শিক্ষার্থীদের ষড়যন্ত্রের শিকার ববি’র ৩ শিক্ষক!
শিক্ষার্থীদের ষড়যন্ত্রের শিকার ববি’র ৩ শিক্ষক!

শিক্ষার্থীদের ষড়যন্ত্রের শিকার ববি’র ৩ শিক্ষক!

শিক্ষার্থীদের ষড়যন্ত্রের শিকার ববি’র ৩ শিক্ষক!।। মোঃ ইমন খন্দকার হৃদয় ॥ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান উন্মেষ রায়,সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার সরকার, সহকারী অধ্যাপক পম্পা মজুমদারকে নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত কিছু ভুঁইফোড়  অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও বাংলা বিভাগের একটি মহল মিথ্যা তথ্য প্রচার করে আসছে। কখনো তাদের নামে আনা হচ্ছে ধর্মীয় অবমাননা, কখনো আনা হয়েছে পরীক্ষার খাতায় কম নাম্বার দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ।

যা নিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সহ বরিশালের নানা মহলে আলোচনার-সামালোচনা জন্ম দিয়েছে। সম্প্রতি মিনহাজুল ইসলাম নামে বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে তাকে বিভিন্ন কোর্সে নাম্বার কম দেয়া ও একটি কোর্সে ফেল করানো হয়েছে।

এছাড়াও অভিযুক্ত শিক্ষকদের অত্যাচারের সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এই অভিযোগ পত্র কেন্দ্র করে একটি গোষ্ঠী বিভিন্ন নিবন্ধনহীন অনলাইন নিউজ পোর্টালে শিক্ষকদের ছবিসহ ঢালাওভাবে প্রকাশ করে আসছে।   যার ফলে ওই সকল শিক্ষকরা সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্নের শিকার হচ্ছে। আসলেই এই শিক্ষকগণ পরীক্ষার খাতায় নম্বর কম দেয় কিনা?  তারা ধর্মীয় অবমাননার সাথে যুক্ত কিনা? এমন প্রশ্ন নিয়ে প্রকৃত সত্য উদঘাটনে নামে দৈনিক আজকের সময়ের বার্তার একটি অনুসন্ধানী টিম। যেখানে উঠে আসে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র।

ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ পত্রে যা লিখেছে বাস্তবে তা অনুসন্ধান করে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। অনুসন্ধানে দেখা যায় মিনহাজুল ইসলাম নামের এই শিক্ষার্থীর ক্লাসে উপস্থিতি নেই,বিভিন্ন মিডটার্ম পরীক্ষায় তার অংশগ্রহণ নেই,কয়েকবার নকল করে ধরা খেয়েছে ইত্যাদি। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর অভিযোগ অনুসারে,   তিনি দাবি করেছেন তার কয়েকটি কোর্সে ইন্টারনাল নাম্বার কম দেয়া হয়েছে।

কোর্সগুলো হলো ৩০২,৩০৫,৩০৭,৩০৮। এই কোর্সগুলোর শিক্ষক হলেন উন্মেষ রায় ও সঞ্জয় সরকার। ইন্টারনাল নাম্বার পেতে হলে ক্লাসে পর্যাপ্ত উপস্থিতি, মিডটার্ম পরীক্ষা দেওয়া, অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার ইত্যাদি কাজ করতে হয়। কিন্তু এসকল  কাজ পুরোপুরি ভাবে এই শিক্ষার্থী করেনি।

উদাহরণস্বরূপ সঞ্জয় সরকারের ভাষাবিজ্ঞান ও অনুবাদ বিশ্ব সাহিত্য কোর্সের ২৫টি ক্লাসের ভিতর হাজিরা বহিতে তার মাত্র উপস্থিতির সংখ্যা ৯ দিন,এই কোর্সে দুইটি মিডটার্ম ভিতরে একটি মিডটার্ম পরীক্ষা দিয়েছে আরেকটিতে অনুপস্থিত। ভাষাবিজ্ঞান কোর্সটি  যেহেতু তাত্ত্বিক, এখানে মনগড়া তথ্য দেয়ার কোন সুযোগ নেই কিন্তু তার খাতায় মনগড়া তথ্যের প্রমাণ মেলে।তাই তার একটি খাতায় সংশ্লিষ্ট কোর্স শিক্ষক বাধ্য হয়ে কম মার্ক দিয়েছে।

আমরা যদি আরেকটি কোর্স দেখি যেমন- উন্মেষ রায়ের ৩০৭ (বাংলাদেশ ছোটগল্প)  নামক কোর্সে ৩০ টি ক্লাসের ভিতরে তার উপস্থিতির সংখ্যা মাত্র ১১ দিন,দুইটি মিডটার্ম ও ক্লাস টেস্ট দিলেও তাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্য নেই এবং প্রচুর বানান বিভ্রাট রয়েছে। অ্যাসাইনমেন্টগুলো মানসম্মত নয়। তাই এই কোর্সের সংশ্লিষ্ট কোর্স শিক্ষক কম মার্ক দিতে বাধ্য হয়েছে।

বাকি অন্য কোর্সগুলোর একই অবস্থা। যা সময়ের বার্তার অনুসন্ধান টিম পর্যবেক্ষণ করেছে।  এই বিভাগের শিক্ষক পম্পা মজুমদারের কোর্সের নাম উল্লেখ না করলেও তার কোর্সগুলো পর্যবেক্ষণ করে সময়ের বার্তা টিম। তার কোর্স ৩০১,৩০৬,৪০৪ বাকি শিক্ষকদের কোর্সের মতো একই অবস্থা। অভিযুক্ত এই ৩ শিক্ষক বাদে বিভাগের অন্য শিক্ষকদের কোর্সে তিনি কম মার্ক পেয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের ষড়যন্ত্রের শিকার ববি’র ৩ শিক্ষক!

শিক্ষার্থীদের ষড়যন্ত্রের শিকার ববি’র ৩ শিক্ষক!
শিক্ষার্থীদের ষড়যন্ত্রের শিকার ববি’র ৩ শিক্ষক!

কিন্তু সেই শিক্ষকদের নামে কোন অভিযোগ নেই। এই শিক্ষার্থী চলতি বছরের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ৪০৩ নং কোর্সের মিডটার্ম পরীক্ষায় নকল করে ধরা পড়ে। যার ফলশ্রুতিতে ৭ ডিসেম্বর-২০২৩ইং তারিখে উক্ত কোর্সের প্রধান পরীক্ষক এবং অন্য পরিদর্শকের স্বাক্ষর সংবলিত নকল কপিটি পরীক্ষার নিয়ন্ত্রক অফিসে জমা দেওয়া হয়। তিনি মাঝেমধ্যে এমন কাজ করে যা স্বীকার করেছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার সহপাঠীরা।

অভিযোগকারী মিনহাজুল ইসলাম তার অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেছে, সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় তাকে কম মার্ক দেয়া হয়েছে। তবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর বলছে, ‘ যেহেতু সেমিস্টার ফাইনালের খাতা ৩ বার অন্য  শিক্ষক দ্বারা মূল্যায়ন হয় তাই নম্বর কম দেয়ার কোন সুযোগ নেই ‘। এতসব কিছু করে অভিযোগকারী মিনহাজুল ইসলাম কিভাবে অভিযোগ করে? তার কার্যকলাপে পাল্টা অভিযুক্ত  তো তার কাছেই যায়। তাই সেই অভিযোগ নিয়ে মিনহাজুল ইসলামের সাথে  কথোপকথন করে সময়ের বার্তা। কিন্তু সে কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি।

কয়েকটি সূত্র থেকে জানা যায়, একই বিভাগের সদ্য বিদায় শিক্ষার্থী কাজী মেহেদী হাসান সালমান ও মোঃ সাইফুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে, এই সকল শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা আপত্তিকর মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন শিক্ষার্থীর মাঝে বলে আসছে।  সম্প্রতি গত মাসের ২ নভেম্বর-২৩ ইং তারিখে মাস্টার্সের বিদায় অনুষ্ঠানে এই দুই শিক্ষার্থী ও একজন শিক্ষক অভিযুক্ত তিনজন শিক্ষকের নামে সকলের সামনে মানহানিকর বক্তব্য রাখে। এতে সাম্প্রদায়িকতা তীব্রভাবে প্রকাশ পায়।

যা ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অডিও ক্লিপ সময়ের বার্তা সংগ্রহ করে। শুধু তাই নয়, এই দুই শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে ১০-১৫ জনের একটি গোষ্ঠী  চলতি মাসের ২ তারিখে অনার্স ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ওরিয়েন্টেশনের দিন, বাংলা বিভাগের  নব্য শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে, এই তিন শিক্ষকের নামে মানহানিকর তথ্য তাদের ভিতর ছড়ানো হয়। যেখানে বলা হয়, ‘ তারা মালাউন ও ইসলাম বিদ্বেষী ‘। সেদিন উপস্থিত থাকা এক শিক্ষার্থী প্রমাণ সহকারে সময়ের বার্তার কাছে স্বীকার করেছে।

অভিযোগকারী মিনহাজ আরো বলেন, বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান উন্মেষ রায় বৈআইনী ভাবে তার পরীক্ষার খাতা একজন শিক্ষার্থীর মাধ্যমে স্যোসাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছেন।   কাজী মেহেদি হাসান সালমান ও মোঃ সাইফুর রহমানের সাথে কথোপকথন করলে, তারা নানা অভিযোগ উপস্থাপন করেন কিন্তু কোনটিরই সুনির্দিষ্ট প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি।

কিছুদিন আগে মোঃ লুৎফর রহমান নামে এক শিক্ষার্থী নাম্বার টেম্পারিং এর অভিযোগ এনে অভিযোগ করে এবং সেই তথ্য একইভাবে নিবন্ধনহীন অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশ করা হয়। যা পরবর্তীকালে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। ২০২২ সালে উন্মেষ রায়  ও সঞ্জয় সরকারের ফেসবুকে একটি পোস্ট কে কেন্দ্র করে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। যাতে প্রবল  সমালোচনার ঝড় তোলে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে।

যেখানে মদদ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক এবং প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী মিলে উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।  বাংলা বিভাগের বিভিন্ন বর্ষ শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারা এই সকল শিক্ষকদের নামে নেতিবাচক কোন কথা সময়ের বার্তার কাছে বলেনি। উল্টো এই সকল শিক্ষকদের নামে এমন তথ্য প্রচার করায় তারা দুঃখ প্রকাশ করেছে।

শিক্ষার্থীদের ষড়যন্ত্রের শিকার ববি’র ৩ শিক্ষক!

এ ব্যাপারে এই তিনজন শিক্ষকের সাথে কথা বললে তারা একই কথা বলেন,” আমরা কোন খাতায় নাম্বার কম দিয়েছি ও কি কারণে দিয়েছি তা তদন্ত করা হোক, যদি আমরা দোষী প্রমাণিত হই তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে শাস্তি দেবে আমরা তা মাথা পেতে নেব ‘। পম্পা মজুমদার বলেন,” আমি আমার শিক্ষার্থীদের কখনো কে হিন্দু কে মুসলিম এগুলো বিবেচনা করেনি। আমি মানুষ আর তারাও মানুষ তার থেকেও তারা আমার শিক্ষার্থী আমার কাছে সবাই সমান।

যারা এইগুলোর বিভেদ করে তারা প্রকৃত মানুষ কিনা সেটি সন্দেহের ‘। আরেকজন শিক্ষক সঞ্জয় কুমার সরকার বলেন,” বাংলা বিভাগ মানুষ হওয়ার বিভাগ, এই বিভাগ সকল ধর্ম- বর্ণ- লিঙ্গ এর ঊর্ধ্বে  মানুষ ও মানবতাকে প্রাধান্য দেয়। তাই এই বিভাগে মানবতাবাদ পড়াতে গেলেই যারা ধর্মীয় অবমাননার অপব্যাখ্যা দেয়। তাহলে তাদের উচিত মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও কাজী নজরুল ইসলাম সহ সকল কবি সাহিত্যেকদের ধর্মীয় অপব্যাখ্যাকারী হিসাবে পরিচয় দেয়া’।

এই ব্যাপার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কথা বললে তারা দুঃখ প্রকাশ করে নানা কথা বলেন। প্রথমেই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য (রু. দা)  প্রফেসর ড.  মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া  সময়ের বার্তা কে বলেন,’ আমাদের কাছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রাণ।তাদের কারণেই এই বিশ্ববিদ্যালয় বর্ণিল।  যে অভিযোগটি এসেছে আমরা তা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব’।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. খোরশেদ আলম সময়ের বার্তা কে বলেন,’ এরকমের ঘটনা আগেও ঘটেছে,আমরা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেইনি তবে বারে বারে তা চলতে দেয়া যায় না। এটি প্রমাণিত হলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নিব’।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন  প্রফেসর মো. তানভীর কায়সার সময়ের বার্তা কে বলেন,’ এই তিনজন শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে আমার ফেসবুকে কানেক্টেড, এখন পর্যন্ত তাদের কোন পোস্টে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এনেছে এমন দেখিনি। আর এই অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চলছে খুব শিগ্রিই সত্যটি প্রকাশ হবে’।

এই ছিল আমাদের অনুসন্ধানের সর্বশেষ  কিন্তু বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের আট জন শিক্ষকের মধ্যে বারে বারে কেন এই তিনজন শিক্ষককে টার্গেট করা হচ্ছে?  তাদের ধর্ম হিন্দু বলে? নাকি তারা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য কাজ করে তাই? নাকি শিক্ষার্থীদের মাঝে তাদের জনপ্রিয়তা বেশি ? এইগুলো নাহয় পাঠকই বিশ্লেষণ করবে।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

Check Also

দেশে আমদানি না করেই ২‘শ থ্রি হুইলারের বিআরটিএ‘র রেজিস্ট্রেশন!

দেশে আমদানি না করেই ২‘শ থ্রি হুইলারের বিআরটিএ‘র রেজিস্ট্রেশন!

দেশে আমদানি না করেই ২‘শ থ্রি হুইলারের বিআরটিএ‘র রেজিস্ট্রেশন! ।। এম. লোকমান হোসাঈন ॥ জাল-কাগজপত্র …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *