অস্ট্রেলিয়া বিপুল পরিমাণ আঙুর ধ্বংস করলো কেন

বিশ্ববাজারে ওয়াইনের চাহিদা কমে যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ায় আঙুরের আধিক্য দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে দেশটির আঙুরচাষি ও ওয়াইন প্রস্তুতকারকদের তাদের জীবিকা রক্ষায় বিপুল পরিমাণে আঙুর ধ্বংস করে ফেলতে হচ্ছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে ওয়াইনের চাহিদা কমতে থাকায় অস্ট্রেলিয়া বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের বাজারের ওপরই অস্ট্রেলিয়ার ওয়াইন নির্ভরশীল ছিল। তবে চীনের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দেশটি বিপাকে পড়েছে। রয়টার্স বলছে, সস্তা রেড ওয়াইনের চাহিদা কমে যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার চাষি ও ওয়াইন প্রস্তুতকারকরা বিপদে পড়েছেন।

বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ওয়াইন রফতানিকারী দেশ অস্ট্রেলিয়া। ২০২৩ সালের মধ্যভাগে দেশটির হাতে প্রায় দুই বিলিয়ন বা ২০০ কোটি লিটার ওয়াইন ছিল। প্রায় দুই বছরের উৎপাদন এটি। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবে অনেক উৎপাদক যেকোনো মূল্যে বাজারে ওয়াইন ছেড়ে দেওয়ার পক্ষপাতী।

অস্ট্রেলিয়ার চতুর্থ প্রজন্মের আঙুর উৎপাদক জেমস ক্রেমাসসো। তিনি রয়টার্সকে হতাশার সুরে বলেন, কত দিন আর এভাবে বেশি উৎপাদন করে লোকসান দেওয়া যায়। এভাবে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। রয়টার্সকে এসব কথা বলার সময় নিজ বাগানে আঙুর ধ্বংস করছিলেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়ার আঙুরের দুই-তৃতীয়াংশ উৎপাদিত হয় দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিফিথ শহর আর এর আশপাশে। মূলত সমতলের সেচ দেওয়া জমিতেই আঙুরের চাষ হয়। ১৯৫০-এর দশকে ইতালির অভিবাসীরা এই আঙুর চাষের কৌশল সঙ্গে করে এনেছিলেন।

ট্রেজারি ওয়াইনস ও কার্লাইল গ্রুপের মতো ওয়াইন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখন দামি ওয়াইন উৎপাদনে জোর দিয়েছে। সে কারণেই সস্তা রেড ওয়াইনের আঙুর জোগানদাতা চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। গাছে শুকিয়ে যাওয়া আঙুরের পরিমাণ বাড়ছে দিনকে দিন।

রয়টার্স জানিয়েছে, দাম কমে যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার বিপুল পরিমাণ ক্ষেত থেকে এখন শুকিয়ে যাওয়া আঙুর তুলে ফেলা একটা চ্যালেঞ্জ। গ্রিফিথ অঞ্চলে এ রকম প্রায় ১১ লাখ আঙুরগাছ রয়েছে, যা পরিষ্কার করতে হবে। রয়টার্স বলছে, বিশেষ করে রেড ওয়াইনের দাম কমে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ২০২০ সালে প্রতি টন রেড ওয়াইনের দাম ছিল ৬৫৯ অস্ট্রেলীয় ডলার, ২০২১ সালে তা ৩০৪ ডলারে নেমে আসে।

অনেক চাষি বলছেন, অস্ট্রেলিয়ার অর্ধেক আঙুর তুলে ফেলা হলেও এই সংকটের সমাধান হবে না।

অস্ট্রেলিয়ার সরকার পরিস্থিতির গুরুত্ব স্বীকার করেছে। তবে চাষিরা মনে করছেন এ বিষয়ে সরকারের আরও অনেক করণীয় রয়েছে। এদিকে শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, চিলি, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশও আঙুরের অতি উৎপাদনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

মানুষের অভ্যাস পরিবর্তনের কারণেও এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে। তারা বলছে, স্বাস্থ্যগত কারণে মানুষ অ্যালকোহল পান কমিয়ে দিয়েছে বা পান করলেও দামি ওয়াইন পান করছে। সে জন্য অস্ট্রেলিয়ার সস্তা রেড ওয়াইনের বাজার ধসে গেছে।

Check Also

রাফায় ইসরায়েলি হামলায় একই পরিবারের ৯ জনের মৃত্যু

ফিলিস্তিনের রাফায় ইসরাইলি হামলায় একই পরিবারের ৯ সদস্য নিহত হয়েছেন। তবে বেঁচে গেছে ওই পরিবারের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *