নানা অভিযোগে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বরিশাল অঞ্চলের উপপরিচালক আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন
নানা অভিযোগে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বরিশাল অঞ্চলের উপপরিচালক আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এমপিও বঞ্চিত বেসরকারী শিক্ষক/ কর্মচারী বিভাগীয় প্রতিরোধ কমিটি। শনিবার (৩০ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২ টায় বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি (বিআরইউ) বীর মুক্তিযোদ্ধা-শহীদ জননী সাহান আরা বেগম স্মৃতি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এমপিও বঞ্চিত বেসরকারি শিক্ষক/কর্মচারি বিভাগীয় প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ক আবদুল জববার খান সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিভাগীয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক আনোয়ার হোসেন শিক্ষকদের এই ফাইলগুলি দিনের পর দিন আটকে রাখেন, এমনকি তুচ্ছ কারনে ফাইলগুলি বাতিল করে দেয়া হয়। এর ফলে হাইস্কুলের এই শিক্ষকরা চাকুরী করলেও এমপিও থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন।
এসময় বঞ্চিত শিক্ষক মো: লিয়াকত আলী জমাদ্দার বলেন, ২০২৩ সালের ১লা জুন থেকে ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া উপজেলার মরিচবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি একই উপজেলার আমরাবুনিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু গত ৯ মাস যাবৎ তিনি কোন সরকারী বেতন ভাতা পাচ্ছেন না।
তিনি জানান ‘ আমি ৪টি প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করেছি, যতোবার নিয়োগ হয়েছে,ততবার নতুন করে এমপিও হয়েছে, কিন্তু এবার শেষবারে গত ৯মাস যাবৎ কোন বেতন ভাতা পাচ্ছিনা। ইতোমধ্যে আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে, আমি গাড়ী এ্যাক্সিডেন্ট করে আহত হয়ে অর্থ কস্টে থাকলেও এক টাকা বেতন ভাতা পাইনি’
‘আমি আমার ছেলের লেখাপড়া চালাতে পারছি না’-এর থেকে আর খারাপ কি অবস্থা হতে পারে?’- তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
মো. হুমায়ুন কবির, নলছিটির হাজী এম এ রশিদ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে নলছিটি পঞ্চগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২২ সালের ৭ জুলাই আসলেও প্রায় দুই বছর যাবৎ ধরে বেতন ভাতা পাচ্ছেন না।
তিনি জানান ‘ আগে বেতন ভাতা পেলেও নতুন প্রতিষ্ঠানে তিনি কোন বেতন ভাতা পাচ্ছেনা-’এনিয়ে উধ্বর্তন কতৃপক্ষকে জানালেও কোন কাজ হচ্ছেনা’
একই ভাবে, ঝালকাঠী জেলার নলছিটি, কাঠালিয়া, বরিশাল জেলার সদর , পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ সহ বরিশালের বিভিন্ন উপজেলার ৬০০ স্কুলের ১৫০০ শিক্ষক বেতন ভাতা থেকে গত ৬ মাস থেকে তিনবছর পর্যন্ত বঞ্চিত হয়ে আছে বলে, বিক্ষুব্ধ শিক্ষকদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। জুনিয়র পদ থেকে সিনিয়র পদ, বা এক স্কুল থেকে আরেক স্কুলে গেলে বিভাগীয় উপপরিচালক আনোয়ার হোসেনের কাছে আটকে যাচ্ছে ফাইল এর ফলে বেতন ভাতাও পাওয়া যাচ্ছেনা।
’ তার হয়রানি ও অনিয়মের কারনে আমরা বেতন ভাতা থেকে বঞ্চিত-আমরা আমাদের সংসার চালাতে পর্যন্ত পারছি না’ বলে জানান তারা।
বরিশাল শিক্ষক সমিতি বরিশাল আঞ্চলিক শাখার সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ জানান, বেসরকারী শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন বা স্কেল পরিবর্তন বিষয়ে ৩৮ ধরনের কাগজপত্র লাগে। এর ফলে এই প্রক্রিয়াটি জটিলতর রুপ নিয়েছে। তুচ্ছ কারন দেখিয়ে আবেদনগুলি বাতিল করায় শিক্ষকরা অসহায় হয়ে পড়ে তাদের বেতন ভাতা আটকে থাকে। দেশের অন্যানন্য অঞ্চলে এই বিষয়টির সুরাহা হলেও বরিশাল বিভাগে এটি আটকে দেন উপপরিচালক।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষক জামাল হোসেন জানান ‘ উপ পরিচালক এই ফাইলগুলি ওকে না করায় বাধ্য হয়ে ডিজি অফিসে ছোটাছুটি করে আমরা ২২ জনের ফাইল ওকে করতে পেরেছি, কিন্তু এখনও প্রায় দেড়হাজার শিক্ষক এই সমস্যায় পড়েছে।
ভান্ডারিয়া উপজেলার দারুল হুদা আদরশ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হাইস্কুলের শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান আমি ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর এখানে বদলী হয়ে আসলেও অদ্যাবধি বেতন ভাতা পাইনি।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা জানান, আমরা বেতন ভাতা না পলে অনশন ও শিক্ষা অফিসের কার্যালয় ঘেরাও করব-ঈদের পর আমরা এই কঠো কর্সূচী দিতে বাধ্য থাকবো।
মোফাজ্জেল হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সামিনা আফরোজ জানান, তার স্কুলের ৭ শিক্ষক কর্মচারীরা গত ২ বছর যাবৎ এমপিও ভুক্তি থেকে বঞ্জিত হচ্ছেন।। উপ পরিচালকের কাছে এমপিও ভুক্তির ফাইল আটকে থাকায় আমরা গত ২ বছর যাবৎ বেতন ভাতা পাচ্ছিন ‘।
উপপরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর আনোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাঅধিদপ্তর,বরিশাল অঞ্চল পরিচালক, প্রফেসর ড. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, হয়রানির বিষয়টা আমি শুনেছি। উপ পরিচালক আনোয়ার হোসেনের কাছে হাইস্কুলের এতো ফাইল আটকে আছে এটা আমিও জানিনা। তিনি জানান একজন শিক্ষক পূর্বে বেতন ভাতা পেতো-এখন কেন তাদের বেতন ভাতা বন্ধ থাকবে ? এটা কাম্য হতে পারে না। আমি এটি ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে তুলে ধরব।