সহকারী অধ্যাপক শামীম’র সার্টিফিকেট বাণিজ্য ফাঁস

সহকারী অধ্যাপক শামীম’র সার্টিফিকেট বাণিজ্য ফাঁস

মো: রাকিব হাওলাদার এবং মো: সুমন হোসেন: বরিশাল নগরীতে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অর্থের বিনিময়ে বিক্রি হচ্ছে জাল সনদ (সার্টিফিকেট)। সম্প্রতি বরিশাল সরকারী সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এইচএম শামীম আহমেদ’র টাকার বিনিময়ে অষ্টম শ্রেণির সনদ বিক্রির একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওটি সময়ের বার্তা’র অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, নগরীর সরকারী সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তার মালিকানাধীন স্কুল ফজলুল হক রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে সুমন নামে এক ব্যক্তিকে ২০০৯ সালে ৮ম শ্রেণির বার্ষিক পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এইমম্মে প্রত্যয়ন পত্র দিচ্ছেন। অধ্যক্ষ মো: ইলিয়াস খন্দকারের স্বাক্ষরের জায়গায় নিজেই স্বাক্ষর দিয়ে ২০১০ সালের ১ সেপ্টেম্বর তারিখের ওই প্রত্যয়ন পত্রটি প্রদান করা হয়।

সময়ের বার্তা’র প্রাপ্ত তথ্য মতে সুমন ওই স্কুলে কখনো পড়াশোনা করেননি। মূলত শিক্ষক শামীম সনদ বাণিজ্য করছেন, এমন তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে যান তিনি। অনুসন্ধানে উঠে আসে শিক্ষক শামীমের জাল সনদের রমরমা বাণিজ্যের তথ্য। অষ্টম শ্রেণির একটি জাল সনদ প্রদানে জন্য প্রথমে তিনি ১০ হাজার টাকা দাবী করেন। দর কষাকষির এক পর্যায়ে ৩ হাজার টাকায় ওই সনদপত্রটি প্রদান করতে রাজি হন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারী সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এইচএম শামীম সময়ের বার্তাকে জানান, সনদের টাকা নয়, শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে বকেয়া বেতন আদায় করা হয়েছে। তবে যিনি ওই স্কুলে পড়াশোনা করেননি তিনি কিসের বেতন পরিশোধ করছেন এমন প্রশ্নে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। পাশাপাশি অধ্যক্ষের স্বাক্ষরের জায়গায় নিজে স্বাক্ষরের বিষয়টিও এড়িয়ে যান অভিযুক্ত এ শিক্ষক।

জানা যায়, অধ্যক্ষ মো: ইলিয়াস খন্দকারের ভুয়া সিল তৈরী করে নিজেই জাল স্বাক্ষর প্রদান, জাল সনদ বিক্রিসহ স্কুলের নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন শামীম। বরিশাল জেলা শিক্ষা অফিসার মো: আনোয়ার হোসেন সময়ের বার্তাকে বলেন, ‘অবৈধভাবে সনদ বাণিজ্যের সুযোগ নেই। যদি কেউ করে থাকে এটা দণ্ডণীয় অপরাধ।’ বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে অবগত করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিথীকা সরকার সময়ের বার্তাকে জানান, সনদ বিক্রি ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থীর জীবনে সারা বছর পড়াশোনা শেষে চুড়ান্ত পরীক্ষায় মূল্যায়নের পরে সনদ পেয়ে থাকে। যা দিয়ে সে তার পরবর্তী জীবনে চাকুরী থেকে শুরু করে দেশ সেবায় অংশগ্রহণ করে। দেশ ও জাতির কল্যাণে বিশাল অবদান রাখে সে। আর সেই সনদ যদি বিনা পরিশ্রমে অবৈধ উপায়ে পাওয়া যায়, তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ কি হবে?’ তিনি আরো বলেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠিত নামকরা সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক যদি এটা করে তাহলে তিনি কিভাবে বিসিএস পরীক্ষায় পাস করে মহান পেশায় নিয়োজিত হলেন, তাও তদন্তের প্রয়োজন।’

সনদ বিক্রি নিয়ে এক অভিভাবক হতাশার সাথে সময়ের বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা বছরের পর বছর পড়াশোনা করে একটি সনদ অর্জন করে। কিন্তু আমাদের দেশের কিছু দূর্নীতিবাজ ও কালোবাজারীরা সামান্য টাকার জন্য শিক্ষার মান খারাপ করছে।’ বরিশালের জেলা প্রশাসক এবং মাউশি বোর্ডের চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান। এক শিক্ষার্থী সময়ের বার্তাকে বলেন, ‘শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। তাদের কাছে থেকে আমরা শিক্ষাগ্রহণ করি। আমি একজন শিক্ষার্থী হিসেবে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এই সকল শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’

Check Also

প্রধান বিচারপতির কাছে নাজির কামরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ

প্রধান বিচারপতির কাছে নাজির কামরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ

প্রধান বিচারপতির কাছে নাজির কামরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ।।  মিথ্যা মামলা দিয়ে অর্থ বাণিজ্যপ্রভাব খাটিয়ে রায়ের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *