নাবালিকা মেয়েদের গৃহহীন করতে মরিয়া বাবা

রিফাত সুলতানা রেশমী এবং প্রিন্সেস আমিরা রাজধানী ঢাকার পশ্চিম রামপুরা নিবাসী রশিদ বেপারী এবং ডাঃ আখি আক্তার দম্পতি যুগলের দুই নাবালিকা কন্যা।তাদের জীবনের শুরুর দিকের সময়কাল ভালভাবে কাটলেও তাদের পিতা রশিদ ব্যাপারীর যৌতুকলোভী দৃষ্টিভঙ্গী, স্ত্রীকে নির্যাতন এবং সন্তানদের ভরনপোষন ও ভবিষ্যতের বিষয়ে উদাসিনতা এই নাবালালিকা কন্যাদ্বয়ের জীবনকে করেছে অনিশ্চিত এবং কষ্টের।

সরেজমিনে জানাগেছে নাবালিকা কন্যাদ্বয়ের পিতা নানা অজুহাতে ও মিথ্যা অপবাদে তাদের মাতা মেধাবী ডাক্তার আখি আক্তারকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত।গত দুই বছর পর্যন্ত নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে এবং করোনাকালীন সময়ে ব্যবসা মন্দা হওয়ার কথা বলে নাবালিকা কন্যাদ্বয়ের মাতার নিকট যৌতুক দাবি করে আসছিল এবং স্ত্রী ও কন্যাদের ভরনপোষন প্রদান করা সম্পূর্ন বন্ধ করে দেয়।কন্যদ্বয়ের মাতার ডাক্তারি পেশা থেকে অর্জিত আয় দিয়ে দুইকন্যার খাদ্য, বস্ত্র,শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যয় এবং নিজ খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে,মাঝেমধ্যে চরম কষ্টে দিন কাটাতে হয়েছে কিন্তু কন্যাদ্বয়ের পিতা রশিদ ব্যাপারী এতই পাষান যে নিজ ঔরষজাত কন্যাদের কষ্টের কথা শুনেও কোন খোজখবর নেয়নি।

ডাঃ আখি আক্তারের ডাক্তারি পেশা থেকে অর্জিত আয়ের একটি অংশ রশিদ ব্যাপারিকে না দিলে সে তার স্ত্রীকে তালাক দিবে মর্মে হুমকি দিত।ডাঃ আখি আক্তার তা দিতে অস্বীকার করায় ডাঃ আখি আক্তারকে চাকু দিয়ে আঘাত করে মারাত্মক জখম করে।উক্ত বিষয়ে ডাঃ আখি আক্তার রশিদ বেপারীর বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানার মামলা নং ৭১(৩)২২ দায়ের করেন।মামলাটি বর্তমানে বিজ্ঞ আদালতে চলমান রয়েছে।এখানে উল্লেখ্য যে ডাঃ আখি আক্তার কর্তৃক মামলা দায়েরের পূর্বে রশিদ বেপারী ডাঃ আখি আক্তার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেছে যা সে বিজ্ঞ আদালতে প্রমান করতে না পারায় নিষ্পত্তি হয়েছে।

পরবর্তিতে রশিদ বেপারী দীর্ঘ ১৭ বছরের সংসার এবং সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে হঠাৎ করে ডাঃ আখি আক্তারকে তালাকের নোটিশ পাঠায়,যাতে তাদের দুজনের দাম্পত্য সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং নাবালিকা কন্যাদ্বয়ের জীবন হয়ে যায় অনিশ্চিত।বিগত দুই বছর থেকে স্ত্রী ও কন্যাদ্বয়ের ভরনপোষন না দেয়ায় ভরণপোষণের দাবিতে বিজ্ঞ পারবারিক আদালতে ডাঃ আক্তারের দায়েরকৃত পারিবারিক মোকদ্দমা নং-১৫৭/২২,বর্তমানে ঢাকার বিজ্ঞ পারিবারিক আদালাতে চলমান।কিন্তু রশিদ বেপারী তার স্ত্রী ও নাবালিকা কন্যাদ্বয়ের ভরনপোষনের বিষয়ে সম্পূর্ন অবহেলা ও উদাসিন থাকায় শিক্ষা,চিকিৎসা ও খাদ্যবস্ত্রের ব্যয় সামলাতে ডাঃ আখি আক্তারের কষ্ট হচ্ছে এবং কন্যাদ্বয় মানবিক জীবন যাপন করিতেছে।

