বি.এম কলেজে সন্ধ্যা হলেই গাঁজার আসর!
বি.এম কলেজে সন্ধ্যা হলেই গাঁজার আসর!

বি.এম কলেজে সন্ধ্যা হলেই গাঁজার আসর!

বি.এম কলেজে সন্ধ্যা হলেই গাঁজার আসর! ।। মোঃ ইমন খন্দকার হৃদয়।। বরিশালের ঐতিহ্যবাহী সরকারি ব্রজমোহন কলেজ। যা এই অঞ্চলের হাজার হাজার সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার বাতিঘর। আদর্শিক মানুষ গড়ার জন্য এই বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠিত হলেও মাদকের ভয়াল গ্রাসে আবর্তিণ কলেজটি। যা সন্ধ্যার পড়ে বি.এম কলেজে গেলে দেখা যায়।ক্যাম্পাসের নানা স্থানে গাঁজা – ইয়াবা সহ নিষিদ্ধ মাদক সেবনের দৃশ্য। কলেজের পশ্চিম কোনায়, ব্যবসায় প্রশাসন ভবনের এর পিছনে বসে চলে অবাধে মাদক সেবন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বসার সিট দখল করছে মাদকসেবীরা।

পশ্চিম কোনায় অবস্থিত প্রতিটি সিটে দেখা যায় তাদের মাদক গ্রহণের চিত্র। যার কারণে পশ্চিম কোনা কে জীবনান্দ দাশ পয়েন্ট না বলে বলা হয় গাঁজা পয়েন্ট। এছাড়াও কলেজের তিনটি কলা ভবন, ক্যাফেটেরিয়া, বিজ্ঞান ভবন গুলোর আশেপাশে বসে মাদক সেবন করে মাদকসেবীরা।

ক্যাম্পাসের স্পটগুলো বাদেও ক্যাম্পাসে অবস্থিত মুসলিম হল,জীবনানন্দ দাশ হল,অশ্বিনী কুমার হল, এইসকল হলেও মাদক সেবন করা হয় বলে জানিয়েছে হলে থাকা একাধিক শিক্ষার্থীরা। এসকল মাদকসেবীরা বেশিভাগই বহিরাগত। তারা মোটরসাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে এবং মাদক সেবন শেষে বেরিয়ে যায়।

কলেজে বিভিন্ন স্থানে সড়ক বাতি না থাকার কারণে অন্ধকারচ্ছন্ন স্থানগুলোতে বসে মাদকের আসর। সন্ধ্যার পড়ে যারা কলেজে হাটতে আসেন তারা গাঁজার গন্ধে ঠিকমত হাটতে পারেননা বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক পথচারী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পথচারী সময়ের বার্তা কে বলেন,” আমার ডায়বেটিস থাকার কারণে প্রতিদিন এখানে হাটি কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যাদের সন্ধ্যার পড়ে পড়ার টেবিলে থাকার কথা ছিল তারা এখানে অবাধে মাদক গ্রহণ করছে।

পশ্চিম দিক থেকে হাটাই যায়না মাদকের গন্ধে”। সুদীর্ঘ এই ক্যাম্পাসে যারা মাদক সেবন করতে আসে তারা নির্ভয়ে এখানে আসেন। যারা বেশিভাগ বহিরাগত আর এসব বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে আসতে সহায়তা করে কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।

এমন মন্তব্য করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলে থাকা এক শিক্ষার্থী জানান,’ আমাদের হলগুলোতে মাঝেমধ্যে বাহির থেকে অনেক লোক আসে যাদের ভিতরে প্রবেশ করায় আমাদের রুমমেটরা এবং তারা মিলে মাদক গ্রহণ করে”।

বি.এম কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী কিশোর কুমার শীল সময়ের বার্তা কে বলেন,” আমাদের ক্যাম্পাস কোন মাদকের আড্ডাখানা নয়। নানা সময় আমরা দেখি ক্যাম্পাসে মাদক গ্রহণ করতে। এতে করে আমাদের অনেক মেধাবী সহপাঠীরা মাদকের দিক ঝুঁকছে।

বি.এম কলেজে সন্ধ্যা হলেই গাঁজার আসর!

আমরা এর প্রতিবাদ করতে গেলে নানা ভয়-ভীতির স্বীকার হচ্ছি। মাদকের কারণে আমাদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও কলেজ প্রশাসনের উচিত কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। আমাদের ক্যাম্পাস মাদক মুক্ত হোক”।

বি.এম কলেজে মাদক বন্ধে কলেজ প্রশাসন কি ভূমিকা রাখছে? মাদক বন্ধে কলেজের অবস্থান কি? এমন প্রশ্নে সরকারি ব্রজমোহন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া সময়ের বার্তা কে বলেন,” মাদক একটি শিক্ষার্থী সহ গোটা দেশকে ধ্বংসের মুখে পতিত করতে পারে। বি.এম কলেজে অনেক শিক্ষার্থী সহ বেশিভাগ বহিরাগত সন্ধ্যার পড়ে এখানে মাদক গ্রহণ করে।

