা আবির, আমির হামজা ও জোবায়ের ওরফ পাইটু জুবায়ের সাভারে অন্যতম ত্রাস সৃষ্টিকারী হৃদয় গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। গ্রেফতার জাহিদুল হৃদয় গ্রুপের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে হৃদয় গ্রুপের সদস্যদের বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন বলে তাকে সবাই গ্রুপটির উপদেষ্টা বলে জানত। তিনি কষ্টি পাথর ও ধাতব মুদ্রা প্রতারণার সাথেও জড়িত। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন ব্যক্তিদের ভুয়া পাথরের মূর্তি দেখিয়ে, কষ্টি পাথর বিক্রির কথা বলে তার সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে জিম্মি করে সর্বস্ব হাতিয়ে নিতেন। তার বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন থানায় ৬-৭টি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতার জাকির হোসেন রনি ওরফে মেশিন রনি হৃদয় গ্রুপের অন্যতম সদস্য। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বের দিন হৃদয়ের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে একটি আগ্নেয়াস্ত্র কিনেন এবং এই অস্ত্র বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভাড়ায় খাটাতেন। আগ্নেয়াস্ত্র ভাড়া দেওয়ার কারণে তাকে সবাই মেশিন রনি হিসেবে চিনতেন। তার বিরুদ্ধে সাভার থানায় হত্যা মামলা রয়েছে।
গ্রেফতার সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা।