সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেয়ার দুই মাসের মধ্যে নাভি কেটে ফেলা সংক্রান্ত জটিলতায় মারা গেছেন এক তরুণী মা। গত ৫ ফেব্রুয়ারী তার সিজার করা হয়েছিল বরিশালের পূর্ব বগুড়া রোডের ‘সাউথ বেঙ্গল ক্লিনিকে’। ডাক্তার দেলোয়ার হোসেন তার সিজার করেন এবং তারই ত্বত্তাবধানে ১৯ এপ্রিল ঢাকায় রেফার করা হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর রোগীর মৃত্যু ঘটে বলে জানান স্বজনরা।
স্বজনদের অভিযোগ ডাঃ দেলোয়ার হোসেনের ভুল চিকিৎসার কারনেই এই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তারা ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত দাবী করেন এবং দোষী চিকিৎসক ও ক্লিনিকটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবী করেন।
ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি থানাধীন কামারকাঠি গ্রামের আলম শেখের ছেলে সাব্বির শেখ মাত্র দুই বছর আগে বিয়ে করেছেন বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা গ্রামের লামিয়া আক্তার রিয়া (১৯) কে। তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম দিতে এসে গত ৫ ফেব্রুয়ারী ‘সাউথ বেঙ্গল ক্লিনিকে’ অপারেশন করেন ডাঃ দেলোয়ার হোসেন। অপারেশনের পরপরই কাটা স্থানে ইনফেকশন ধরা পরে। কিন্তু ডাক্তার দেলোয়ার তা গুরুত্ব না দিয়ে চারদিন পর আমাদের রিলিজ দিয়ে দেয়।
মৃত লামিয়া আক্তার রিয়ার মা ঝর্না বেগম জানান, বাড়িতে নেয়ার পর থেকেই প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছিল মেয়ের। রীতিমতো যন্ত্রণায় কাতরাতে। ডাক্তারের কাছে জানালে সে সেলাই কেটে ঘাঁ পরিষ্কার করে দেন ও ঔষধ দেন। নথুল্লাবাদে ডাক্তার দেলোয়ারের চেম্বার। সেখানে ঘাঁ থেকে রীতিমতো পঁচা গন্ধ হচ্ছিল। তা দেখে রোজার মধ্যে আবারও অপারেশন করেন ডাক্তার। কী করেছেন তিনি জানেন। তবে পায়খানা রাস্তা বন্ধ করে পাইপে মলমুত্র বের করেন। এরপর ঈদের আগেরদিন আবারো অপারেশন করেন তিনি। তারপরও কোনো উন্নতি না হলে ১৯ এপ্রিল ঢাকায় সরকারি হাসপাতালে পাঠান বলে জানান ঝর্না বেগম।
স্বামী সাব্বির বলেন, সেখানে আইসিউ সাপোর্টে রাখার সব ব্যবস্থা করারও আশ্বাস দেন ডাঃ দেলোয়ার। কিন্তু আইসিউতো দূরের কথা ঢাকার হাসপাতালে একটা বেডও পাইনি। বলতে পারেন সেখানে নেওয়ার পর বিনাচিকিৎসায় মারা গেছেন আমার স্ত্রী। এই দায় সবটাই ডাঃ দেলোয়ার ও এই সাউথ বেঙ্গল ক্লিনিকের।
তারা এই ক্লিনিক ও ডাক্তারের বিরুদ্ধে তদন্ত করে জরুরী শাস্তির দাবী জানিয়ে বলেন, তা না হলে এরা এভাবে ভুল চিকিৎসা করে আরো অনেকের জীবন নিয়ে খেলবে।
২১ এপ্রিল সকালে ঢাকা থেকে রিয়ার মৃতদেহ সরাসরি সাউথ বেঙ্গল ক্লিনিকে আনা হলে স্বজনদের কান্না ও অভিযোগের কারণে এই ঘটনা চারিদিকে জানাজানি হয়। সাউথ বেঙ্গল ক্লিনিকে তখন শুধু আয়া ছাড়া আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাকর্মীদের হস্তক্ষেপে আপোষ মিমাংসা করা হয়েছে বলে জানালেন বরিশাল মডেল থানার সাব ইন্সপেক্টর জিয়ারুল ইসলাম।