ইমরানের স্বেচ্ছাচারিতায় বন্ধ হওয়ার পথে ইনফ্রা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

ইমরানের স্বেচ্ছাচারিতায় বন্ধ হওয়ার পথে ইনফ্রা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেসরকারী কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইনফ্রা পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত ও স্বনামধন্য। একাডেমিক কার্যক্রম থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানটির সব কিছুতে সমৃদ্ধতা থাকায় স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বে বন্ধ হওয়ায় উপক্রম হয়েছে।

দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে পথচলা এই বিদ্যাপিঠটির দুই মালিকের দ্বন্দ্বে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সকল কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে। ঠিকমত হচ্ছে না পাঠদান, শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও তৈরী হয়েছে গ্রুপিং। এছাড়া আশংকাজনক হারে কমেছে শিক্ষার্থী সংখ্যা।

এমন অবস্থা চলতে থাকলে যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আশংকা প্রকাশ করেছেন প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। কাগজে কলমে দুই মালিকের দ্বন্দ্ব বলা হলেও মূলত অনিময় আর স্বেচ্ছাচারিতায় জড়িয়ে প্রতিষ্ঠানটির এই হাল তৈরী করেছেন পরিচালক ড. মোঃ ইমরান চৌধুরী। প্রতিষ্ঠানটির দুই মালিকের মধ্যে দ্বিতীয় পার্টনার বা অংশীদার তিনি।

আর প্রথম পার্টনার হচ্ছেন প্রকৌশলী আমির হোসেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের সব কিছুতে একক আধিপত্য বিস্তার ও প্রথম পার্টনারকে বিতারিত করার জন্য পরিকল্পনা করছেন ইমরান বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, পরিচালক ইমরান শিক্ষক ও কর্মচারী পদে নিজের পছন্দের লোকজন নিয়োগ এবং বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানের কথা বলে তাদেরকে নিজের পক্ষে নিয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও কর্মচারীদের নিয়ে ইনফ্রা শিক্ষক-কর্মকর্তা কর্মচারী কল্যান সমিতি নামে একটি সংগঠন করে দিয়েছেন তিনি। অথচ প্রতিষ্ঠানটির গঠনন্ত্র ও চাকুরীবিধি ২০০৬ অনুযায়ী এ ধরনের সমিতি বা সংগঠন করার কোন বৈধতা নেই। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ ভাবে এ কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন তিনি ও তার অনুসারী প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। বুধবার ওই কমিটির অভিষেক সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

যা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরে তুমুল বিতর্ক চলছে। যার প্রভাব পড়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের উপর। দুই মালিকের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসায় পরিবেশ প্রতিকূলে থাকায় পাঠদানের খেই হারিয়ে ফেলেছেন শিক্ষকরাও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক বলেন, প্রায় প্রতিদিনই দুই মালিকের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রুপ নেয়। যার দ্বারা স্বাভাবিক ভাবেই আমরা প্রভাবিত হই।

তারা বলেন, এভাবে চলতে থাকলে প্রতিষ্ঠানটি যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের প্রত্যাশা দ্রুত সময়ের মধ্যে উভয় মালিক তাদের সমস্যা বা দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলবেন। একাধিক শিক্ষার্থী বলেন সত্যি বলতে প্রতিষ্ঠানে এখন আর আগের মত নেই। ঠিকমত ক্লাশও হয় না। শিক্ষকরা সহ সবাই তাদের দ্বন্দ্ব উপভোগ করছে। পরিচালক স্যাররা এখন আর আগের মত আন্তরিকতা দেখান না। কারন তারা এক অপরকে ঘায়েল করা নিয়ে ব্যস্ত। আমরা এটা চাই না।

দ্বন্দ্বের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথম পার্টনার তথা পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ আমীর হোসেন বলেন, প্রতিষ্ঠানে আমরা দুইজন সমান অংশীদার। এখানে কোন এমডি বা চেয়ারম্যান নেই। নিয়ম হচ্ছে আমরা দুজন পরিচালক সমান অধিকার নিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করব। কিন্তু ইমরান সেটা চান না। তিনি আমাকে বাদ দিয়ে সব কিছু একাই করতে চান। আমির বলেন, ইমরান দীর্ঘ সময় ধরে এই স্বৈরাচারী চর্চা করে আসছে। প্রতিষ্ঠানের সব ক্ষেত্রে অনিময় করছে।

প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে এতদিন সব কিছু মুখ বুঝে সহ্য করেছি। এখন আর পারছি না। তিনি বলেন নিয়ম না থাকলেও প্রতিষ্ঠানে একটি সমিতির অনুমোদন দিয়েছে ইমরান। এটার দেখাদেখি কিছুদিন পর আর একটি সংগঠন আতœপ্রকাশ করবে। এভাবে কিছু দিন পর ক্যাম্পাসে শুধু মিটিং মিছিল চলবে।

এমনিতেই তো একাডেমিক কার্যক্রম অনেক পিছিয়ে পড়েছে। তার কারনে দীর্ঘ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চলছে। এছাড়া অনুমোদন হওয়ার পরেও কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো হচ্ছে না। এরকম হাজারো অনিয়ম করে বেড়াচ্ছেন তিনি। আমির আরো বলেন ইউনিভার্সিটি অফ গ্লোবাল ভিলেজ নামে আমাদের দুজনের আরো একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেটিও একই ভাবে ইমরান দখল করে নিয়েছে।

কোন মিটিংয়েই আমাকে ডাকে না। আয় ব্যয় সব কছুই তার নির্দেশে নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে পরিচালক ইমরান চৌধুরীকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে ইনফ্রার যাত্রা শুরুর কয়েক বছরের মধ্যে নগরী ও নগরীর বাইরে এবাধিক বাড়ি,গাড়ি ও জমির মালিক হয়েছেন ইমরান চৌধুরী।

২০০৩ সালে বরিশালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইনফ্রা পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউট। শুরুতে অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও সুষ্ঠু একাডেমিক পরিবেশ ও শিক্ষার্থী উপযোগী সব ধরনের ব্যবস্থা থাকায় ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। এক পর্যায়ে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রতি শিক্ষাবর্ষে হাজারের উপরে শিক্ষার্থী ভর্তি হতে শুরু করে। মন্ত্রনালয় শিক্ষার্থী কোঠাও বৃদ্ধি করে দেয়।

হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের পদচারনায় মুখোরিত হয় ক্যাম্পাস। কিন্তু ২০১৫ সালের পরই দুই মালিকের দ্বন্দ্ব দানা বাঁধতে শুরু করে। যা এই ৭ বছর শেষে প্রকট আকারে রুপ নিয়েছে। মালিকানা দ্বন্দ্বের প্রভাবে চলতি শিক্ষাবর্ষে এক হাজার ৫০ আসনের বিপরীতে মাত্র ৩৬০ জন শিক্ষার্থী ১২ অনুষদের বিপরীতে ভর্তি হয়েছে।

Check Also

দেশে আমদানি না করেই ২‘শ থ্রি হুইলারের বিআরটিএ‘র রেজিস্ট্রেশন!

দেশে আমদানি না করেই ২‘শ থ্রি হুইলারের বিআরটিএ‘র রেজিস্ট্রেশন!

দেশে আমদানি না করেই ২‘শ থ্রি হুইলারের বিআরটিএ‘র রেজিস্ট্রেশন! ।। এম. লোকমান হোসাঈন ॥ জাল-কাগজপত্র …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *