ভারতের নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করলেন কেন?

কয়েক দিনের মধ্যেই ভারতে লোকসভা নির্বাচনের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করার হবে। এ সময়ে হঠাৎ করেই কেন দেশটির নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল পদত্যাগ করলেন তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

গতকাল শনিবার (৯ মার্চ) নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়াল পদত্যাগ করেন। তার পদত্যাগপত্র প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মু গোয়েলের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। ফলে তাৎক্ষণিকভাবেই অরুণ গোয়লের পদত্যাগ কার্যকর হয়েছে।

রোববার (১০ মার্চ) এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, অরুণ গোয়েল ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তার পদত্যাগের পর অনেকে তার স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুললেও পরে শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, তার শরীর পুরোপুরি ঠিক আছে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাচন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তার দাবি, অনেকদিন থেকেই অরুণ গোয়েলের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজিব কুমারের কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য চলছিল। এ কারণেই পদত্যাগ করেছেন তিনি।

ভারতে নির্বাচন কমিশনার বেঞ্চের সদস্য সংখ্যা তিন। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনার অনুপ পান্ডে গত মাসে অবসরে গেছেন। আর এবার অরুণ গোয়েল পদত্যাগ করায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজিবই একমাত্র প্যানেল সদস্য।

নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ২০২৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাকি ছিল অরুণ গোয়েলের। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে রাজিব কুমারের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। এরপর কমিশনের শীর্ষ পদে বসার কথা ছিল অরুণ গোয়েলের। তবে তার আগেই তিনি সরে দাঁড়ালেন।

অরুণ গোয়েল পাঞ্জাব ক্যাডারের ১৯৮৫ ব্যাচের আইএএস অফিসার ছিলেন। ২০২২ সালের নভেম্বরে নির্বাচন কমিশনে যোগ দেওয়ার আগে তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। সেসময়ে নির্বাচনক কমিশনার হিসেবে তার নিয়োগ নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল। সচিব পদে অরুণ গোয়েলের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। কিন্তু তার আগেই ওই বছরের ১৮ নভেম্বর স্বেচ্ছায় অবসর নেন তিনি। অবসর নেওয়ার পরেই তাকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ করা হয়। অ্যাসোসিয়েশন অব ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর) নামের একটি সংগঠন এই নিয়োগকে অবৈধ বলে দাবি করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। পরে নির্বাচন কমিশনার পদে সাবেক আমলা অরুণ গোয়েলকেই বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।

নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে অরুণ কুমারকে পদত্যাগ করা থেকে বিরত রাখার প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি এক রকম জোর করেই পদত্যাগ করেছেন। শিগগিরই শূন্যপদে নিয়োগ করা হবে বলে দাবি করেছে সূত্রটি।

এদিকে, ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস পার্টির প্রধান মল্লিকার্জুন খাড়গে অরুণ গোয়েলের আকস্মিক পদত্যাগের কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

এক্স-এ এক পোস্টে তিনি বলেছেন, “ইলেকশন কমিশন নাকি ইলেকশন ‘ওমিশন’? ভারতে এখন মাত্র একজন নির্বাচন কমিশনার রয়েছেন, যেখানে কয়েক দিনের মধ্যে লোকসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে। কেন?”

পোস্টে তিনি আরো লেখেন, ‘যেমনটা আমি আগেই বলেছি, আমরা যদি আমাদের স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের নিয়মতান্ত্রিক পতন বন্ধ না করি, তাহলে আমাদের গণতন্ত্রের স্থান একনায়কতন্ত্র দখল করে নেবে! যেহেতু নির্বাচন কমিশনার বাছাইয়ের নতুন প্রক্রিয়ায় সমস্ত ক্ষমতা কার্যকরভাবে ক্ষমতাসীন দল এবং প্রধানমন্ত্রীর হাতে কুক্ষিগত, তাহলে পরবর্তী মেয়াদ শেষ হওয়ার ২৩ দিন পরেও কেন নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়নি? মোদি সরকারকে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে এবং যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা দিতে হবে।’

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, নতুন নির্বাচন কমিশনের বাছাইয়ের জন্য আগামী ১৫ মার্চ বৈঠক হতে পারে। বৈঠকের নেতৃত্ব প্রদানের ভূমিকায় থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উপস্থিত থাকতে পারেন কংগ্রেসের প্রতিনিধিও।

ভারতে সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে দুইজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দিতে হবে। এভাবে তাড়াহুড়ো করে নিয়োগ প্রদান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা সাকিত গোখলে।

Check Also

রাফায় ইসরায়েলি হামলায় একই পরিবারের ৯ জনের মৃত্যু

ফিলিস্তিনের রাফায় ইসরাইলি হামলায় একই পরিবারের ৯ সদস্য নিহত হয়েছেন। তবে বেঁচে গেছে ওই পরিবারের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *