ইরানের হামলায় গাজা থেকে কি মনোযোগ সরাবে ইসরায়েল?

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের সপ্তাহান্তে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পর ইসরায়েল দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে তার বহুল প্রত্যাশিত সামরিক অভিযান বিলম্বিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে টাইমস অব ইসরায়েল।

দুইটি অজ্ঞাত ইসরায়েলি সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, আইডিএফ সোমবার থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার আদেশ জারি করা শুরু করবে। সেই পরিকল্পনাগুলো ব্যাকবার্নারে রাখা হয়েছে।

ইসরায়েলি ব্রডকাস্টার কানও একই তথ্য জানিয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি অস্বীকার করেছে।

নেতানিয়াহু বেশ কয়েকবার দাবি করেছেন যে, তিনি রাফা অপারেশনের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন এবং সম্প্রতি বলেছেন যে এর জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

কিন্তু এর কয়েক ঘন্টা পর প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট তার মার্কিন প্রতিপক্ষ লয়েড অস্টিনকে বলেছিলেন যে, রাফায় অভিযানের জন্য কোনও তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি, কারণ আইডিএফ এখনও কীভাবে রাফাতে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১৪ লাখ ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে নেবে তার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার জন্য কাজ করছে।

এদিকে এক প্রতিবেদনে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কৌশলগত পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক পরিচালক শ্লোমো ব্রম মনে করেন, ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের বড় ধরনের সংঘাত লাগলে তার জেরে গাজা যুদ্ধের সমাপ্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গাজা যুদ্ধ বর্তমানে ছয়মাসে পড়েছে। ইরানের সঙ্গে আরও সরাসরি সংঘাত গাজায় যুদ্ধপরিস্থিতিকে বদলে দেবে কি না তা নিয়ে বিভক্ত ইসরায়েলি সামরিক বিশেষজ্ঞরা।

কিছু বিশ্লেষক বলছেন, ইসরায়েল ইরানের ওপর বড় আকারের আক্রমণ চালাবে কি না তার ওপর নির্ভর করবে গাজার পরবর্তী পরিস্থিতি কী হবে। আবার অনেকের মতে, রোববারের হামলায় গাজা উপত্যকার ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে কোনো পরিবর্তন আসবে না।

অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কৌশলগত পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক পরিচালক শ্লোমো ব্রম বলেন, ইসরায়েল যদি ইরানের ওপর বড় ধরনের পালটা আঘাত করে, তাহলে একটি বহুমুখী যুদ্ধ শুরু হতে পারে। এতে করে ইসরায়েলকে গাজা থেকে মনোযোগ সরিয়ে ফেলতে হতে পারে।

বড় ধরনের আঞ্চলিক সংঘাতের বিষয়ে জেনারেল ব্রম বলেন, ইসরায়েল হয়তো রাফা আক্রমণের পরিকল্পনা কিছুটা পিছিয়ে দিতে পারে। ইসরায়েলের মতে, রাফা হচ্ছে হামাসের সর্বশেষ ঘাঁটি। একাধিক রণাঙ্গনে যুগপৎ, তীব্র যুদ্ধ আমাদের জন্যও স্বস্তিকর কিছু হবে না।

রাফায় অভিযান চালানো থেকে পিছিয়ে আসতে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। তা সত্ত্বেও দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেখানে পদাতিক সেনা পাঠানোর শপথ করেছেন। রোববার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, রাফা আক্রমণে আইডিএফ-এর পরিকল্পনায় কোনো প্রভাব ফেলবে না ইরানের হামলা।

জেনারেল ব্রম মনে করেন, ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের বড় ধরনের সংঘাত লাগলে তার জেরে গাজা যুদ্ধের সমাপ্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এ পদ্ধতিতে চলমান যুদ্ধ শেষ হতে হলে ইসরায়েল, ইরান, হামাস ও হিজবুল্লাহর অংশগ্রহণে বড় ধরনের যুদ্ধবিরতির দরকার হবে।

রোববার বৈঠকের পর আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি ইসরায়েলের যুদ্ধ মন্ত্রিসভা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইরানের হামলার জবাব দেবে ইসরায়েল। তবে কীভাবে এবং কখন এ জবাব দেওয়া হবে, তা নিয়ে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের মধ্যে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

Check Also

রাফায় ইসরায়েলি হামলায় একই পরিবারের ৯ জনের মৃত্যু

ফিলিস্তিনের রাফায় ইসরাইলি হামলায় একই পরিবারের ৯ সদস্য নিহত হয়েছেন। তবে বেঁচে গেছে ওই পরিবারের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *