স্যার, আপনার জন্য কি করতে পারি? বলা সরকারি কর্মকর্তার বিশেষ সাক্ষাৎকার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে,” প্রজাতন্ত্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী বাংলাদেশের জনগণ,সরকারি আমলারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী”।
সাধারন জনগনের ভ্যাট -ট্যাক্স এর টাকায় সকল আমলাদের বেতন হয় কিন্তু সেই কথা ভুলে গিয়ে অনেক সময় জনগণের সাথে খারাপ ব্যবহার করে অনেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী।যেখানে তারা জনগণকে “স্যার” বলবে উল্টো সেটি না হয়ে তাদের “স্যার” না বললে তারা সাধারন জনগণের প্রতি অসন্তুষ্ট হন।
সম্প্রতি রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কেন রংপুরের ডিসি কে স্যার বলেনি তা নিয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। কিন্তু,” হাজার কচুরিপানার ভিতরেও যেমন শাপলা ফুল ফোটে” ঠিক একইভাবে প্রচলিত ধারা থেকে নিজেকে ব্যতিক্রম রেখে বিগত পাঁচ বছর যাবত জনগণকে স্যার সম্বোধন করে সেবা দিয়ে আসছেন,বরিশালের সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন অফিসার জনাব সাজ্জাদ পারভেজ।
প্রশ্ন ১ঃ– আপনি কেমন আছেন? আপনার শিক্ষাজীবনে, চাকুরি জীবন নিয়ে যদি বলতেন?
সাজ্জাদ পারভেজ: আলহামদুলিল্লাহ! ভালো আছি। আমার বেড়ে ওঠা বরিশালে। বরিশাল জিলা স্কুলে আমি পড়ালেখা করেছি। তখন মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করেছিলাম। আমি বি.এম কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি। পরে বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকুরিতে আত্মনিয়োগ করি।
প্রশ্ন ২ঃ– স্যার, আপনার জন্য কি করতে পারি? এমন ধারণাটা আপনার কোন উপলব্ধি থেকে আসে?
সাজ্জাদ পারভেজ: বঙ্গবন্ধু তার একটি ভাষণে বলেছিলেন,” সকল সরকারি আমলারা জনগণের খাদেম”। আমি সেখান থেকে অনেকটা অনুপ্রাণিত হই। আর জনগন কে সম্মান করবো না কেন? তাদের ট্যাক্সের পয়সায় আমার বেতন হয়। তাহলে তাদের প্রাপ্ত সন্মান করতেই হবে।
আরেকটি ঘটনা বলতে হয় আমাদের সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ২০১৮ সালে তিনি বরিশালে এসেছিলেন। তিনি সব সময় আমাদেরকে বলতেন,” আপনারা সকল কে সাহায্য করতে পারবেন না তবে এমন কিছু করে দেখান যাতে জনগণ আপনাদেরকে মনে রাখে”।
সেই কথায় আমি অনেক অনুপ্রাণিত হয়েই ২০১৮ সাল থেকে আমি টেবিল কার্ডে লিখে রেখেছিলাম যে স্যার, আপনার জন্য কি করতে পারি? তবে এটি ভাইরাল হওয়ার জন্য নয়। আমি এটি ৫ বছর আগে থেকেই করে আসছি এবং আমি জনগণকে মন থেকেই সম্মান করি।
প্রশ্ন ৩ঃ– বাংলাদেশ সংবিধানে বলা হয়েছে, “প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী সকল আমলাগণ”। এ সম্পর্কে আপনার মতামত?
সাজ্জাদ পারভেজ: পবিত্র সংবিধান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ একটি সংবিধান বাংলাদেশের সংবিধান। জনগণের কথা ভেবেই ৭২ সালে সংবিধান রচনা করা হয়েছে। সংবিধানে যেহেতু বলা হয়েছে আমলারা জনগণের কর্মচারী অবশ্যই তা সকলের মানা উচিত।
প্রশ্ন ৪ঃ- বর্তমান বাংলাদেশে অনেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নানা দুর্নীতি -অপকর্ম করে জনগণের মন থেকে অনেকটা উঠে যাচ্ছে। এ সম্পর্কে আপনার মতামত কি?
সাজ্জাদ পারভেজ: জনগণের সম্পদ চুরি করলে অবশ্যই জনগণের মন থেকে উঠে যাবে। জনগণের প্রাপ্ত সেবা একটি আমানত। সেটি ভেবে সকল সরকারি কর্মকর্তার সঠিক দায়িত্ব সহকারে কাজ করা উচিত। যারা এই অসৎ কাজের সাথে জড়িত তাদের প্রতি আমার অনুরোধ রইল। তারা এই অসৎ কাজ ছেড়ে জনগণ কে তার প্রাপ্ত সেবা দিয়ে। দেশকে এগিয়ে নেওয়াই হোক ; প্রতিটি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর গুরু দায়িত্ব।
প্রশ্ন ৫ঃ- একজন প্রকৃত সরকারি চাকুরিজীবীর তার কর্মের প্রতি, দেশ ও জাতির প্রতি কতটুকু দায়বদ্ধতা ও কি কি কর্তব্য থাকা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
সাজ্জাদ পারভেজ: সকল সরকারি আমলাদের দেশপ্রেম জাগ্রত করতে হবে। তার কর্মের প্রতি নিষ্ঠা থাকতে হবে। সকল সরকারি চাকুরিজীবীদের সততা থাকতে হবে। তাহলে সে দেশ ও জাতিকে কিছু দিতে পারবে। সকল কে এই নীতি নিয়ে চলা উচিত যে আমার অফিস থেকে যেন কোন সাধারন জনগণ খালি হাতে ফিরে না যায়। সেই জিনিসটা মাথায় রাখা উচিত। তাহলেই ভালো কিছু হবে।
প্রশ্ন ৬ঃ- জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার একটি ভাষণে তিনি বলেছেন, ” সরকারি আমলারা তোমরা জনগণের স্যার নও,জনগণ তোমাদের স্যার”। এই কথার গ্রহণযোগ্যতা আপনার কাছে কতটুকু?