যা বন্ধে আমরা পুলিশ কে জানিয়েছি এবং কলেজ প্রশাসন থেকে মনিটারিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা আইন – শৃঙ্খলা বাহিনী সহ সকলের সহযোগীতা চাই, এই মাদক বন্ধে। মাদকের বিরুদ্বে কলেজ প্রশাসন জিরো টলারেন্স”।

বিভিন্ন জায়গায় সড়ক বাতি ও কলেজ গার্ড নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন,” আমরা অতি দ্রুত এসকল বিষয়ে উদ্যোগ নিব। এই কলেজের সকল সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ তারা যেন কোনমতেই মাদকের দিকে পা না বাড়ায়”।

বি.এম কলেজে মাদক নির্মূলের প্রসঙ্গে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আনোয়ার হোসেন সময়ের বার্তা কে বলেন,” বি.এম কলেজ সহ এর আশেপাশের এলাকায় আমাদের টিম গঠন করা আছে। যারা নিয়মিত টহল দেয়। প্রয়োজনে আমরা আরো নজরদারি বৃদ্ধি করবো। মাদকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ সবসময়ই জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে তাই যেভাবে হোক বি.এম কলেজে আমরা মাদক নির্মূল করে ছাড়বো।

এজন্য দরকার সকলের সহযোগিতা “। গত ২৭ শে অক্টোবর রাতে দৈনিক সময়ের বার্তা থেকে প্রাপ্ত তথ্য পেয়ে এ.এস. আই মোঃ কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে বি.এম কলেজে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। এসময়ে একজন কে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। বাকিসব মাদকসেবীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পালিয়ে যায়।

এ সম্পর্কে নতুনবাজার পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পুলিশ পরিদর্শক ( নিরস্ত্র) মোঃ শফিকুল ইসলাম রাজীব সময়ের বার্তা কে বলেন, ” আমরা মাঝেমধ্যে বি.এম কলেজে মনিটারিং করি এবং তাতে অনেক কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। আসামীদের তালিকায় বেশিভাগই বি.এম কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা থাকে। যা আমাদের জন্য অতি দুঃখজনক।

শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা না করে মাদকের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এতেকরে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। তাই এ ব্যাপারে বি.এম কলেজের শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা উচিত”।

তিনি বি.এম কলেজ প্রশাসনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, ” পুলিশের একার পক্ষে বি.এম কলেজে মাদক নির্মূল সম্ভব না। পুলিশের পাশাপাশি কলেজ প্রশাসনকে খুব কঠোর হতে হবে।

কিন্তু আমরা কলেজ প্রশাসনকে দুর্বলতার স্থানে দেখি। তাদের উচিত সন্ধ্যার পরে নিয়মিত মনিটরিং করা ও যে সকল স্থানে লাইট নেই তা প্রদান করা। কলেজে নিরাপত্তা রক্ষী দেয়া। তাদের সহযোগিতা করতে বিএমপি বদ্ধপরিকর “।

চেহারা সুন্দর করার দোয়া

এছাড়াও তিনি মাদক বন্ধে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। বরিশালের বরেণ্যে শিক্ষাবিদ প্রফেসর শাহ সাজেদা উদ্বেগ প্রকাশ করে সময়ের বার্তাকে বলেন, ” মহত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত প্রতিষ্ঠিত সরকারি ব্রজমোহন কলেজ যা বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী কলেজ। কিন্তু সেখানে এরকমের মাদকের আসর বসে যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

পুলিশ প্রশাসন ও কলেজ প্রশাসনকে এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তারই সাথে অভিভাবকের উচিত তার সন্তান কি করছে সে সম্পর্কে খেয়াল রাখা। মাদক একটি সাধারন শিক্ষার্থীর শারীরিক ও মানসিক দিক ধ্বংস করে দিতে পারে। মাদক একটি সাধারণ শিক্ষার্থীর জীবনে কখনো আশীর্বাদ বয়ে আনতে পারেনা।

তাই এই ভয়াবহ মাদক থেকে সাধারণ শিক্ষার্থী সহ তরুণ সমাজ কে বাঁচাতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে “। বি.এম কলেজ সহ অত্র এলাকায় মাদক বন্ধে পুলিশের নিয়মিত মনিটারিং চেয়েছেন এলাকাবাসী।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

Check Also

দেশে আমদানি না করেই ২‘শ থ্রি হুইলারের বিআরটিএ‘র রেজিস্ট্রেশন!

দেশে আমদানি না করেই ২‘শ থ্রি হুইলারের বিআরটিএ‘র রেজিস্ট্রেশন!

দেশে আমদানি না করেই ২‘শ থ্রি হুইলারের বিআরটিএ‘র রেজিস্ট্রেশন! ।। এম. লোকমান হোসাঈন ॥ জাল-কাগজপত্র …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *