প্রভাবশালীদের দখলে জেল খাল!(দেখুন ভিডিওসহ)

প্রভাবশালীদের দখলে জেল খাল!(দেখুন ভিডিওসহ)

প্রভাবশালীদের দখলে জেল খাল!(দেখুন ভিডিওসহ)।। মোঃ ইমন খন্দকার হৃদয় ॥ ধান-নদী-খাল তিনে বরিশাল ও বাংলাদেশের সবথেকে বেশি নদী রয়েছে বরিশালে। এই অঞ্চলের মানুষদের যোগাযোগের প্রধান পথ নদী ও খাল গুলো।

বরিশালের ঐতিহ্যবাহী ২৩ টি খালের ভিতরে অন্যতম একটি খাল  খাল বরিশাল জেল খাল যা নগরীর ২৭ নং ওয়ার্ড  থেকে শুরু হয়ে  দীর্ঘ ৭ কি.মি বয়ে বরিশালে কীর্তনখোলা নদী পর্যন্ত প্রবাহিত হচ্ছে।বরিশালের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই খালটি সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারীর অভাব  ও জনগণের সচেতনতার অবহেলায় খালটি আজ মৃতপ্রায়।

যে খালটি দিয়ে একসময় বড় বগ নৌযান চলাচল করতো, সেই খালটি আজ অবৈধ দখলদারদের ভাগাড়ে। খালটির ভিতরে পলিথিন-প¬াস্টিক, ময়লা -আবর্জনার স্তুপ থাকায়, খাল দিয়ে জোয়ার-ভাটার পানি চলাচল করতে পারছে না।

ফলে খালটি খুব অল্প সময়ে তার যৌবন হারিয়ে ফেলছে।বর্তমানে অল্প বৃষ্টিপাত হলেই নগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, দিনে দিনে মশার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে,রোগ-জীবাণুর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে, যার অন্যতম কারণ বরিশাল জেল খাল।

বরিশালের পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার প্রধান মাধ্যম বরিশালের জেল খাল,শহরের সকল ড্রেনের পানি ও বৃষ্টির পানি এই খাল দিয়ে চলাচল করে। নগরীর পোর্ট রোড,বাজার রোড,নতুন বাজার,

নথুল্লাবাদ বাজারের সকল ময়লা ও দূষিত পানি খালটিতে ফেলা হয়,পাশাপাশি চকের পুল, নাজির পুল, মোরকখোলার পুলে যারা ফুটপাতে  কাঁচামালসহ অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করে, তারা সকলেই এখানে ময়লা ফেলে,

এছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দা ও  অসচেতন জনগণ সকলে খালটিকে  ডাস্টবিনে পরিণত করেছে। বরিশালের গুরুত্বপূর্ণ এই খালটি কে ২০১৬ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক গাজী সাইফুজ্জামানের নেতৃত্বে “জনগণের জেল খাল; আমাদের পরিচ্ছন্নতা অভিযান” শ্লে¬াগানে বরিশালের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষদের কে সাথে নিয়ে  হাজার হাজার লোকের সমারোহে বরিশাল জেল খাল কে  পুনরুদ্ধার করা হয়।

প্রভাবশালীদের দখলে জেল খাল!(দেখুন ভিডিওসহ)

যা সারাদেশব্যাপী প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতেই খালটির অবস্থা আগের মত হয়ে যায়। ২০১৯  সালে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন জেলখাল কে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করলেও তা স্থায়ী রূপ ধারণ করতে পারেনি।

ফলে খালটি সকলের অবহেলায় নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে।এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বরিশালের জেলা প্রশাসক মোঃ জসিম উদ্দিন হায়দার দৈনিক সময়ের বার্তাকে বলেন,” প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত ” বরিশাল” এই অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী একটি খাল বরিশাল জেল খাল। কিন্তু সকলের অবহেলায় খালটি আজ মৃতপ্রায়।

যা খুবই দুঃখজনক!  বরিশাল জেল খাল পুনরুদ্ধারে বরিশাল জেলা প্রশাসন  বিগত বছরগুলোরে  চেষ্টা করেছে। ভবিষ্যতে জেল খাল  উদ্ধারে এই খালের সাথে আরো সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের সাথে সমন্বয় করে জেল খাল সহ আরো ৪৬  টি খালকে  পুনঃখনন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, খাল সৌন্দর্য বৃদ্ধি, খাল সংরক্ষণে ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।