সাজ্জাদ পারভেজ : বাঙালির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার কারণেই এই দেশ পেয়েছি। তার ভেতর দেশপ্রেম ছিল বিধায় তিনি এই কথাটি সরকারি আমলাদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন। তিনি আরো বলেছিলেন যে সরকারি আমলারা জনগণের চাকর। তার এই কথাতেই অনুপ্রাণিত হয়েই, আমি জনগণকে স্যার বলে সম্বোধন করি এবং এর গ্রহণযোগ্যতা অত্যাধিক।
প্রশ্ন ৭ঃ– আপনি যেহেতু সমাজসেবা দপ্তরে চাকুরি করেন। তাই আপনি অনেক অসহায়- মুমূর্ষু মানুষের সেবা করার সুযোগ কাছ থেকে পেয়ে থাকেন। মানুষের জন্য কাজ করতে আপনার কেমন লাগে?
সাজ্জাদ পারভেজ : আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন যে আমি মানুষের জন্য কিছু করতে পারছি। এই চেয়ারে বসে সরকারি টাকায় অনেক মানুষের সেবা করতে পারতেছি। যার ফলে আমি কিন্তু ইহকাল ও পরকাল দুই জায়গায় ভালো থাকতে পারবো। আর আমি যেহেতু প্রবেশন অফিসার আমার কর্মক্ষেত্রে শিশু, বয়স্ক যারা অপরাধ করে এবং আইন দন্ড পায় তাদের নিয়ে।
যখন কোনো শিশু বা বয়স্ক অপরাধ করে তার জেল হয়। তখন তাকে নিয়ে আমার অনেক কাজ করতে হয়।তাকে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনার পর তাকে অনেক বুঝাই। বোঝানোর পর যখন দেখি যে সে অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরছে তখনই আমার কর্মের স্বার্থকতা অনুভব করি।
পড়ুন ফ্রি শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট এ
HSC | বাংলা ২য় | প্রতিবেদন রচনা ১০-১৫ | PDF Download
প্রশ্ন ৮ঃ- আপনার চাকুরি জীবনে ঘটে যাওয়া স্মরণীয় কোন ঘটনা যদি আমাদের সাথে শেয়ার করতেন?
সাজ্জাদ পারভেজ : একদিন বরিশাল স্ব- রোডে এক পঙ্গু রোগী রাস্তায় পড়েছিল। আমি দেখেছি তার পাশে কেউ ছিল না। সেটি দেখার সাথে সাথে তাকে তুলে নিয়ে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু দুঃখজনক তাকে বাঁচাতে পারিনি। তবে সে মৃত্যুর সময় হাসিমুখে মারা গেছে। এটা আমি এখনো মনে করি।
প্রশ্ন ৯ঃ- আমরা আপনার ফেসবুকের কমেন্ট বক্সে দেখেছি জিলা স্কুলের একজন প্রাক্তন শিক্ষক যে আপনার শিক্ষক ছিলেন।তিনি আপনাকে নিয়ে গর্ব করে একটি কমেন্ট করেছেন এবং বর্তমানে দেশবাসী আপনাকে নিয়ে অনেক প্রশংসা করছে। আপনার অনুভূতি কেমন লাগছে?
সাজ্জাদ পারভেজ: আমি স্যারের এমন প্রশংসা থেকে অতি মুগ্ধ। আমি গর্বীত যে স্যারের জন্য কিছু করতে পেরেছি। তিনি অত্যন্ত আদর্শবান শিক্ষক ছিলেন। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। আর দেশবাসীর প্রতি ভালোবাসা রইলো। তারা যেন আমার জন্য দোয়া করেন। আমি যেন সব সময় এরকম এর ভালো কাজ করতে পারি। তাই সকলের প্রতি দোয়া কামনা রইলো।
প্রশ্ন ১০ঃ- সকল সরকারি কর্মকর্তা ও সাধারণ জনগণের ওপর আপনার কি মেসেজ থাকবে?
সাজ্জাদ পারভেজ: সরকারি আমলা ও সাধারন জনগণকে বলবো আপনারা সবাই দেশকে ভালবাসুন। দেশপ্রেমকে জাগ্রত করুন।দেশপ্রেম জাগ্রত হলে সকল অন্যায় -দুর্নীতি -ঘুষ প্রতিহত হবে। সকল কে সুখী -সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য কাজ করার দৃড় আমি আহ্বান জানাই। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপানাকেও ধন্যবাদ।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।