যেকোন সময়ে গ্রেফতার তসিলদার রুহুল আমিন! স্টাফ রিপোর্টার ॥ সেই বিতকিত তসিলদার রুহুলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী ওয়ারেন্ট জারি করেছেন বরিশালের আদালত। অর্থের বিনিময়ে কাগজে স্বাক্ষর প্রদান, জাল-জালিয়াতি চক্রের সাথে সরাসরি জড়িত থাকার পরেও অদৃশ্য শক্তির প্রভাব খাটিয়ে একের পর এক অপক্রর্ম চালিয়ে গেলেও শাস্তির বদলে দেয়া হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ তসিল অফিসের দায়িত্ব।
নিজ অফিস কর্তৃপক্ষদের ম্যানেজ করে চলতে পারলেও আদালতের হাতে ধরা পড়লেন এই বিতর্কিত কর্মকর্তা রুহুল আমিন।
- আরো পড়ুন: বৈধ কাজে ‘বিসমিল্লাহ’ বলার উপকারিতা
- আরো পড়ুন: খাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে গেলে কী করবেন?
- আরো পড়ুন: খাওয়ার আগে ‘বিসমিল্লাহ’ না বললে কি খাবার হারাম হবে?
ভুয়া কাগজপত্র তৈরী করে অন্যের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ এনে মামলা করা হয় তসিলদার রুহুল আমিন ও শশুর হাবিবুর রহমান গংদের বিরুদ্ধে। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের প্রমাণ মেলার পর বরিশালের একটি আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন থানা পুলিশ। বিজ্ঞ বিচারক তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী ওয়ারেন্ট ইস্যু জারি করে। গত বছরের ৮ ই মার্চ সময়ের বার্তায় সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে তসিলদার রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে।
আর সময়ের বার্তা‘র সংবাদই সত্য হতে চলছে! সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছিল, এক সময়ের শিবির ক্যাডার রুহুল আমিন! শ্বশুর বিএনপির ক্যাডার! এই দুই ক্যাডারের অত্যাচারে প্রতিনিয়ত কান্নায় জর্জরিত হচ্ছেন বরিশাল সদর উপজালাধীন রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের শত শত অসহায় মানুষ। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে শ্বশুর-জামাই মিলে কেড়ে নিচ্ছে গরীব ও অসহায় মানুষের অগনিত সম্পত্তি।
জামাই-শশুরের বিরুদ্ধে বরিশালের একটি আদালতে মামলাও দায়ের করেন ভূক্তভোগী সাজেদা বেগম নামের একজন অসহায় নারী। সাজেদার দাবি, শ্বশুর-জামাইর অর্থ আর ক্ষমতার প্রভাবে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভূক্তভোগী পরিবাররা। সাজেদার পৈত্রিক সম্পত্তি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে দখল করার চেষ্টা চালায় তসিলদার রুহুল আমিন ও শশুর হাবিবুর রহমান মিন্টু।
১৯৫৭ সালের একটি ডিক্রি মূলে বেশ কিছু এলাকায় সম্পত্তি দাবী করে হয়রানি করছেন তসিলদার রুহুল আমিন ও শশুর হাবিবুর রহমান মিন্টু। ডিক্রিকৃত কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৯৫৭ সালে বরিশালের ২য় সাব জজ আদালতের দেওয়ানী মামলার ৪৯/১৯৫৭ নং নথীতে উল্লেখিত মো: মুনসুর আলী খাঁন ও সৈয়দ আশ্রাব আলীকে সম্পত্তির মালিক দেখানো হয়েছে। মূলত ওই সম্পত্তির মালিক অন্য কেউ। মো: মুনসুর আলী খাঁন ও সৈয়দ আশ্রাব আলীকে জমির মালিক দেখিয়ে একটি জাল ডিক্রি তৈরী করে সম্পত্তি দখল করার চেষ্টা করেন জামাই-শ্বশুর দুইজনে।
- আরো পড়ুন: ‘বিসমিল্লাহ’ পড়বেন যে কারণে
- আরো পড়ুন: অমুসলিমের দোয়া কি আল্লাহ কবুল করেন?
