ঐতিহ্য ধরে রেখেছে বরিশালের সন্দেশ মোল্ডস
ঐতিহ্য ধরে রেখেছে বরিশালের সন্দেশ মোল্ডস

ঐতিহ্য ধরে রেখেছে বরিশালের সন্দেশ মোল্ডস

ঐতিহ্য ধরে রেখেছে বরিশালের সন্দেশ মোল্ডস > হাজার বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে বরিশালের সন্দেশ মোল্ডস > মোঃ ইমন খন্দকার হৃদয় ।। বাঙালির আবেগ ইতিহাসে জড়িয়ে থাকে তার সংস্কৃতিতে আর সেই সংস্কৃতির বিরাট একটি অংশ জুড়ে আছে ‘মৃৎশিল্পে’। ‘ মৃৎ’ শব্দের অর্থ মাটি এবং’ শিল্প ‘শব্দের অর্থ নান্দনিক কিছু।
প্রাচীনকাল থেকেই মাটির থেকে তৈরি এইসব জিনিস ব্যবহার করে আসছিল এই উপমহাদেশের লোকজন। যে শিল্পের সাথে ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি জড়িত সেই শিল্পই আজ বিলুপ্তির পথে।
একটা সময় গ্রাম-বাংলার মানুষের উনুঁনের হাড়ি থেকে শুরু করে খাওয়ার পাত্রটি ছিল মাটির।কিন্তু বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় দেখা যায় না সেই চিত্র। কালের গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া সেই সংস্কৃতি ধরে রেখেছে বরিশালের “সন্দেশ মোল্ডস”।
যারা মাটি থেকে তৈরি বিভিন্ন ছাচঁ যেমন: সন্দেশ ছাচঁ,আমস্বও্ব ছাচঁ, পিঠাপুলি ছাচঁ ইত্যাদি তৈরি করে আসছে। হারিয়ে যেতে বসা এই সকল ছাচঁ ভারত ও বাংলাদেশের একমাত্র তারাই তৈরি করে আসছে।
বিভিন্ন ছাচঁ তৈরি করা এ পাশাপাশি আরো মাটি দিয়ে তৈরি মাটির বাসন -কোসন, প্রদীপ, আধুনিক ছোঁয়া দিয়ে মাটির তৈরি ‘ডিনার-সেট’, পশু -প্রাণীর অবয়ব, দেব-দেবীর মুখের অবয়ব,ফুলদানী, মৃৎ নকশা ইত্যাদি।
সন্দেশ মোল্ডসের শিল্পীদের হাতে তৈরি এইসব নৈপুণ্য এবং বাহারি নকশা মনমুগ্ধকরে মাটি প্রিয় অনেক মানুষদের। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সন্দেশ মোল্ডসের পণ্য দেশ ছাড়িয়ে ভারত,আমেরিকা,লন্ডন, মালয়েশিয়া ইত্যাদির দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
যা থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে। এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করে প্রায় ৬ জন কারিগর। তাদের উপার্জিত অর্থ দিয়েই তাদের সংসার চলছে। সন্দেশ মোল্ডসের স্বত্ত্বাধিকারী চাকুরি ছেড়ে আসা উদ্যমী এক নারী প্লাবনী ইয়াসমিন। মাটির প্রতি ভালো লাগা থেকে মাটি দিয়ে কিছু করার উদ্যোগ নেন, এই উদ্যেক্তা। যার ফলশ্রুতিতে মাত্র এক বছরে ব্যবসার সফলতা লাভ করেন।
হাজার বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে বরিশালের সন্দেশ মোল্ডস
হাজার বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে বরিশালের সন্দেশ মোল্ডস
মাত্র এক হাজার টাকার মূলধন দিয়ে শুরু করেছিলেন এই ব্যবসায়। যা এখন লক্ষ টাকায় ছাড়িয়ে গেছে। মাসে এখন তিনি লক্ষ টাকা আয় করেন। সন্দেশ মোল্ডসের নিজস্ব একটি ছোট কারখানা রয়েছে।
যা মাদারীপুরের কালকিনিতে অবস্থিত। এই স্থান থেকেই মাটি পুড়িয়ে তৈরি করা হয় এসব নান্দনিক পণ্য। সন্দেশ মোল্ডস অনলাইনের মাধ্যমে তাদের ব্যবসায় পরিচালিত করে থাকে।
এছাড়াও দেশের নানা স্থানে বিভিন্ন মিষ্টির দোকানের ময়রা, সুইটহার্ট দোকানের ক্রেতা, মৃৎ প্রিয় বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ অনলাইনে ও সরাসরি এসে অর্ডার করে থাকে। গত বছরে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি মাত্র এক বছরে সকল কে ছাড়িয়ে অনেকটা সফল হয়েছেন। যা প্রমাণ করে তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা থেকে নানা পুরস্কার অর্জনের চিত্র দেখে।
সন্দেশ মোল্ডস ২০২২ সালে বরিশালে অনুষ্ঠিত ‘মৃৎশিল্প সম্মেলন ও সম্মাননা অর্জন করে, বরিশালে বিভাগীয় এসএমই পণ্য মেলা -২০২৩ এ অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে, উদ্যোক্তা- উন্নয়ন প্রোগ্রাম ব্যাচ- বরিশাল থেকে ‘সেরা উদ্যোক্তা’ হওয়ার পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করে, যমুনা ব্যাংক -বাংলাদেশ ব্যাংক সমন্বয় আয়োজিত ” উদ্যেক্তা প্রশিক্ষণ ও উন্নায়ন” একটি সেমিনার থেকে সেরা উদ্যোক্তা পুরস্কার অর্জন করে।
এছাড়া নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়, এই প্রতিষ্ঠানটি। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ‘সন্দেশ মোল্ডস’ এর স্বত্ত্বাধিকারী প্লাবনী ইয়াসমিন সময় বার্তাকে বলেন,” মাটির প্রতি ভালোবাসা, দেশ ও সংস্কৃতির প্রতি টান থেকেই এই উদ্যোগের চিন্তা আমার মাথায় আসে।
তারপর হাতে থাকা সামান্য অর্থ দিয়ে ব্যবসায় শুরু করি। এই শিল্পের ইতিহাস ও ছাচঁ সম্পর্কে জানতে আমি দেশের নানা স্থানে গিয়েছি,সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করেছি।’ মৃৎ’ শিল্পকে একটু নতুনের ছোঁয়া দিয়ে ভিন্ন ধরনের পণ্য বাজারে আনি।
যার প্রতি ক্রেতাদের ব্যাপক চাহিদা লক্ষ করলাম। তাই অল্প কিছুদিনের ভিতর আমি আশার আলো দেখি”। সন্দেশ মোল্ডস এখন পর্যন্ত কয়েকবার সরকারকে ভ্যাট -ট্যাক্স দিয়েছে। তবুও প্রাপ্ত অনেক সেবা সরকার থেকে পায়নি।
হাজার বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে বরিশালের সন্দেশ মোল্ডস
হাজার বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে বরিশালের সন্দেশ মোল্ডস
সরকারের প্রতি আক্ষেপ করে তিনি বলেন,” আমাদের এই শিল্পটি হারিয়ে যেতে বসা এক শিল্প কিন্তু এতে জড়িয়ে আছে আমাদের ইতিহাস। এই শিল্পের প্রতি দেশ – বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
সরকার যদি সঠিক নজরদারী করতো তবে এই শিল্প আরো অগ্রগতি লাভ করত এই শিল্প।এই শিল্পকে বড় করতে পারলে অনেক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
যার ফলে বেকারত্ব অনেকাংশে হ্রাস পাবে। এই শিল্প বাহিরের দেশে রপ্তানি করতে পারলে, প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। তাতে করে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকবে।
কিন্তু সরকার এসকল জানা সত্ত্বেও আমাদের প্রতি তেমন আগ্রহ বা সহযোগিতার হাত চোখে পড়ে না। তাই আমি চাই সরকার যেন আমাদের এই শিল্পের দিক বিশেষ নজর দেয়”।
সন্দেশ মোল্ডসে কর্মরত শ্রমিক উমা বিশ্বাস সময়ের বার্তাকে বলেন,” আমি আগে কর্মের অভাবে পরিবার নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় ছিলাম।
এখানে একটি কাজ পাই।পরে মাটির নানা কাজ করে, প্রাপ্ত বেতন দিয়ে মোটামুটি ভালো ভাবে আমার সংসার চলছে”। সন্দেশ মোল্ডস ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মৃৎ শিল্প কে বিশ্বের কাছে পরিচিত করতে চায়।

