আসামি গ্রেফতারের পরে অসহায় পরিবারকে খাবার দিলেন পুলিশ। ওই পুলিশ বলছেন আসামী যতদিন জামিন না পাবে তত দিন তার পক্ষ থেক্ষে খাদ্য সহায়তা করবেন ওই এএসআই জাহিদ।
ঘটনাটি হুবহু তুলে ধরা হলোঃ
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামি গ্রেফতারের পর ব্যাথিত হয়ে তার বাড়িতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিলেন মানবিক পুলিশ এ এস ই জাহিদ। আসমির পরিবার ও থানা সূত্রে জানা যায় ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামির নাম মরিয়ম বেগম। বয়স ৩৮ বছর।
একজন অসহায় গৃহবধূ। এতো অসহায় না দেখলে কেউ বুঝতেই পারবেনা। তিনি ৩ সন্তানের জননী। এই দরিদ্র মায়ের বাড়ি উপজেলার পশ্চিম সেনের টিকিকাটা গ্রামে। স্বামী জাকির হোসেন ওরফে সুতা জাকিরের কারণে আজ তিনি নিঃস্ব।
ব্যবসার জন্য স্ত্রীকে জামিনদার করে মঠবাড়িয়া ব্রাক ব্যাংক থেকে জাকির হোসেন ২০ লাখ টাকা ঋণ নেয়। একে একে এই উপজেলার বিভিন্ন এনজিও থেকে আরও ৩০ লাখ টাকা ঋণ উত্তোলন করেন সুচতুর জাকির। গোপনে বিক্রি করে দেয় সব জমিজমা।
পরে ২০১৫ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করে মঠবাড়িয়া থেকে পালিয়ে যায়। পরে জাকির ও তার প্রথম স্ত্রী মরিয়মের বিরুদ্ধে পিরোজপুর অর্থ ঋণ আদালতে এনজিওর পক্ষ থেকে মামলা রুজু করা হয়। মামলা নং-০৩/১৭।
সেই সময়ে মরিয়ম বেগম মাথা গোঁজার শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে সাজানো সংসার ছেড়ে ৩ জন সন্তান নিয়ে নানা বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সেখানে থেকে অন্য মানুষের ঘরে ঘরে ঝিয়ের কাজ করে ও কাঁথা সেলাই করে সংসার চালাতে থাকেন। এ কাজে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা মরিয়ম বেগমের।
তিনিসহ বড় মেয়ে শারমিন আক্তার (১৮), ছেলে রুম্মান (১১) ও ছোট মেয়ে জান্নাতি আক্তার সংসারের এ অবস্থায় কোনমতে বেঁচে আছেন। বেশির ভাগ দিনই মা এবং বড় মেয়ে ক্ষুধা নেই বলে ঘরে যে খাবার থাকে তা রুম্মান ও জান্নাতিকে খাইয়ে দিয়ে তারা দু’জন অনাহারে থাকেন।
এদিকে ওই মামলায় আদালত থেকে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয় স্বামী-স্ত্রীর নামে। স্বামী দীর্ঘদিন ধরে পলাতক। মরিয়ম বেগম আছেন এলাকাতেই। সোমবার (৩০ আগস্ট) মঠবাড়িয়া থানার সহকারী পুলিশ পরিদর্শক জেন্নাত আলী, উপ-সহকারী পুলিশ পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম ও লাবনী আক্তার ওয়ারেন্টের আসামি মরিয়ম বেগমের বাড়িতে যান।
তার বাড়িতে তাকে পেয়ে যান পুলিশের ওই টিম। তবে মরিয়ম বেগমের সংসারের অবস্থা দেখে মনের মানবিকতার ভিতরটায় নাড়া দেয় এএসআই জাহিদুল ইসলাম জাহিদের। মরিয়ম বেগমকে থানায় নিয়ে যাবার সময় তার সন্তানরা যখন কান্নারত অবস্থায় বলতে ছিলো ‘আমরা এখন থাকবো কিভাবে, খাবো কি, ঘরেতো কিছুই নেই। আমাদের মাকে ছেড়ে দেন। মা কিছু করে নাই।’
এই কথাগুলো তখন এএসআই জাহিদের কানে বিষাদের সুরের মতো বাজতে ছিলো। কি আর করার ওয়ারেন্টের আসামি। আদালতের আদেশ তামিল করতেই হবে।
তাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মরিয়ম বেগমকে থানায় নিয়ে আসা হলেও তাৎক্ষনিক মঠবাড়িয়া বাজার থেকে ওই পরিবারের জন্য এক মাসের চাল, ডাল, তেল, আলু, লবন, সাবান, পেয়াজ, মরিচ, হলুদ, চিনি, চা সহ বিভিন্ন খাদ্য সহায়তা নিয়ে হাজির হন এএসআই জাহিদ।
এ বিষয় মরিয়ম বেগমের সন্তানরা বলেন জাহিদ স্যার আমাদের পেটে খাবারের ব্যাবস্থা করে দিয়েছেন না হয় আমরা না খেয়ে থাকতাম কারন আমাদের মা ছাড়া সংসারের হাল ধরার মতো আর কেউ নেই, আমার মা নির্দোষ আমরা আদালতের কাছে মায়ের মুক্তি দাবী করছি।
- আরো পড়ুন: ওয়েব ডেভেলপার হবেন কেন?
- আরো পড়ুন: ফুলস্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কি?
- আরো পড়ুন: কিভাবে ব্যাক এন্ড ডেভেলপার হবো
এ বিষয়ে গনমাধ্যম কর্মীদেরকে জাহিদ জানান, মরিয়ম বেগমের সংসারের যে অবস্থা। তা দেখে আমার হৃদয় নাড়া দিয়ে উঠেছে। বাচ্চাদের আকুতি দেখে আমার চোখে পানি চলে এসেছে তার অবর্তমানে এই সংসারের আহার জোগার করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই যতদিন মরিয়ম বেগম জেল হাজতে থাকবেন, ততদিন তার রেশন দিয়ে এই পরিবারকে তিনি সহায়তা করে যাবেন।
উল্লেখ্য, পুলিশের এই অফিসার এর আগে বরিশালের বানারীপাড়া থানায় কর্মরত থাকার সময়ও বিভিন্ন সামাজিক কাজ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে পুলিশ বাহিনীকে সাধারণ মানুষের কাছে সেবার ক্ষেত্রে একধাপ এগিয়ে রেখেছিলেন। এদিকে পুলিশ সদস্যর এমন কর্মকান্ড দেখে প্রশংসায় ভাসছেন স্যোসাল মিডিয়ায়।
সূত্র: স্যোসাল মিডিয়া।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।