বরিশাল জেল খালের সাথে  প্রায় ১১৭৬ জন অবৈধ দখলদার রয়েছে ও  তাদের নানা অবৈধ স্থাপনা।  সেইসব দখলদারদের তালিকা জেলা প্রশাসন ইতিপূর্বে তৈরি করেছে। খুব শীঘ্রই জেলা প্রশাসন  উচ্ছেদ অভিযান শুরু করবে। তিনি আরো বলেন,” চলতি বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে সাত কোটি টাকার খাল পুনরুদ্ধারের একটি প্রকল্প পাশ হয়েছে।

খুব শীঘ্র তারা ডিসেম্বর মাসে কাজ শুরু করবে, তাদের সহযোগীতা করার জন্য বরিশাল জেলা প্রশাসন হাত পেতে বসে রয়েছে,এছাড়াও এই কাজের সাথে সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষ বরিশাল সিটি কর্পোরেশন, বরিশাল জেলা পরিষদ, সহ সকল সংস্থাকে জেলা প্রশাসন সহযোগিতা করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত।এছাড়াও তিনি বরিশালবাসী কে জেল খাল রক্ষায় সকলকে সচেতন হওয়ার  আহ্বান জানান।

সাধারণ জনগণ কে  ময়লা-আবর্জনা  না ফেলার অনুরোধ জানান। শহরের সাধারণ নাগরিক ও সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষ সহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। বরিশাল জেলখালের প্রতি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা সত্বেও, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বিগত কয়েক বছরে তেমন কোনো উদ্যোগ

চোখে পড়ে না,এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদ সময়ের বার্তাকে বলেন,” বর্তমানে বরিশাল জেল খাল সহ আরো ৪৬ টি খালের  অবস্থা শোচনীয়।

বিগত বছরে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কয়েকটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হলেও  তা স্থায়ী হয়নি। তাই জেল খাল সহ আরো ৪৬ টি খাল পুনঃখনন, খাল সৌন্দর্যবর্ধন,খাল সংরক্ষণে বরিশাল সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ২০১৯ সালে ২৬’শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

যা এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যদি এই প্রকল্পটি পাশ হয় তাহলে খুব শীঘ্রই আমরা জেল খাল সহ অন্যান্য খাল পুনরুদ্ধার করতে পারবো বলে আশাবাদী।” বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, বরিশাল এর পক্ষ থেকে জেল খালসহ আরো ৬ টি খাল উদ্ধারে একটি প্রকল্প পাশ হয়। কিন্তু বরিশাল সিটি কর্পোরেশন স্থগিত করার নির্দেশ দেয়। যার ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা যেহেতু ২৬’শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি।  যার ভিতরে ওই ৭ টি খাল রয়েছে। তাই বিসিসির পক্ষ থেকে যেহেতু খালগুলো উদ্বারে পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও পানি উন্নায়ন বোর্ড বিসিসি কে পূর্বে জানায়নি।

তাই বিসিসির পক্ষ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে এই খালগুলো উদ্ধারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে সমন্বয় করে কাজ করা হবে”। নগরীর বেশ কয়েকটি স্থানে সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত ডাস্টবিন নেই, অনেক স্থানে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মীর যায় না, তাই বাধ্য

হয়ে অনেক সাধারন জনগণ খালের ভিতরে ময়লা-আবর্জনা ফেলে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সময়ের বার্তাকে বলেন,” নগরীর বেশ কয়েকটি স্থানে পারিপার্শ্বিক নানা সমস্যার কারণে বিসিসি নির্ধারিত ডাস্টবিন নেই। তবে সেই সমস্ত জায়গা গুলোতে আমাদের ডাস্টবিন দেওয়ার কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

ভবিষ্যতে সে সমস্ত জায়গা গুলোতে ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া শহরের প্রধান বাজারগুলোতে ডাস্টবিন থাকা সত্ত্বেও অনেক ব্যবসায়ী খালগুলোতে ময়লা -আবর্জনা ফেলে। এতে খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তাই খাল কে বাঁচানোর জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে”।

বরিশাল জেলখাল পুনরুদ্ধার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, জেল খাল সংরক্ষণে, পানি উন্নায়ন বোর্ডের কী ভুমিকা রয়েছে?  সে সম্পর্কে জানতে চাইলে, বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাকিব হোসেন

সময়ের বার্তাকে বলেন,” বাংলাদেশে নদী -নালা – খাল প্রাকৃতিক অমূল্য সম্পদ। তারই ধারাবাহিকতায় বরিশালের রয়েছে নদী-খালের বিপুল সমারোহ। যার ভিতর অন্যতম বরিশাল জেল খাল।

