সুনাম হারিয়ে ফেলছে অমৃত লাল কলেজ!
সুনাম হারিয়ে ফেলছে অমৃত লাল কলেজ!

সুনাম হারিয়ে ফেলছে অমৃত লাল কলেজ!

সুনাম হারিয়ে ফেলছে অমৃত লাল কলেজ!।। মোঃ ইমন খন্দকার হৃদয় ॥ এসএসসিতে এ প্লাস (এ+) নিয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা এইচএসসিতে পাচ্ছে এ মানাইস (এ-) ! আবার কেউ কেউ ফেল করছেন। এমন নজির এক সময়ের নামকরা বরিশালের বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অমৃত লাল দে কলেজ।

অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষার আড়ালে কোচিং বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত কলেজের শিক্ষকরা। যার ফলে প্রতিনিয়ত পড়াশোনার মান যেভাবে কমছে অন্যদিকে পাসের হারও কমে যাচ্ছে।

শিক্ষানুরাগী অমৃত লাল দে ১৯৯২ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত করেন। প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে সরকারী-বেসরকারী অন্য কলেজ এর চেয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করায় দেশব্যপী সুনাম ছড়িয়ে পরেন।

যা এখন হারাতে বসছে। অমৃত লাল দে’র প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়। যা এই অঞ্চলের অন্যতম সুনাম অর্জকারী শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে খ্যাত।

কলেজের অনেক সুনাম থাকলেও দিনে দিনে তা অবনতির দিকে যাচ্ছে। যা বিগত কয়েক বছরের এই কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল দেখলে বোঝা যায়। একসময়ের জৌলুস পাওয়া প্রতিষ্ঠানটি! নানা অনিয়ম-দুনীর্তিতে জড়িয়ে দিন দিন শিক্ষার পাসের হার কমে যাচ্ছে।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটি থেকে। সময়ের বার্তা‘র এক জরিপে দেখা যায়, অমৃত লাল দে কলেজটিতে ২০২১ সালে জিপিএ-৫ এর বন্যা বয়ে গেছে, সেখানে গতবছর ও চলতি বছরে আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায়নি। এই বছর এইচএসসি -২০২৩ কলেজের পাশের হার ৯৫.৫২% যা গতবছরের তুলনায় প্রায় ১% কম।

২০২১ সালে এই কলেজ থেকে এইচএসসি সমমানের পরীক্ষা দেয় ৯০৮ জন শিক্ষার্থী। যার ভিতরে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পায় ২৪২ জন, মানবিক বিভাগ থেকে ১২৮ জন, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থী। ২০২১ সালে কলেজে মোট পাশের হার ৯৭.৬৯%।

২০২২ সালে এই কলেজ থেকে পরীক্ষা দেয় ৯১৬ জন শিক্ষার্থী। যার ভিতরে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পায় ১৫৭জন, মানবিক বিভাগ থেকে ১০৫ জন, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ১৮ জন শিক্ষার্থী। ২০২২ সালে কলেজে মোট পাশের হার ৯৬.০৭%।

২০২৩ সালে এই কলেজ থেকে পরীক্ষা দেয় ৮৩৮ জন শিক্ষার্থী। যার ভিতরে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পায় ৪৮ জন,মানবিক বিভাগ থেকে ৬০ জন,ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ১১ জন শিক্ষার্থী। ২০২৩ সালে কলেজে মোট পাশের হার ৯৫.৫২%।

এই কলেজে যারা ভর্তি হয়েছে তাদের অবশ্যই এসএসসি বিজ্ঞানে জিপিএ- ৫, মানবিকে জিপিএ -৪ এবং ব্যবসায় শিক্ষায় জিপিএ-৪ থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু এত বেশি গ্রেড পয়েন্ট নিয়ে ভর্তি করালেও তার আউটপুট হিসাবে সে গুড়ে বালি।

কলেজটিতে প্রাকটিক্যাল, টিউটোরিয়াল পরীক্ষা, গাইড শিক্ষক তত্ত্বাবধান ইত্যাদি কার্যক্রম অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও কেন এমন ফলাফল হলো তা নিয়ে রীতিমত দুশ্চিন্তায় কলেজ কর্তৃপক্ষ।

তবে কলেজটির শিক্ষক-অভিভাবক-সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছে কলেজের শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, কলেজের অনেক শিক্ষকেরা কলেজের ক্লাসের থেকে তাদের প্রাইভেট-ব্যাচের ক্লাসে অধিক প্রাধান্য দেন, কলেজ শিক্ষকদের সঠিক টেক-কেয়ারিং এর অভাব,গভার্নিং বডির গাফিলতি, শিক্ষার্থীদের কলেজ মুখী না করা ইত্যাদি কারণ।

কলেজটি বেসরকারি হওয়ায়, এই কলেজে দূর-দূরান্ত থেকে এই অঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আসেন। যার বেশিরভাগই মফস্বল এলাকার। তাদের পিতা-মাতারা অধিক বেতন দিয়ে এখানে তাদের সন্তানদের পড়ালেখা করান।

কিন্তু সেইভাবে তার সন্তানেরা গড়ে উঠছে না। এমন উদ্বেগ প্রকাশ করে একজন অভিভাবক সময়ের বার্তা কে বলেন, ” আমার ছেলেকে এই কলেজে এ প্লাস নিয়ে ভর্তি করিয়েছি কিন্তু সেই ছেলে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় এ মাইনাস পেয়ে পাস করেছে।

এমন বুঝলে আমি ওকে এখানে ভর্তি করাতাম না “। ঐতিহ্যবাহী এই কলেজটি বিগত বছরে কয়েকবার বরিশাল বোর্ড সহ সর্ববোর্ডে প্রথম স্থান অধিকার করেছে।

জাতীয় প্রতিযোগিতা গুলোতে প্রথম স্থান সহ বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেছে। বিভিন্ন অলিম্পিয়াডে কলেজের অর্জন প্রশংসার দাবিদার। এছাড়াও এই কলেজ থেকে প্রতিবছর দেশের নানা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে চান্স পেয়ে থাকে কলেজের কৃতি শিক্ষার্থীরা।

সুনাম হারিয়ে ফেলছে অমৃত লাল কলেজ!

কিন্তু সেই সংখ্যাও ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। চলতি বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা খ- ইউনিটে প্রথম হয়েছে এই কলেজের শিক্ষার্থী। দেশব্যাপী এই কলেজের সুনাম থাকলেও দিনে দিনে তা অবনতির দিকে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একজন শিক্ষক সময়ের বার্তা কে বলেন, ” কলেজে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা খুবই দুর্বল।

তাদের চরম উদাসীনতার পরিচয় পাওয়া যায়। কলেজটিতে পরিবার তান্ত্রিকতার প্রভাব রয়েছে। তারই সাথে এই কলেজের শিক্ষকদের ম্যাচ-ব্যাচ-প্রাইভেট ইত্যাদি কার্যকলাপ যা ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। একজন শিক্ষক আরেকজন শিক্ষককে দেখতে পারেন না। তাই এর বিরূপ প্রভাব গিয়ে পড়ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে “।

কলেজের সার্বিক এই ফলাফল সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করে ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেবাশীষ চক্রবর্তীর সময়ের বার্তাকে বলেন, “দানবীর অমৃত লাল দে যে স্বপ্ন নিয়ে এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা থেকে আমরা দিনে দিনে পিছিয়ে পড়ছি।’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি আবার স্বরূপে ফিরে আসুক, এমনটিই প্রত্যাশা করছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবক এবং সচেতন মহল।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

Check Also

দেশে আমদানি না করেই ২‘শ থ্রি হুইলারের বিআরটিএ‘র রেজিস্ট্রেশন!

দেশে আমদানি না করেই ২‘শ থ্রি হুইলারের বিআরটিএ‘র রেজিস্ট্রেশন!

দেশে আমদানি না করেই ২‘শ থ্রি হুইলারের বিআরটিএ‘র রেজিস্ট্রেশন! ।। এম. লোকমান হোসাঈন ॥ জাল-কাগজপত্র …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *