সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটেছে বরিশালে। একই সাথে বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের প্রতি এমপি ও মেয়রের সমর্থন নিয়ে প্রতিপক্ষের সব অপপ্রচারও বন্ধ করে দিলেন খোকন সেরনিয়াবাত ও জাহিদ ফারুক শামীম এমপি’র নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদের নেতৃবৃন্দ।
শনিবার সকাল এগারোটায় বরিশাল সার্কিট হাউসের বিপরীতে খোকন সেরনিয়াবাত ও জাহিদ ফারুকের নির্বাচনী কার্যালয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বসে উপজেলার ১০ ইউনিয়ন থেকে আগত ২৫ জন করে ২৫০ জন প্রতিনিধির সাথে সরাসরি কথা বললেন উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী নিঃস্বার্থ ও ত্যাগী যুবলীগ নেতা মাহমুদুল হক খান মামুন।
এ সময় আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত এবং পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম এমপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী আইনজীবী আফজালুল করিম স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নিষেধাজ্ঞার কারণে এবং নির্বাচন কমিশন বিধিনিষেধ মেনে এমপি, মন্ত্রী ও মেয়রগণ সারাদেশের কোথাও উপজেলা চেয়ারম্যানদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। যে কারণে আমাদের এই মতবিনিময় সভার এখানে আয়োজন করা হয়েছে। এই কার্যালয় থেকেই বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে এবং জাতীয় নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুককে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী করা হয়েছে। একই নির্বাচন কমিটির সমর্থন এখন উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী খান মামুনের প্রতি। এ থেকে এটা পরিষ্কার যে মেয়র ও প্রতিমন্ত্রীর ছবিসহ ব্যানার পোস্টার ছাপার অধিকার শুধু খান মামুনের। অন্য যারা এটা করছেন তারা প্রতারণা করছেন বলে একযোগে সহমত পোষণ করেন উপস্থিত খোকন সেরনিয়াবাত ও জাহিদ ফারুক শামীম নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য আইনজীবী কেভিএস আহম্মেদ কবীর, আনিসুদ্দিন শহীদ, লস্কর নুরুল হকসহ অনেকেই।
এসময় চরমোনাই, চরবাড়িয়া, জাগুয়া, চরকাউয়া, চাঁদপুরা, কাশিপুর ও কড়াপুরসহ বরিশালের সদর উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও মহানগর আওয়ামী লীগের প্রায় ৫০০ নেতাকর্মী এতে উপস্থিত ছিলেন।
আগত নেতাকর্মী ও ইউনিয়ন প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্য করে খান মামুন বললেন, আপনাদের সেবা করার সুযোগ খুঁজেছি আমি সবসময়। বংশপরম্পরায় এটা আমাদের পারিবারিক রোগ বলেতে পারেন। আমার বাবা প্রয়াত শামসুল হক এই বরিশালের ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর ছিলেন। কতশত মানুষের ঠিকানা গড়ে দিয়েছেন তিনি এই বরিশালে। আমার বড় ভাই শহীদুল্লাহ আওয়ামী লীগ করতেন। ১৯৮১ সাল থেকে আমি বিএম কলেজে ছাত্রলীগের ভিপি ছিলাম। তিল তিল করে আজকের এই অবস্থানে এসেছি। যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে আছি। জেল খেটেছি। ২০০৮, ২০১৩ ও ২০১৮ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে চেষ্টা করেছিলাম। দল থেকে মনোনয়ন পাইনি। এবার কেন্দ্রীয় সহ স্থানীয় শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুরোধে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতা করছি। এভাবে হলেও বরিশালবাসীর সেবা করার একটা সুযোগতো পাবো। আশাকরি আপনারা এবং গ্রামবাসী আমাকে সে সুযোগ দেবেন।
খান মামুন আরো বলেন, বিগত সিটি করপোরেশন ও জাতীয় নির্বাচনে আমার ভূমিকা আপনারা দেখেছেন। মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম এমপির ভালোবাসা কার সাথে তাও আপনাদের কাছে এখন স্পষ্ট হয়েছে। তাই আপনারা তাদের যেভাবে জয়ী করেছেন, একইভাবে আমাকে জয়ী হতে সাহায্য করুন। আমি বাকীটা জীবন আপনাদের সেবক হয়েই কাটাতে চাই বলে দাবী করেন খান মামুন।
মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মহিউদ্দিন বাবুলের সভাপতিত্বে ১০ ইউনিয়ন থেকে আগত ২৫০ জন প্রতিনিধি তাদের বিভিন্ন অভিযোগ ও পরামর্শ তুলে ধরেন। এসময় আলোচনায় মতামত প্রকাশ করেন চরমোনাই ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম মাষ্টার, চাঁদপুরা ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন, সাবেক ইউপি সদস্য কালাম মীরা, কড়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার বাবু। মতবিনিময় সভায় প্রতিটি ইউনিয়নের সভাপতি ও সম্পাদক সহ গুরুত্বপূর্ণ আওয়ামী লীগ নেতাদের উপস্থিতিতে তৃণমূল নেতাদের মধ্যে একটা ভিন্ন আনন্দ লক্ষ্য করা গেছে।
তাই সাহসের সাথে তারা বিগত নির্বাচনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বলেন, নির্বাচন শেষ হলে বিজয়ী প্রার্থীর সাথে সাধারণ এই কর্মীদের দেখা করা কঠিন হয়ে যায়। যার অন্যতম প্রমাণও এই মুহূর্তে এই সিটিতেই চলমান রয়েছে বলে দাবী করেন তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারপরও সর্বজন স্বীকৃত নিরীহ ও ভালোমানুষ খান মামুন এর পক্ষে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন সবাই। বিগত সিটি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই ঐক্যবদ্ধ হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে খান মামুন কে জয়ী করার প্রতিশ্রুতি দিলেন ইউনিয়ন পরিষদের ১৪৭ গ্রামের ২৫০ প্রতিনিধি । আর এই প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেন রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার বাবু ও চাঁদপুরা ইউনিয়নের কালাম মীরা।
তাদের নেতৃত্বে ৫০ জনসহ জাগুয়ার সাইদুল সিকদার, চড়বাড়িয়ার প্রখ্যাত আওয়ামী লীগ নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ আনিছুর রহমান, টুঙ্গিবাড়িয়ার নাসির মোল্লা চরকাউয়ার নান্টু মেম্বার ও কাশীপুর থেকে প্রতিনিধিরা এই মতবিনিময় সভায় তাদের মতামত প্রকাশ করেন। প্রতিটি ইউনিয়নে নিজস্ব কমিটি গঠন করে খান মামুন এর জন্য প্রচারণা চালাতে পরামর্শ দেন বক্তারা। পৃথক বক্তব্যে তৃণমূলের এই প্রস্তাব সমর্থন করেন আইনজীবী আফজালুল করিম সহ নির্বাচন পরিচালনা কমিটি নেতৃবৃন্দ।
এসময় সৈয়দ আনিছুর রহমান দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, আমি মুলধারার রাজনীতিতে বিশ্বসী। তারপরও এই বরিশালের উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে মাহমুদুল হক খান মামুন এর বিকল্প নেই বলে জানান তিনি।
আগামী ৮ মে বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান – ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরই ধারাবাহিকতায় সদর উপজেলার ১০ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সাধারণ মানুষের নজর কাড়তে জোড় প্রতিযোগিতায় নেমেছেন চার জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। এদের কেউ প্রধানমন্ত্রীর ছবি সাথে নিয়ে, কেউ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বরিশাল এক আসনের এমপি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর ছবি আবসর জাহিদ ফারুক শামীম এমপির ছবি সহ ব্যানার পোস্টার ঝুলিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
তিনজন প্রার্থী নিজেকে মেয়র ও প্রতিমন্ত্রীর সমর্থক দাবী করলে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে আইনজীবী লস্কর নুরুল হক বললেন, এই মতবিনিময় সভার আয়োজন দিয়ে সেই বিভ্রান্তি দূর হয়ে গেছে। মেয়র ও প্রতিমন্ত্রী কাকে সমর্থন করবেন তা এখন স্পষ্ট হয়েছে বলে জানান তিনি।