এই খাল সহ  আরো বরিশালের ৪৬ টি খাল সংরক্ষণে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বেশকিছু পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে যদি তা বাস্তবায়ন হয় । আশা করি আমরা এই খালগুলোকে উদ্ধার করতে সফল হব”।

পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বরিশাল জেল খাল সহ আরও ছয়টি খাল উদ্ধারে সাত কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাশ হয়েছিল কিন্তু তার কার্যক্রম কিছুই হয়নি। এমন প্রশ্নে তিনি সময়ের বার্তাকে বলেন,”  পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে খাল পুনঃখনন ও সংরক্ষণে একটি প্রকল্প পাশ হয়েছে কিন্তু বরিশাল সিটি কর্পোরেশন তা স্থগিত করার নির্দেশ দেয়।

যার ফলে খাল উদ্ধারে  আমরা কোনো কার্যক্রম শুরু করতে পারিনি। আমাদের মাননীয় পানি প্রতি-মন্ত্রী মহোদয়, তিনি এই জেল খাল সহ অন্যান্য খালগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করি খুব শীঘ্রই আমরা সকলের সহযোগিতায় কাজ শুরু করতে পারব “।

এছাড়াও তিনি বরিশাল জেল খাল রক্ষায় নগরবাসীর প্রতি ময়লা – আবর্জনা না ফেলার তাগিদ দেন। পিপলস সেভ এন্ড সোস্যাল ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন এর প্রতিষ্ঠাতা, নজরুল ইসলাম খাঁন ক্ষোভ প্রকাশ করে

সময়ের বার্তাকে বলেন, বরিশালের জেল খাল দিয়ে একসময়ে ছোট ছোট লঞ্চ চলাচল করতো।
বরিশাল জেল খালটি কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত সংস্কার করা। অন্যতয় বিলীন হয়ে যাবে।

বরিশালের জেলখালের  বর্তমান করুণ অবস্থা, সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা, জনগণের অসচেতনতা,  ভবিষ্যত বরিশালের পরিণতি,জেল খাল রক্ষায় সকলের করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বরিশাল নদী- খাল -পুকুর বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য সচিব

কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু সময়ের বার্তা কে বলেন,”বরিশালের প্রাণখ্যাত “বরিশাল জেল খাল”এই  খাল কে  পুনঃখনন করা, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, খাল সংরক্ষণে আমরা দীর্ঘদিন যাবত আন্দোলন করছি।

কিন্তু বাস্তবে তার ফল শূন্য। কয়েক মাস আগে জেল খাল সহ আরো ৭ টি খালের জন্য ৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাশ হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

খালকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে অনেক অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে, যা এখন ধোঁয়াশা। এই খালের কারণে শহরের জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, মশা,মাছি,রোগ,জীবাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।তবুও শহরের অসচেতন নাগরিক সেটি বুঝতে পারছে না।

https://www.facebook.com/SomoyerBartaOfficial/videos/514850343832924

তারা সকলে খালটি কে ডাস্টবিন বানিয়ে ফেলছে, এছাড়াও শহরের বেশ কয়েকটি বাজারের ব্যবসায়ী, ফুটপাতের ব্যবসায়ী, স্থানীয় বাসিন্দারা খালে ময়লা -আবর্জনা ফেলছে।তাই সকলের বোঝা উচিত এই খাল কে বাঁচানো না গেলে একসময় বরিশাল কে বাঁচানো যাবে না।

তাই সকলকে এই খালে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে খালকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

https://fb.watch/gfMhSO6nQD/

এছাড়াও তিনি খালের সাথে সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষ বরিশাল সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা পরিষদের খালগুলোর প্রতি এমন উদাসীনতাকে  দোষারোপ করেন। খাল পুনরুদ্ধারে  যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সকল কে অনুরোধ জানান।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

Check Also

দেশে আমদানি না করেই ২‘শ থ্রি হুইলারের বিআরটিএ‘র রেজিস্ট্রেশন!

দেশে আমদানি না করেই ২‘শ থ্রি হুইলারের বিআরটিএ‘র রেজিস্ট্রেশন!

দেশে আমদানি না করেই ২‘শ থ্রি হুইলারের বিআরটিএ‘র রেজিস্ট্রেশন! ।। এম. লোকমান হোসাঈন ॥ জাল-কাগজপত্র …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *