বরিশালে শিশুদের খেলার মাঠে বাণিজ্য পুলিশের!
বরিশালে শিশুদের খেলার মাঠে বাণিজ্য পুলিশের!

বরিশালে শিশুদের খেলার মাঠে বাণিজ্য পুলিশের!

বরিশালে শিশুদের খেলার মাঠে বাণিজ্য পুলিশের! মোঃ ইমন খন্দকার হৃদয় ।। নগরীর কাউনিয়া ব্রাঞ্চ সংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী পুলিশ সেকশন মাঠ। একদা সময় এই মাঠে পুলিশের ফাঁড়ি ছিল পরে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা হয়। তাই সকলের কাছে পুলিশ সেকশন মাঠ হিসেবে সমাধিক পরিচিত।

মাঠটির পূর্বে রয়েছে দুইটি প্রাইমারি স্কুল, পশ্চিমে আশরাফিয়া জামে মসজিদ- মাদ্রাসা এবং মধ্যভাগে শুকতারা খেলাঘর আসরের কার্যালয়।এই সকল প্রতিষ্ঠানের শিশু-কিশোররা এই মাঠে খেলাধুলা করে। এছাড়াও ঈদের জামাত, জানাজা নামাজ সহ সাংস্কৃতিক- রাজনৈতিক -সামাজিক সকল অনুষ্ঠান এই মাঠে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

বি.সি.সি ২ ও ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জন্য একমাত্র ব্যবহৃত মাঠ এটি।সম্প্রতি এই মাঠে বরিশাল জেলা পুলিশের নেতৃত্বে একদল লোক একটি সাইনবোর্ড টানায় এবং তাতে লেখা বাণিজ্যিকভাবে এখানে স্টল ও গোডাউন ভাড়া দেওয়া হবে।জেলা পুলিশ দাবি করছে লিজ সূত্রে প্রাপ্ত এই জমির মালিক তারা।

তাই তারা বাণিজ্যিকভাবে এই জমি ব্যবহার করতে চায়।স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ বলছে এই জমি মূলত অর্পিত সম্পত্তি। তৎকালীন এক পুলিশ কর্মকর্তা দেশ ছেড়ে যখন কলকাতায় যান। তখন এই জমি শর্তমূলকভাবে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা শৈলশ্বর চক্রবর্তীর কাছে দিয়ে যান। পরে এলাকার সুবিধার্থে তৎকালীন ব্যক্তিবর্গ এলাকার সন্ত্রাস দমনে, অত্র এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করেন এবং ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ কে জমির কিছু অংশ দেয়া হয়।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরবর্তীতে ওই পুলিশ ক্যাম্পটি অন্যত্র জায়গায় স্থানান্তর করা হয়।এরপরে আর কখনো এই মাঠে পুলিশের কোন কার্যক্রম দেখা যায়নি। মাঠটি এলাকাবাসীর অতি প্রয়োজনীয় বিধায় অত্র এলাকায় মানুষজন প্রায় ৭০ বছর ধরে ব্যবহার করে আসছে। এই মাঠেই খেলাধুলা করে অনেক লোক আজ বৃদ্ব হয়েছেন।

তাই তাদের স্মৃতি বিজড়িত এই মাঠটি ছাড়তে কেউ রাজি নন।আছমত মাস্টার স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী শান্ত জানান,” আমি স্কুল টাইমে এবং বিকেলে আমার সহপাঠীদের নিয়ে এই মাঠে খেলাধুলা করি। কিন্তু এই মাঠটি পুলিশ নিতে চায়। যদি এই মাঠ না থাকে তাহলে আমরা কোথায় খেলব? তারা কি আমাদের মোবাইল গেমে আসক্ত করতে চায়? আমরা মোবাইল গেম খেলতে চাই না, আমরা মাঠে খেলতে চাই”।

