বরিশালের হিজলা উপজেলায় দুই এমপি পঙ্কজ ও শাম্মীর অনুসারীদের দ্বন্দ্বে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (১৬ মার্চ) সকাল ৯টার দিকে উপজেলার মেঘনা নদী তীরে সয়াবিন ক্ষেত থেকে পঙ্কজ অনুসারী জামাল মাঝির (৬০) রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে নিহত জামাল মাঝির বসতঘরের মাত্র দেড়শ গজ দূরে ধুলখোলা ইউনিয়নের পালপাড়া এলাকায়।
হত্যাকাণ্ডের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবাইর।
এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে শাম্মী অনুসারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জামাল ঢালিসহ ৪০/৫০ জনের বিরুদ্ধে। ঘটনার সময় পুলিশ আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে হত্যার পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এমপি পঙ্কজ।
অভিযোগ অস্বীকার করে হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবাইর বলেন, এসব কথা অবান্তর। পুলিশ কারও পক্ষের না।
ড. শাম্মী বলেন, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে অতীতের মত মিথ্যা দায় চাপানোর চেষ্টা করছে এমপি পঙ্কজ।
নিহত আওয়ামী লীগ নেতা জামাল মাঝি (৬০) পালপাড়া গ্রামের মৃত কাদের মাঝির ছেলে। তিনি (জামাল মাঝি) উপজেলার ৬ নম্বর ধুলখোলা ইউনিয়নের ৭ নম্বর পালপাড়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। এছাড়াও জামাল মাঝি বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের অনুসারী।
অভিযুক্ত জামাল ঢালি ধুলখোলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান। এছাড়া তিনি (জামাল ঢালি) সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদের অনুসারী। শাম্মী বরিশাল ৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসন থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়েও দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি।
নিহতের স্ত্রী আঁখি বেগমের দাবি, ধুলখোলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শাম্মী অনুসারী জামাল ঢালির সঙ্গে আমার স্বামীর দ্বন্দ্ব রয়েছে। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জামাল ঢালির নেতৃত্বে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে। শুক্রবার ধুলখোলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জামাল ঢালির সঙ্গে আমার স্বামীর (জামাল মাঝি) দ্বন্দ্ব হয়। তখন চেয়ারম্যান জামাল ঢালি আমার স্বামীকে হত্যার হুমকি দেন। আজ (শনিবার) সকালে নদীর তীরে আমার স্বামীর রক্তাক্ত লাশ পেয়েছি।
নিহতের স্ত্রী আঁখি আরও বলেন, শুক্রবার রাতে বাড়ি না ফেরায় ২টার দিকে স্বামী জামাল মাঝির মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হয়। তখন তিনি জানিয়েছিলেন ভালো আছেন ও নিরাপদে আছেন। সকাল ৯টার দিকে স্বামীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বরিশাল ৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ জানান, নির্বাচন কেন্দ্রীক দ্বন্দ্বে সংসদ নির্বাচনের দুইদিন আগে এই জামাল ঢালিকে আহত করা হয়েছিল। এরপর এ চলতি বছরের ২ মার্চ হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জামাল মাঝির বাড়িতে হামলা করেন সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ড. শাম্মী আহমেদ গ্রুপের ইউপি চেয়ারম্যান জামাল ঢালির নেতৃত্বে ৪০/৫০ জন সন্ত্রাসী। তারা জামাল মাঝিসহ পরিবারের সাত সদস্যকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করেন। পরে জামাল মাঝির ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় জড়িত সাইফুল ইসলাম নামে শাম্মীর এক অনুসারীকে শুক্রবার (১৫ মার্চ) পেয়ে মারধর করা হয়। এ ঘটনার পর হিজলা থানার ওসি জুবাইর ও পরিদর্শক (তদন্ত) দীপংকর রায় শাম্মীর অনুসারী জামাল ঢালির স্ত্রীর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছে। এরপরই অভিযান চালিয়ে আমার (এমপি পঙ্কজ) অনুসারীদের এলাকা ছাড়া করেন। এমনকি দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এমপি পঙ্কজের অভিযোগ, শুক্রবার রাত থেকে পুলিশের অভিযানের কারণে এলাকার বাইরে চলে চলে যান। তারা সেহরিও খেতে পারেনি। সবাই গেলেও জামাল মাঝি একা ছিলেন। সকালে তাকে পেয়ে জামাল ঢালিসহ ড. শাম্মীর অনুসারীরা কুপিয়ে হত্যা করেছে। এলাকায় আধিপাত্য বিস্তার করতে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
শাম্মী অনুসারী চেয়ারম্যান অভিযুক্ত জামাল ঢালি বলেন, নিহত জামাল মাঝি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী বা প্রতিপক্ষও না। সে পঙ্কজের ও আমি শাম্মীর রাজনীতি করি। ২ জানুয়ারি শাম্মী আপার নমিনেশন বাতিল হওয়ার পর ওই এলাকায় আর যাইনি। বর্তমানে আমি বরিশালে থাকি। ২০২১ সালে জামাল মাঝির আত্মীয়রা আমার ভাই ও ভাগনেকে হত্যা করছে। সেই ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে।
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ড. শাম্মী আহমেদ বলেন, ওনার (পঙ্কজ) আমলে ১৩টি খুন করিয়েছেন। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে অতীতেও এমন খুন করে অন্যকে দায় চাপানোর চেষ্টা করেছে। যা তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এ খুনের ঘটনায় প্রশাসনকে বলেছি সঠিক তদন্ত করে দোষীদের বিচার নিশ্চিত করতে। আমাকে নিয়ে মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়ালে আইনের আশ্রয় নেব।
হিজলা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দীপংকর রায় বলেন, এসব কথা অবান্তর। পুলিশের কোনো পক্ষাবলম্বনের সুযোগ নেই। গত ১৫ দিন ধরে ধুলখোলা ইউনিয়নে দুই গ্রুপের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। গত ১৫ দিনে থানা ও আদালতে পাঁচটি মামলা করেছে একপক্ষ অপরপক্ষের বিরুদ্ধে।
হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবাইর বলেন, এসব কথা অবান্তর। পুলিশ কারও পক্ষের না। শুক্রবার (১৫ মার্চ) এমপি শাম্মীর অনুসারী সাইফুল ইসলামের হাত-পা ভেঙে দিয়েছে পঙ্কজ অনুসারীরা। সেই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালিয়ে পঙ্কজের দুই অনুসারীকে গ্রেফতার করেছে। সেই মামলায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।
ওসি জুবাইর আরও বলেন, পরিত্যক্ত অবস্থায় লাশ পেয়েছি। কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কে বা কারা করেছে তা জানি না। তদন্ত করে বলতে পারবো কারা জড়িত। এ ঘটনায় আইন অনুযায়ী কার্যক্রম চলছে। এখন পর্যন্ত কাউকে আটকরা হয়নি। এছাড়া থানায় কেউ লিখিত কোনো অভিযোগও দেননি বলে জানান ওসি।