সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ নাজমুস সাকিব
করোনাকালে অর্থ সঙ্কটে পড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করছে। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, ভবন ভাড়া অনেক ক্ষেত্রেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অনুমোদনহীন কোর্স ও ক্যাম্পাস পরিচালনা, আসনের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি, ট্রাস্ট নিয়ে দ্বন্দ্ব, দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে এ ধরনের অভিযোগ নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে দফায় দফায় নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এবার বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে খোদ বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি (এপিইউবি)। সম্প্রতি অনিয়ম-দুর্নীতি বিষয়ে সতর্ক করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি দিয়েছে বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের এ সংগঠন।
দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) চেয়ারম্যান বরাবর এ চিঠি পাঠিয়েছে এপিইউবি। চিঠিতে বলা হয়েছে, বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অনিয়ম, অনুমোদনহীন কোর্স ও ক্যাম্পাস পরিচালনা, বিধি-বহির্ভূতভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি, ট্রাস্টি বোর্ডের দ্বন্দ্বসহ উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে সমিতি বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। প্রায়ই গণমাধ্যমে আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা না করার সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় এ বিষয়ে জনমনে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টির পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভাবমূর্তি প্রশ্নের সম্মুখীন।
এ প্রসঙ্গে এপিইউবি চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বলেন, নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এমনিতেই বড় সংকটে রয়েছে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খাত। পাশাপাশি অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনায় ভাবমূর্তির সংকটে পড়ছে এ খাত। তাই সমিতির পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সাবধান করে দিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। আমরা চাই, সব বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও ইউজিসির নির্দেশনা মেনে চলুক। বিশেষ করে অনুমোদনহীনভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি, অবৈধভাবে প্রোগ্রাম চালানো—এ ধরনের অনিয়মগুলো বন্ধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিওটিগুলোকে এপিইউবি জানিয়েছে, সমিতি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব মহলের সঙ্গে আলোচনা করে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য আপনাদের বক্তব্য ও মতামত প্রদানের আহ্বান জানাচ্ছি। কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রচলিত আইন, বিধি, নীতিমালায় কোনো ধরনের সংশোধন প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জরুরি ভিত্তিতে মতামত পাঠাতে বলেছে এপিইউবি।
এপিইউবির দেয়া চিঠির একদম শেষ দিকে বলা হয়, করোনাকালীন সময়ে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সচল রাখার ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আগামী দিনেও সবার সহযোগিতায় সব ধরনের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে ভূমিকা রাখবে সমিতি। তবে সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দায়িত্বশীল ভূমিকা একান্ত অপরিহার্য। সমিতি আশা করে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত আইন ও নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করবে।
এদিকে সমিতির উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র বলেন, দেশের বেসরকারি খাতের উচ্চশিক্ষায় গত এক দশকে ব্যাপক হারে প্রসার ঘটেছে। এ প্রসার অনেকাংশেই সংখ্যায় সীমাবদ্ধ ছিল। তাই আমরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা ও গবেষণার মানে অনেক বেশি জোর দিচ্ছি। তবে এক্ষেত্রে বেশ-কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অনিয়ম প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইন মানার ক্ষেত্রে না হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আমরা অনেক সময় শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে তাদের অনেক ছাড় দিয়ে থাকি। কিন্তু অনেকেই এর সুযোগ নিতে চান।
এদিকে এপিইউবির একটি সূত্র জানায়, যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপিত হবে, তাদের কাছে আলাদা করে ব্যাখ্যা জানতে চাইবে সমিতি। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজিকে চিঠি দেয়ার প্রস্তুতি চলছে।
এ প্রসঙ্গে এপিইউবি চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বলেন, কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতির যেসব খবর বের হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য আমাদের জানাতে বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদের জানালে আমরা সে আলোকে জবাব দিতে পারব। এছাড়া একটি বিশ্ববিদ্যালয় যখন কোনো অনিয়ম করে, তখন এটা গোটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই আমরা এ বিষয়গুলোকে এখন থেকে গুরুত্ব সহকারে দেখব।