- আরো পড়ুন: রোগীকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত ও মর্যাদা
বরিশাল জেলা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবি বিপুল চন্দ্র রায় সময়ের বার্তাকে জানান, ৪৯/১৯৫৭ নং মোকদ্দমাটির সাচিং এবং স্যুট রেজিষ্ট্রারের পর্যালোচনা করে দেখা যায় ডিক্রির কাগজে একাধিক জায়গা থেকে সম্পত্তির মালিক মো: মুনসুর আলী খাঁন ও সৈয়দ আশ্রাব আলীকে দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন, আইনগত ভাবে একাধিক যায়গা থেকে জমির মালিক দেখানো কোন বিধান নাই।
জমির মালিকগণ কেউ পত্তন প্রদান করেন, নিয়ম অনুযায়ী পত্তন সংক্রান্ত কবুলিয়াত, দাখিলা, পাট্টা প্রভৃতি বিদ্যমান রাখার নিয়ম এবং আ.এস ও এস এ পর্চায় প্রজাদের নাম অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই সিনিয়র আইনজীবি সময়ের বার্তাকে আরো বলেন,
সম্বাবত ৪৯/৫৭ নং দেওয়ানী মামলাটির নথী যে কোন কারনে হউক মিস ফাইল হওয়ার কারনে জাল জালিয়াতির প্রকৃতির লোকজন জ্ঞাত জানতে পেরে পরস্পর যোগাযোগের মাধ্যমে সম্পূর্ন জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়া ডিক্রি জাতীয় কাগজ তৈরী করিয়া সম্পত্তি দাবী করেন। যাহা ৪৯/৫৭ নং দেওয়ানী মোকদ্দমার ডিক্রির বরাতে এবং ১ম সাব জজ আদালতের ৪২/৪৯ নং টাকার মোকদ্দমায় দাবী করা হয়েছে। অত:এব একই ব্যক্তিগণ একই সম্পত্তি দুই ভাবে দাবী করার মাধ্যমে স্পষ্ট যে, উক্ত ব্যক্তিদের কোন দাবীই সঠিক না।
বরিশাল সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: ইলিয়াছুর রহমানের সই জাল করে, ২০১৫ সালের জুলাই মাসের ৯ তারিখ সোলনার ২নং মৌজার ৮৬৫ খতিয়ানের ৩৮৮, ৩৯১, ৪৯৫, ৪৯৪, ৪৯৭, ৪৯০, ৩৯০, ৪৯৯, ৫০০ ও ৫০১ দাগের মোট চার একর আটাইশ শতাংশ জমি নিজ নামে নামজারী করে নেন, বরিশাল সদর উপজেলার কড়াপুর-রায়পাশা ইউনিয়নের, মৃত: মোতাহার আলী হাওলাদারের ছেলে মো: হাবিবুর রহমান মিন্টু। যার সহযোগিতা করেন বর্তমান সাহেবেরহাট ইউনিয়নের তসিলদার ও হাবিবুর রহমান মিন্টুর মেয়ে জামাই মো: রুহুল আমিন। মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তসিলদার রুহুল আমিন এর কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে ২০ জানুয়ারী, তসিলদার রুহুল আমিন ও তার শশুর হাবিবুর রহমান মিন্টু, বাদশা খান এবং শাহাদাত সরদারের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৪৬৭,৪৬৮ ও ৪৭১ ধারার অপরাধ প্রাথমিক ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামীদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ চীফ মে্েট্রাপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন, বরিশাল সিআইডি এর উপ পুলিশ পরিদর্শক (নি:) মিঠুন কুমার মন্ডল।
বিচারক তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আসামীদের বিরুদ্ধে চলতি মাসের ২৩ তারিখে গ্রেফতারী ওয়ারেন্ট ইস্যূ করেছেন। কাউনিয়া থানার এসআই জসিম বলেন, আসামী রুহুলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী ওয়ারেন্ট এর কপি তিনি ইতোপূর্বে হাতে পেয়েছেন, রুহুল আমিনকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান অবহৃত আছে।
যুক্ত হোন ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।