নতুন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে, আধুনিকতার সংমিশ্রণে নতুন মাটির পণ্য তৈরি করে,সেই পণ্য পৌঁছে দিতে চায় ; বিশ্বের মাটি প্রিয় মানুষদের কাছে। সরকার যদি মৃৎ শিল্পের প্রতি বিশেষ নজর দেয় এবং মৃৎ শিল্পের সাথে জড়িত যেসকল কুমার,পাল,উদ্যোক্তা,

শ্রমিক ইত্যাদি ব্যক্তিবর্গ তাদের কে আধুনিক প্রশিক্ষণ, আর্থিক সহযোগীতা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে তবেই কিছুটা হলেও বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে মৃৎ শিল্প। এই শিল্পের সাথে যেহেতু জড়িয়ে আছে হাজার বছরের বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্য তাই এই শিল্পর প্রতি আগ্রহী হওয়া উচিত সাধারণ মানুষ কে।
প্লাস্টিক, মেলামাইন,এলুমিনিয়ামের ছোবঁলে বিলুপ্ত হতে বসা,এই শিল্প রক্ষায় কাজ করতে সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোথ জানান বিশিষ্ট জনরা।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

Check Also

দেশে আমদানি না করেই ২‘শ থ্রি হুইলারের বিআরটিএ‘র রেজিস্ট্রেশন!

দেশে আমদানি না করেই ২‘শ থ্রি হুইলারের বিআরটিএ‘র রেজিস্ট্রেশন!

দেশে আমদানি না করেই ২‘শ থ্রি হুইলারের বিআরটিএ‘র রেজিস্ট্রেশন! ।। এম. লোকমান হোসাঈন ॥ জাল-কাগজপত্র …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *