পবিত্র রমজান মাসে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পায়তারাকারীদের কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
তিনি বলেছেন, রমজান মাসে মানুষ যাতে ন্যায্যমূল্যে পণ্য সামগ্রী পায় এ জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এরপরও অতি মুনাফার লোভে কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। এটি দেশবিরোধী কাজ। আর এ কাজ যে করবে তাকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে।
রোববার দুপুরে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও ঢাকা-৮ আসনের আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপি-জামায়াত চায় মানুষের দুঃখ-কষ্ট যাতে বৃদ্ধি পায়। এজন্য যা যা সম্ভব তারা তাই করছে। তারা মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এরা কখনো দেশের ভালো চায় না। এরা দেশকে ধ্বংস করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়। এদের নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফি, সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুল আমিন রুহুল, সহ-সভাপতি শহীদ সেরনিয়াবাত, কাউন্সিলর মামুনুর রশিদ শুভ্র, নূর নবি ভূইয়া রাজু, আবুল হোসেন সহ মহানগর ও ঢাকা-৮ আসনের আওয়ামী লীগ নেতারা।
এর আগে সকালে রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ অডিটোরিয়ামে বার্ষিক পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষকদের উদ্দেশ করে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, যারা আগামীর বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিবে সেই প্রজন্মকে তৈরি করতে হলে আপনাদের হতে হবে নিখুঁত ও মননশীল মানসিকতার। আপনারা শিক্ষাঙ্গনের পবিত্রতা রক্ষা করে আমাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলবেন যাতে তারা সুন্দর মানসিকতার মানুষ তৈরি হয়। অভিভাবকরা অনেক প্রত্যাশা নিয়ে তাদের সন্তানদের শিক্ষাঙ্গনে পাঠায়।পিতা-মাতার প্রত্যাশা সব ক্ষেত্রে পূরণ নাও হতে পারে, কিন্তু আমাদের কোনো ভুলের কারণে শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনা নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের সন্তানদের মধ্য থেকে আগামীতে কে নেতৃত্ব দিবে- তা আমরা জানি না। তবে আমরা আমাদের সম্ভাবনাকে উড়িয়েও দিতে পারি না। আমাদের সম্ভাবনাকে সফল করার জন্য আমাদের অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হবে। আমার খুব কষ্ট লাগে যখন শুনি শিক্ষক শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করে, শিক্ষক অভিভাবকের বিরুদ্ধে মামলা করে, অথবা ম্যানেজিং কমিটি শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করে। কেউ অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়, এটা মেনে নেওয়া যায় না। কেউ কোনো ভুল করলে আমরা তাকে ক্ষমা করতে পারি। আমরা ভালো থেকে শিক্ষা নিতে পারি। আমাদের সন্তানদের মঙ্গলের জন্য যারা শিক্ষকতা করি তারা সব ভেদাভেদ ভুলে যেতে পারি।
নাছিম আরও বলেন, বাংলাদেশের সব থেকে বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ঢাকা-৮ আসনে অবস্থিত। এই আসনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল, ভিকারুন্নেসা, আইডিয়াল স্কুল, মডেল স্কুল ও নটরডেম কলেজসহ আরও অনেক বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখানে হাজার হাজার ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে। এই ঢাকা-৮ আসন থেকে আগামীর সম্ভাবনা ও নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, তোমরা লেখাপড়া যেমন করবে তেমনি শারীরিক সুস্থতা ধরে রাখার জন্য খেলাধুলাও করতে হবে। তোমাদের প্রকৃত অর্থেই সৃজনশীল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। তোমরা যাতে অন্য মানুষকে ভালোবাসতে পারো, শ্রদ্ধাবোধ রাখতে পারো, অপরের দুঃখ, কান্না বেদনায় শামিল হতে পারো সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আমরা যারা প্রবীণ হয়ে গিয়েছি আমাদের যেখানে ব্যর্থতা সেখানেই তোমাদের সফলতা। তোমরা যদি সফল হও তাহলে আমরা ব্যর্থতার গ্লানি থেকে মুক্তি পাবো।
নাছিম বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টুঙ্গীপাড়ার মতো একটি নিভৃত পল্লীতে জন্মগ্রহণ করে সাধারণ মানুষের মতোই বেড়ে উঠেছেন। তিনি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন।তিনি সারা জীবন, দুঃখ, কষ্ট, বেদনা ও কারাগারে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো পার করেছেন শুধুমাত্র বাঙালির মুক্তির জন্য। তিনি চেয়েছেন বাঙালি যাতে বিশ্ব দরবারে তার নিজস্ব পরিচয়ে সম্মানিত হয়। তিনি তার স্বপ্ন পূরণ করে যেতে পারেননি। বিশ্বাসঘাতকরা তাকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করেছে। বর্তমানে তার কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান আফতাব হোসেন প্রামানিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক সদস্য ও টঙ্গী সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেনসহ স্কুলের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় কাউন্সিলর এবং আওয়ামী লীগ নেতারা।