মঙ্গোলিয়ায় এ বছর অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে তীব্র শীতে ঠান্ডায় প্রায় ৫০ লাখ প্রাণী মারা গেছে। এর ফলে সেখানে বসবাসকারী হাজার হাজার বাসিন্দার খাদ্য সরবরাহ এবং জীবিকা হুমকিতে রয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব দ্য রেড ক্রস (আইএফআরসি) হুঁশিয়ারি দিয়েছে। খবর সিএনএন’র।
মঙ্গোলিয়ায় ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত প্রচণ্ড শীত থাকে। এমনকি কিছু এলাকায় তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায়।
মঙ্গোলিয়ার সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালের শেষে ভেড়া, ছাগল, ঘোড়া এবং গরুসহ এ ধরনের ৬ কোটি ৪৭ লাখ প্রাণী ছিল। তাপমাত্রা অতিরিক্ত নেমে গেলে বিপুল সংখ্যক গবাদিপশুর মৃত্যু হয়। ২০২২-২৩ সালের শীতকালসহ সেখানে অন্তত ৪৪ লাখ প্রাণী মারা গেছে। ২০১০-১১ সালের শীতকালেও ভয়াবহ জুডের কবলে এক কোটির বেশি প্রাণী মারা গিয়েছিল। যা ওই সময়ে দেশের মোট পশুসম্পদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর শীত স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তীব্র ছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা অতিরিক্ত নেমে যাওয়ায় শীতের তীব্রতা বাড়ছে। এমন আবহাওয়া স্থানীয়ভাবে ‘জুড’ নামে পরিচিত। মঙ্গোলিয়া গত এক দশকে ছয়টি জুডের সম্মুখীন হয়েছে।
মঙ্গোলিয়ার প্রায় ৩০ লাখ বাসিন্দা ঐতিহ্যগতভাবে পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তারা গরু, ছাগল, ঘোড়া পালন এবং বিক্রি করেই নিজেদের আহারসহ অন্যান্য প্রয়োজন মেটান। আইএফআরসির এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক আলেকজান্ডার ম্যাথিউ বলেছেন, এসব বাসিন্দা যারা নিজেদের বেঁচে থাকাসহ সব প্রয়োজনের জন্য এসব গবাদিপশুর ওপর নির্ভরশীল, তারা কয়েক মাসের মধ্যেই একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ এখন আর নিজের আহার জোগাড় বা ঘর উষ্ণ রাখতে সক্ষম নন।
নভেম্বর থেকে কমপক্ষে ২,২৫০ পশু পালক পরিবার তাদের গবাদিপশুর ৭০ ভাগ হারিয়েছেন। এখন ৭ হাজারের বেশি পরিবার তিন বেলা খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জুড পরিস্থিতি দেশের দুই-তৃতীয়াংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আর শীত আরও অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ম্যাথিউ বলেন, প্রকৃতিতে এখন বসন্ত ঋতু হলেও মঙ্গোলিয়ায় এখনো শীত রয়েছে। চারদিতে এখনো বরফ পড়ছে। আর গবাদিপশু মারা যাচ্ছে।
জাতিসংঘ বলছে, মঙ্গোলিয়ার ৭০ শতাংশ মানুষ ‘জুড’ বা এর কাছাকাছি পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। দেশে সরকার কৃষকদের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এরই মধ্যে পশু পালকদের খড় সরবরাহের জন্য একটি প্রচারাভিযান শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে আবহাওয়ার উন্নতি না হলে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে পড়বে।