স্থানীয় কাউন্সিলর অ্যাড. রফিকুল ইসলাম খোকন সময়ের বার্তাকে বলেন, ” এই মাঠের জমি পুলিশের কোন দালিলিক সম্পত্তি নয়। স্বাধীনতার আগে যিনি এই জমির মালিক ছিলেন, তিনি কাউকে এই জমির মালিকানা নির্দিষ্ট করে দিয়ে যান নাই।

যুগের পর যুগ এই মাঠটি অত্র এলাকার জনসাধারণ ও এলাকার শিশু- কিশোররা খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু পুলিশ সেখানে ভবন করতে চায় যা সত্যিই দুঃখজনক। আমরা জনপ্রতিনিধিরা জনগণের জন্য, পুলিশও জনগণের জন্য তাই জনগণের কথা চিন্তা করে পুলিশের উচিত বিবেচনা করা”।

বরিশালের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও ছড়াকার তপংকর চক্রবর্তী সময়ের বার্তা কে বলেন,” আমি ছোটবেলায় এই মাঠে খেলেধুলা বড় হয়েছি। এই মাঠ এলাকাটির জন্য খুবই দরকারি। যদি এই মাঠ না থাকে তবে অত্র এলাকার শিশু- কিশোররা ধ্বংসের মুখে পতিত হবে”।

মাঠ সংরক্ষণের জন্য গত শুক্রবার একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ সম্পর্কে মাঠ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক তৌছিক আহমেদ রাহাত সময়ের বার্তাকে বলেন,” কোন নির্দেশ ছাড়াই জেলা পুলিশ, এই মাঠ নিতে চায়।

বরিশাল জেলার ইতিহাস

বরিশাল জেলার ইতিহাস 

যদি এই মাঠ না থাকে তবে এই এলাকার হাজার হাজার শিশু -কিশোররা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা যেকোনো মূল্যে এই মাঠকে হাতছাড়া হতে দিব না। এই মাঠ রক্ষার জন্য ৪১ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই আমরা আন্দোলন করবো”।

কাউনিয়া ব্রাঞ্চ রোড সেকশন মাঠ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জনগণের স্বার্থে উৎসর্গ করে দেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নে জানতে চাইলে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম সময়ের বার্তাকে বলেন, “১৯৬৪ সাল থেকে জেলা পুলিশ লিজ সুত্রে এই জমির মালিক। আমরা প্রতি বছর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা সরকার কে খাজনা দিয়ে আসছি। এই জমির অনেক অংশ স্থানীয়রা মসজিদ- মাদ্রাসা নির্মাণ করে ব্যবহার করে আসছে। মাঠ সহ বাকি অংশে আমরা বাণিজ্যিকভাবে স্টল করব।

এলাকার জনগণ যদি তাদের স্বার্থে অত্র মাঠ ব্যবহার করতে চায় তবে তারা সরকারের কাছে আবেদন করুক। তারপরে সরকার কর্তৃক কোন নির্দেশ আসলে আমরা বিবেচনা করব।এই জমির এক ইঞ্চিও আমরা ছাড়ব না। খুব শীঘ্রই আমরা স্টল নির্মাণের কাজ শুরু করব”।

২ নং ও ৭ নং ওয়ার্ডের শিশু-কিশোররা খেলাধুলার মাধ্যমে মুক্ত পরিবেশে যেন বিকশিত হতে পারে। তাই শিশুদের স্বার্থে উক্ত মাঠটি যেন উৎসর্গ করে দেওয়া হয়। এমনটাই সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন অত্র এলাকার ব্যক্তিবর্গ।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

Check Also

দেশে আমদানি না করেই ২‘শ থ্রি হুইলারের বিআরটিএ‘র রেজিস্ট্রেশন!

দেশে আমদানি না করেই ২‘শ থ্রি হুইলারের বিআরটিএ‘র রেজিস্ট্রেশন!

দেশে আমদানি না করেই ২‘শ থ্রি হুইলারের বিআরটিএ‘র রেজিস্ট্রেশন! ।। এম. লোকমান হোসাঈন ॥ জাল-কাগজপত্র …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *