প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছাত্রলীগকর্মীদের ওপর হামলাকারীরা (ভিডিওসহ) ॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন হামলাকারীরা। পুলিশ বলছেন কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে গ্রেফতার করা হবে কি-না তাও জানা নেই কারো। আহতদের পরিবারের দাবী দিনের বেলায় প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী কায়দায় যেভাবে হাতুড়ি পেটাসহ হামলা করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও এখন পর্যন্ত রহস্যজনক কারণে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করছে না। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে যেভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাতে ন্যায় বিচার পাবেন কি-না তা নিয়ে দেখায় দিয়েছে সন্দেহ।
সিসিটিভির ফুটেজ এর ভিডিও চিত্রে দেখায় যায়, ছাত্রদলের সাবেক ক্যাডার মাহাদী হাসান, তুহিন, বাবাইসহ একাধিক ব্যক্তি সোহেল ফকির নামে একজন ছাত্রলীগের কর্মীকে প্রকাশ্যে রড, লাঠি ও হাতুড়ি দিয়ে হামলা করেছেন। সোহেলকে মৃত ভেবে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন তারা।
বিশ্বের জানা ও অজনা অবাক করা তথ্য!
বর্তমানে সোহেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আসন্ন বরিশাল সিটি করর্পোরেশন এর সদ্য ঘোষিত মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়বাত এর স্ত্রী লুনা আব্দুল্লাহ‘র অঘোষিত পিএস ও ছাত্রদলের কর্মী মাহাদী হাসানের নেতৃত্বে নগরীতে চলছে একের পর এক আধিপত্য বিস্তার। কখনো আবার নিজেই মেয়র পরিচয় দিয়ে পুলিশসহ বিভিন্ন জায়গায় তদবীর বাণিজ্য করে যাচ্ছেন ছাত্রদল থেকে আসা মাহাদী হাসান।
যার বেশকিছু তথ্য প্রমাণ আসে সময়ের বার্তার হাতে। বিএনপির অঙ্গসংগঠন ছাত্রদল থেকে ২০২০ সালের শেষের দিকে বরিশাল নগরীর ২৯ নং ওয়ার্ড স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে বর্তমান বিদায়ী মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ‘র রাজনীতিতে আসেন মাহাদী হাসান, তুষার হোসেন তুহিন ও রাব্বী।
ছাত্রদল থেকে আসা তিন জন প্রথমে সেরনিয়বাত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী পরিচয় দিয়ে নগরীতে ফ্যাস্টুন-ব্যানার সাটিয়ে ক্ষমতাসীন দলের লোক পরিচয় দিয়ে দাপিয়ে বেড়ায়। বরিশাল সিটি করপোরের্শন এর নতুন কর্মপরিষদের মেয়র প্রার্থী পদে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাদকে দলীয় মনোয়নপত্র ঘোষনার সাথে সাথে ঘোল পাল্টিয়ে খোকন সেরনিয়বাদের পক্ষ অবস্থান নেন।
নির্বাচন কালীন সময়ে খোকন সেরনিয়বাদের স্ত্রী লুনা আব্দুল্লাহ সাথে জনসংযোগ করেন ছাত্রদলকর্মী মাহাদী হাসান সহ ওই তিন জন। এ সুবাদে লুনা আব্দুল্লাহ‘র মাধ্যমে খোকন সেরনিয়বাদ পরিবারের মাঝে পরিচিত লাভ করেন মাহাদী হাসান। নিজেকে লুনা আব্দুল্লাহ‘র পিএস পরিচিত দিয়ে কাশিপুর ২৯ নং ওয়ার্ড বাঘিয়া-ইছাকাঠী এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের করে আসছেন।
নির্বাচনের দিন ২৯ নং ওয়ার্ড বাঘিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে মারধরের ঘটনা ঘটে। মাহাদীসহ তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মারধর করে উল্টো নাটক সাজিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাসিঁয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মাহাদী হাসান।
সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর মাজারে ফুল দিতে যান নতুন মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত ও বরিশাল সদর আসনের এমপি জাহিদ ফারুক শামীমের নেতৃত্বে নগরীর কয়েক হাজার নেতাকর্মী এবং আওয়ামীলীগ সমার্থিত নব-নির্বাচিত কাউন্সিলগণ। ফুল দিয়ে ফেরার পথে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথমে বাসে বসে পরে কাশিপুর বাজার ইসলামী চক্ষু হাসপাতালের সামনে বসে মারধরের ঘটনা ঘটে।
