ঝালকাঠিতে সিমেন্টবোঝাই ট্রাকের চাপায় প্রাইভেটকার ও অটোরিকশার চাপা দেওয়ার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪ হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে কমপক্ষে ১৫ জন। নিহতদের মধ্যে ৪ শিশু, ৩ জন নারী ও পুরুষ রয়েছেন ৭ জন। তাঁদের বাড়ি রাজাপুর, ভান্ডারিয়া ও কাঠালিয়া উপজেলায়। আজ বুধবার দুপুর পৌনে ২টায় ঝালকাঠি শহরতলীর গাবখান সেতুর পূর্ব টোলপ্লাজায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ঝালকাঠী সদর হাসপাতাল, শেবাচিম হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসনের সূত্রে নিহতদের এ তথ্য জানিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত নিহতের পরিচয় প্রকাশ করেনি ঝালকাঠী সদর হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এদিকে দুর্ঘটনায় ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. রুহুল আমিনকে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দুর্ঘটনা পর ট্রাকচালক আল-আমিন (২৯) ও চালকের সহকারী নাজমুলকে (২২) আটক করা হয়েছে। আল-আমিনের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলায় এবং নাজমুলের বাড়ি খুলনা। আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
ঝালকাঠী জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল জানান, বরিশালে বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছিল একটি প্রাইভেটকার। এ ছাড়া তিনটি অটোরিকশা যাচ্ছিল শহরে। দুপুর পৌনে ২টার দিকে গাবখান টোলপ্লাজায় টোল দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল একটি প্রাইভেট কার ও তিনটি অটোরিকশা। এ চারটি যানবাহন ঝালকাঠি শহরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল।
এ সময় দ্রুতগতিতে আসা একটি সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক (খুলনা মেট্রো ০৯৫৭) প্রাইভেটকার ও অটোরিকশাগুলোকে চাপা দেয়। এতে দুমড়ে মুচড়ে যায় প্রাইভেটকার ও অটোরিকশাগুলো। ঘটনাস্থলেই মারা যায় অটোরিকশার ৬ যাত্রী। পরে প্রাইভেটকার থেকে আরও ৮ যাত্রীকে উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ৮ জনের মৃত্যু হয়। তিনি জানান, ১৪ জনের মধ্যে শিশু রয়েছে ৪ জন, নারী ৩ জন ও পুরুষ ৭ জন। নিহতদের বাড়ি রাজাপুর, ভান্ডারিয়া ও কাঠালিয়া উপজেলায়।
স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের স্পেশাল অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় সিমেন্টবোঝাই ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহনগুলোর উদ্ধার কার্যক্রম চলমান আছে। এলাকাবাসী সহযোগিতায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা লাশ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে। পুলিশ ট্রাকটিকে জব্দ করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী গাবখান টোলের কর্মী আবুল বাশার বলেন, প্রাইভেটকার ও তিনটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা টোল দেওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। হঠাৎ করে পশ্চিম দিক থেকে আসা দ্রুত গতির ট্রাকটি প্রাইভেটকার এবং অটোকে চাপা দিলে কার ও অটো দুমড়ে মুচড়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে শুধু রক্ত আর কান্না।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ধারণা ট্রাকের ব্রেক ফেল করেছিল। এ কারণে টোল প্লাজায় ব্রেক না করেই সরাসরি প্রাইভেটকার ও অটোরিকশাকে চাপা দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।’
ঝালকাঠী জেলা সিভিল সার্জন ডা. জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে মৃতদের নাম ঠিকানা যাচাই বাছাই চলছে।
টোল প্লাজায় প্রাইভেট কারসহ কয়েকটি গাড়িকে চাপা দিল ট্রাক, নিহত ১১ টোল প্লাজায় প্রাইভেট কারসহ কয়েকটি গাড়িকে চাপা দিল ট্রাক, নিহত ১১।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম জানান, ঝালকাঠির গাবখান সেতু টোলপ্লাজায় সিমেন্টবোঝাই একটি ট্রাক তিনটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও একটি প্রাইভেটকারকে পেছন থেকে চাপা দেয়। দুর্ঘটনার তদন্তে ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. রুহুল আমিনকে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে মৃত ব্যক্তিদের প্রত্যেক পরিবারকে ৫ লাখ টাকা, পঙ্গুত্ববরণকারীদের তিন লাখ টাকা ও আহতদের এক লাখ টাকা করে দেওয়া হবে জানান তিনি।
ঝালকাঠি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঝালকাঠি ডিবি পুলিশ ট্রাকচালক ও চালকের সহকারীকে আটক করেছে।