মানব শরীরে শরীরের ভিটামিন ডি এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আমাদের জীবন ধারণের মুখ্য উপাদান হচ্ছে খাদ্যাভ্যাস। বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও মিনারেল থেকে শরীরে পুষ্টির যোগান হয় নানা। ভিটামিন ডি প্রাকৃতিক উপায়ে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে আমাদের ত্বকে উৎপন্ন হয়।
ভিটামিন ডি তার বহুমুখী উপকারে নিজের অপরিহার্যতা মানুষের জীবনে তুলেছে। এটির জৈবনিক কার্যাবলী ও মেডিক্যাল দিক সত্যি অনস্বীকার্য। হাড় ও দাঁতের কাঠামো নির্মাণেও এটির উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।
শরীরের ভিটামিন ডি এর প্রয়োজনীয়তা
- ভিটামিন ডি শিশুদের রিকেট রোগ (হাড় বেঁকে যাওয়া) বড়দের অস্টিওমিলেশিয়া এবং বয়স্কদের হাড় জনিত ক্ষয় রোগ আটকাতে দারুণ উপযোগী।
- অন্ত্রেক্যালশিয়াম এর শোষণ ও ফসফরাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা ভিটামিন ডি এর অন্যতম একটি গুণ।
- শিশুর জন্মের ১৮ মাস বয়স পর্যন্ত বিকাশ ও বৃদ্ধিতে ভিটামিন ডি এর অবদান রয়েছে। এর অভাবে শিশুর হার নরম থেকে যেতে পারে।
- ভিটামিন ডি এর অত্যাবশ্যকীয় অভাবে পা এর হাড় ধনুকের মতো বেঁকে যেতে পারে। এর অভাবে কোমরে যন্ত্রণা এবং বৃদ্ধরা বাতের ব্যথায় ভুগতে পারেন।
- এছাড়াও থাইরয়েডের কাজে বিঘ্ন, মেরুদণ্ডের ব্যথা ও অসময়ে দাঁত পড়ে যাবার মতো ঘটনাও ঘটে।
শরীরে ভিটামিন ডি ঘাটতি হবার লক্ষণ
- ঘনঘন অসুস্থ হওয়া এবং রোগ সারতে দেরি হওয়া একটি প্রধান লক্ষণ। অনেকেই নিজে নিজেই এর প্রতিকার তৈরি করতে যান এবং সেটাতে আরো সময় লেগে যায়।
- শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায় ভিটামিন ডি এর অভাবে। ঘা শুকতেও অনেকটাই সময় লেগে যায়।
- কাজের ফলে ক্লান্তি আসা নর্মাল ব্যাপার। কিন্তু অকারণে ক্লান্তিভাব, ঝিমুনি এবং শুয়ে বসে থাকার ইচ্ছে কিন্তু হতেই পারে এটির অভাবে।
- আমরা চুল পড়লে কতনা পদ্ধতি ট্রাই করি সেটা ভালো করার জন্য। কিন্তু ভেতরের সমস্যা খুঁটিয়ে দেখি না। খাবারে ভিটামিন ডি কম পড়লেও চুল ঝরে যেতে পারে।
- গা ম্যাজম্যাজ করা, হাত পা যন্ত্রণা, জয়েন্ট পেন বা খেলাধুলা ও চোট ছাড়াও মাংসপেশির ক্র্যাম্প কিন্তু এটার জন্যেই হয়।
- ওজন বৃদ্ধি নিয়ে আমরা কেনা চিন্তিত? সবাই ডায়েট জিম নিয়েই ব্যস্ত থাকি কিন্তু ভিটামিন ডি টনিকেও যে আপনার ওজন ভ্যানিশ হতে পারে ম্যাডাম সেটা কি জানেন?
ভিটামিন ডি এর উপকারিতা
ভিটামিন ডি চোখের জন্য দারুণ উপকারী। এটি গ্রহণে আপনার চোখের যাবতীয় রোগ দূরে থাকবে। তাই বয়স বৃদ্ধির সাথে দৃষ্টিশক্তিকে সচল ও স্বাভাবিক রাখতে ভিটামিন ডি অবশ্যই গ্রহণযোগ্য।
অপরদিকে ভিটামিন ডি এর একটি উপাদান হলো ক্যালশিয়াম যা পেশির স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায় ও পেশীর টান দূর করে। এর ফলে আপনার হাঁড় আগের তুলনায় আরো বেশী মজবুত হয়। ভিটামিন ডি হাড়ের ক্ষয়জনিত সমস্যা দূরীভূত করে।
এটি কোলেস্টেরল কমিয়ে হার্টজনিত নানান ঝুঁকি হ্রাস করে এবং বিপক্রিয়া ঠিক রাখে। ক্রনিক মাইগ্রেন ও ওজন বৃদ্ধি কমায়। ক্যানসার প্রতিরোধেও এর প্রয়োগে প্রতিক্রিয়া মিলেছে। এছাড়া এটি রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিস ঠেকায়। জৈবনিক প্রতিষেধক রূপে কাজ করে ঠান্ডা লাগা, সর্দিকাশির মতো উপসর্গ দমন করে আর ইম্যুনিটি বুস্ট করে।
আপনার শরীরে কতটুকু ভিটামিন ডি দরকার?
একজন মানুষের শরীরে কতটুকু ভিটামিন ডি দরকার তা একটি আপেক্ষিক বিষয়। এক্ষেত্রে আপনার বয়স ও শারীরিক অবস্থা জানা জরুরি। তবে পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দৈনিক ৬০০ ইউনিট ভিটামিন ডি ও ১০০০ মাইক্রো গ্রাম ক্যালসিয়াম এর চাহিদা থেকে থাকে। অন্যদিকে ৭০ এর অধিক বয়সীদের জন্য সেই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১২০০ মাইক্রোগ্রাম। বয়স অনুপাতে ভিটামিন ডি এর চাহিদা ২৫-১০০ এমজি এর মধ্যে ঘোরা ফেরা করে থাকে।
ভিটামিন ডি এর উৎস
হাড়ের গঠন এর ৮০% শতাংশই আসে ভিটামিন ডি এর প্রত্যক্ষ উৎস সূর্যালোক থেকে। তাই সকালে বিকেলে বাচ্চাদের খোলা জায়গায় খেলতে দিন যেখানে রোদ এসে গায়ে লাগবে। বড়দেরও দিনে ১০-১৫ মিনিট রোদে কাটানো দরকার। তবেই ত্বকে ভিটামিন তৈরি হবে। তবে সানস্ক্রিন মাখবেন না। এতে বাধা উৎপাদন হয়। শীতকালে রোদে দাঁড়ানোর সময় বাড়াতে পারেন। ড্রাইভ করার সময় গাড়ির জানলা খোলা রাখুন যাতে রোদ এসে লাগে। এছাড়াও
১. গরুর দুধ, কডমাছের লিভার, মাশরুম, মুরগির ডিম ইত্যাদি রাখুন খাদ্য তালিকায়। এগুলো ভিটামিন ডি বাড়াতে সাহায্য করে।
২. স্যামন মাছ ১০০ গ্রাম রান্না করে খেতে পারেন তাতে যথেষ্ট পাবেন ভিটামিন ডি ও ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড।
৩. পালং শাক ও শিমের সুপ খেতে পারেন। এগুলো ডিতে ভরপুর। টকদই, কমলালেবু ইত্যাদি নিতে পারেন এরাও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ।
৪. ত্বকের গ্লো বাড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট হিসাবে টনিক বা ট্যাবলেট নিতে পারেন।