খুলনা জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য
ঘটনার সূত্রপাত: চলতি মাসের ৮ জানুয়ারী জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর মাজার টঙ্গিবাড়িয়া বাসযোগে যাবার পথে বেলা সাড়ে ১১ টারা দিকে গৌরনদী-আগৈলঝড়া এর মাঝ পথে নাস্তা করার সময়ে ছাত্রলীগ দাবী করা সিনিয়র-জুনিয়ারদের মাঝে তর্কবির্তক হয়। আহত সোহেলের সিটে পানি পড়ায় বিষয়টি নিয়ে আরো উত্তেজিত হয়ে পরে সিনিয়র-জুনিয়রদের মাঝে। বাসের মধ্যে থাকা আওয়ামীলীগের একাধিক সিনিয়র নেতাকর্মীরা উভয়পক্ষকে শান্ত করে দেন।
বঙ্গবন্ধুর মাজার থেকে বরিশালে ফেরার পথে গৌরনদীর বাটাজোরে ও উজিরপুরের ইছলাদিতে ফের বাসের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে আ’লীগ নেতারা তাদের শান্ত করেন। কিন্তু একটি জুনিয়ারদের মাহাদী গ্রুপ মুঠোফোনে তাদের লোকদের কাশিপুরে বাজারে অবস্থান নিয়ে থাকতে বলেন এবং বাসটি বিকালে পৌছালে শুরু হয় উভয়গ্রুপের সংঘর্ষ। জুনিয়ারদের একাংশ মাহাদী হাসান, রাব্বী ও তুষার হোসেন তুহিন সহ প্রায় ৫/৬ জন।
অপরদিকে সিনিয়র একাংশ সোহেল ফকির, জাকারিয়া আলম সুবে ও আশিক সহ তাদেরও ৫/৬ জনদের মাঝে। এতে ১০ থেকে ১২ জন আহাত হয়েছে। তাদের উদ্ধার করে বরিশাল সেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ৮ জুলাই এর সন্ধ্যার আগের এই সংঘাতের ঘটনায় কাশিপুর বাজার এলাকায় বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে প্রায় ৪০ মিনিট যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট বরিশাল মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আহত হয়েছে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসীম উদ্দিনের কর্মী সোহেল ফকির।
সিসিটিভির ভিডিও ফুটেঁজ এ দেখায় যায়, সোহেল ফকিরকে রাস্তার পাশে ফলে লোহার রড ও হাতুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটায় মাহাদী, তুহিন,রাব্বী ও বাবাইসহ কয়েকজন। সোহেল রক্তাক্ত হলে হামলাকারীরা সটকে পড়ে। পরে তাকেসহ উভয়গ্রুপের ৬ জনকে উদ্ধার করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মাহাদী হাসান, রাব্বী, ফাইজুল ও তুহিন কেন্দ্রীয় যুবলীগ সদস্য এবং বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অসিম দেওয়ানের অনুসারী। বরিশাল মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, মারধরের ঘটনায় আহত সোহেল ফকিরের বাবা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ৬ জনকে সনাক্ত করে মাহাদী হাসান,তুষার হোসেন তুহিন, বাবাই,রাব্বী হাওলাদার,জান,বাবু সরদার সহ অজ্ঞাত ৩১ জনকে আসামী করা হয়েছে।
বর্তমানে মামলা এসআই মেহেদী হাসান তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে আছেন। তবে এখন পযন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। কি কারনে গ্রেফতার করা হয়নি তার কোন সদত্তর দিতে পারেননি এই কর্মকর্তা।
আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাদকে মুঠোফোনে না পাওয়ায় এবিষয় কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে খোকন সেরনিয়বাত এর স্ত্রী লুনা আব্দুল্লাহ সময়ের বার্তাকে বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে তার কাছে বহু লোকজন গিয়েছেন, তবে কাউকে পিএস বা ব্যক্তিগত সহকারী হিসাবে কাউকে নিয়োগ দেন নাই। এছাড়া লুনা আব্দুল্লাহ বলেন, তাদের নাম ব্যবহার করে কেউ কোন অপরাধ করলে কাউকে ছাড় দেবেন না।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।