৮১ বছর পূর্বে স্থাপিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মানের কাজ শুরুর পর রহস্যজনক কারণে স্থান পরিবর্তন করার ষড়যন্ত্রকে ঘিরে স্থানীয় দুইগ্রুপের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পরেছে। এ নিয়ে যেকোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গ্রামের উত্তেজিত শত শত নারী-পুরুষ, স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবক সদস্যরা আজ রবিবার (২১) এপ্রিল সকালে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। ঘটনাটি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রমজানকাঠী এলাকার।
সকাল দশটা থেকে সাড়ে এগারোটার পর্যন্ত স্কুল প্রাঙ্গণে মানববন্ধন চলাকালীন সময় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা কঠোর হুশিয়ারী দিয়ে বলেছেন, যান দেবো তবুও গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানের ৮১ বছরের ঐতিহ্যবাহী স্কুল ভবন অন্যত্র সরিয়ে নিতে দেবোনা। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জিয়াউদ্দিন মনিরের সভাপতিত্বে বক্তারা বলেন, ১৯৪৩ সালে ১নং রমজানকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে স্থাপিত হয়। ৩০ বছর পূর্বে ১৯৯৪ সালে স্কুলের ভবন পূনঃনির্মান করা হয়েছে। শুরু থেকে অদ্যবর্ধি স্কুলটি সুনামের সাথে পরিচালিত হচ্ছে। বক্তারা আরও বলেন, সম্প্রতি সময়ে স্কুলের নতুন ভবন বরাদ্দ করা হয়। টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মের্সাস মালাসি এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধীকারী আশিকুর রহমান শাওন ভবন নির্মান কাজের দায়িপ্ত পান।
পরবর্তীতে উপজেলা প্রকৌশলীর উপস্থিতিতে ঠিকাদার ভবন নির্মানের কাজ শুরু করেন। ঠিকাদার আশিকুর রহমান শাওন অভিযোগ করে বলেন, ভবন নির্মানের কাজ শুরুর ১৫দিন পর উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম তার (ঠিকাদার) কাছে তিন লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা না দিলে স্কুলের ভবন নির্মান করতে দিবেন না বলেও হুমকি প্রদর্শন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ঘুষের টাকা না পেয়ে উপজেলা প্রাথমিক সহকারি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম নানা অজুহাতে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে উপজেলা প্রকৌশলীকে দিয়ে ভবন নির্মানের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার জন্য পত্র প্রেরণ করিয়েছেন।
স্থানীয় শিক্ষানুরাগী সৈয়দ আবুল কালাম বলেন, সু-চতুর উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ঘুষের টাকা না পেয়ে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ গ্রহণ করে তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। যেকারণে ৮১ বছরের স্কুল ভবনটি প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্বের উজিরপুর সীমান্তে নির্মানের জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করেন। বিষয়টি জানতে পেরে বরিশাল জজ কোর্টের সরনাপন্ন হওয়ার পর বর্তমান স্থানেই স্কুল ভবন নির্মানের রায় ঘোষণা করা হয়। এ রায়ের পর ক্ষিপ্ত হয়ে উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম নতুন করে ৮১ বছরের স্কুলটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন।
পরবর্তীতে এলাকাবাসি হাইকোর্টের মাধ্যমে স্কুল অন্যত্র সরিয়ে না নেওয়ার জন্য স্থগিতাদেশ জারি করিয়েছেন। শিক্ষানুরাগী সৈয়দ আবুল কালাম অভিযোগ করে বলেন, উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ অমান্য করে অতিসম্প্রতি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ভবনটি অন্যত্র নির্মানের জন্য চিঠি প্রেরণ করিয়েছেন। এ ঘটনার পর এলাকাবাসির মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। ফলশ্রুতিতে বর্তমান স্থানেই নতুন ভবন নির্মানের দাবিসহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাথমিক সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শত শত গ্রামবাসি একত্রিত হয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। সূত্রমতে, এরপূর্বে ঘুষ দাবির অভিযোগে ঠিকাদার উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।