বরিশালের আগৈলঝাড়ায় এক আনড়ি হাতুড়ে চিকিৎসকের অপচিকিৎসায় গৃহবধূর গর্ভের প্রথম সন্তান মারা যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মৃত্যু শয্যায় ওই গৃহবধূ বর্তমানে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের আমবৌলা গ্রামের ইউনুচ ফকিরের ছেলে প্রবাস ফেরত গোলাম মাওলা অভিযোগে জানান, তার স্ত্রী লিয়া বেগম সাত মাসের অন্তঃসত্বা অবস্থায় শরীরে মৃদু জ্বর দেখা দেয়ায় তাকে নিয়ে গত ২৪ জুলাই শনিবার পয়সারহাট বন্দরে শহিদ মেডিকেল হলে চেম্বার করা হাতুড়ে চিকিৎসক রিপন হালদারের কাছে নিয়ে যায়।
হাতুরে চিকিৎসক রিপন অন্তঃসত্তা গৃহবধূকে স্থানীয় বেঙ্গল ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারে রক্ত পরীক্ষা করাতে বলেন। রোগীর রক্ত পরীক্ষা শেষে স্বজনেরা রিপোর্ট নিয়ে রিপনকে দেখালে রিপন তার ব্যবস্থাপত্রে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এন্টিবায়োটিক ইনজেকশনসহ ঔষধ লিখে দেন।
হাতুড়ে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রানুযায়ি অন্তঃসত্তা গৃহবধূকে ওই ইনজেকশন দেয়ার পরেই লিয়া বেগম অসুস্থ হয়ে পরে। পরদিন সকালে পুণঃরায় ইনজেকশন দেয়ার পরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরেন লিয়া বেগম। লিয়ার অসুস্থার বিষয়টি ফোনে হাতুড়ে চিকিৎসক রিপনকে জানালে রিপন ফোনেই ব্যবস্থাপত্র হিসেবে লিয়াকে অ্যালজিন ঔষধ খাওয়াতে বলেন।
রিপনের কথা মতো লিয়াকে অ্যালজিন নামক ঔষধ খাওয়ানোর পরেও রোগীর উন্নতি না হয়ে আরও অবনতি হলে সোমবার স্থানীয় ক্লিনিক পয়সারহাট আদর্শ জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। পয়সারহাট আদর্শ জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত ডা. মোকসেদ হাসান অন্তঃসত্ত্বা লিয়াকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করিয়ে তার গর্ভের সন্তান মৃত বলে জানান।
এরপর ওই ক্লিনিকেই লিয়ার গর্ভের মৃত সন্তানকে নরমালভাবে প্রসব করানোর চেষ্টা করানো হলেও লিয়ার অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। হাতুড়ে চিকিৎসক রিপন হালদারের বিরুদ্ধে এলাকায় অপচিকিৎসার ব্যাপক অভিযোগ থাকলেও অজ্ঞাত কারনে উপজেলা প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় ক্ষোভ জানিয়ে অসুস্থ লিয়ার স্বামী গোলাম মাওলা তার স্ত্রীর অপচিকিৎসার ব্যাপারে মামলা করবেন বলেও জানান।
এ ব্যপারে হাতুড়ে চিকিৎসক রিপন হালদার বলেন, রোগীকে কোন ধরণের এন্টিবায়োটিক লেখার কোন এখতিয়ার তার না থাকলেও রোগীর ভালো করার স্বার্থে তারা লিখে থাকেন। তিনি আরও বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বা উর্ধ্বতন কোন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এন্টিবায়োটিক লিখতে নিষেধ করলে তিনি বা তারা ভবিষ্যতে কোন এন্টিবায়োটিক লিখবেন না।
গর্ভের সন্তান মারা যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা যে কোন কারনেই হতে পারে। তবে আমার দেয়া ঔষুধের কারণে লিয়া বেগমের গর্ভের সন্তান মারা যায়নি বলেও দাবি করেন তিনি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বখতিয়ার আল মামুন বলেন, কোন পল্লী চিকিৎসক তাদের প্রেসক্রিপশনে এন্টিবায়োটিক লিখতে পারবে না।
অভিযুক্ত ওই পল্লী চিকিৎসকের অপচিকিৎসায় গর্ভের সন্তান মারা যাওয়ার ঘটনাটি তদন্ত করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানান তিনি।