দুজন নাবালিকা কন্যা সন্তানের পিতা হওয়া সত্বেও তাদের সামান্য খোঁজখবর ও নিচ্ছে না পিতা রশীদ বেপারী। ডাঃ আখি আক্তার ও রশীদ বেপারীর দাম্পত্য সম্পর্ক চলাকালে ক্রয়কৃত ফ্ল্যাটে নাবালিকা কন্যাদ্বয় তাদের পিতা মাতার সাথে থাকত,যদিও ফ্ল্যাটটি ক্রয়ে ডাঃ আখি আক্তারও কিছু টাকা দিয়েছে তারপরেও কাগজপত্র রশিদ বেপারীর নামে থাকায় সে ফ্ল্যাট থেকে নাবালিকা কন্যাদ্বয় সহ তার মাকে বের করে দেয়ার অপচেষ্টায় আছে।যারফলে নাবালিকা কন্যাদ্বয়ের স্বাভাবিক জীবনযাপন ও শিক্ষাগ্রহন চালিয়ে যাওয়া অনিশ্চিয়তা ও চরম হুমকিতে রয়েছে।এবিষয়ে ডাঃ আখি আক্তারকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমার এসএসসি পরীক্ষার পর বিবাহ হয়,বিবাহের পূর্বে আমার স্বামী আমাদের জানিয়েছিল সে শিক্ষিত,বিবাহের পরে জানতে পারি সে শিক্ষিত নয়,আমি বহু কষ্ট করে সংসার করার পাশাপাশি ডাক্তারি পড়াশুনা করে পাশ করেছি,পড়াশুনা ছেড়ে দিতে আমার স্বামী আমাকে অনেক নির্যাতন করত,তারপরেও আমি বাবার বাড়ির হেল্প নিয়ে টিউশনি করে পড়াশুনা চালিয়ে গেছি।

এখন পাশ করার পর সে আমাকে বলতেছে আমার ইনকামের একটি অংশ যৌতুক বাবদ তাকে দিতে,আমি সাধ্যমত দিলেও বাচ্ছাদের শিক্ষা ও ভরনপোষন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মাঝেমধ্যে দিতে অস্বীকার করায় আমাকে চাকু দিয়ে আঘাত করে জখম করে দিয়েছে।১৭ বছর সংসার করার পর তালাক দিয়েছে,দুই কন্যা ও আমার কোন ভরনপোষন দিচ্ছে না।যদি কন্যাদ্বয়ের ভরনপোষন ঠিকমত দিত,আমি বাসা ভাড়া করে কন্যাদ্বয়কে নিয়ে যেভাবে পারি তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতাম,কিন্তু তার কন্যদের কোন ভরনপোষন দিচ্ছেনা এবং নাবালিকা মেয়েদেরসহ ফ্ল্যাট থেকে বের করে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে,নিজ সন্তানকে সে পথে ঠেলে দিতে চাচ্ছে।

এর চেয়ে নিষ্ঠুরতা আর কী হতে পারে?তাদের লেখাপড়াটা শেষ হবার সুযোগটা পর্যন্ত বন্ধ করতে চাচ্ছে।আমি তো আমার কন্যাদের কষ্টে রাখতে পারিনা,নিজের সবকিছু ত্যাগ করে তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি একজন বাবা হয়ে তাদের জীবনকে এত কষ্টে ও অনিশ্চয়তায় কিভাবে রাখে?এবিষয়ে নাবালিকা কন্যা এসএসসি পরীক্ষার্থী রিফাত সুলতানা রেশমিকে জিজ্ঞাসা করলে সে কান্না করে এবং বলে যে,তাদের পিতা তাদের কোন খোঁজখবর নেয়না,কোরবানীর একটুকরা মাংস দেয় না,ঈদে কোন জামা দেয়না,তার জন্মতারিখ পর্যন্ত মনে রাখেনা,অসুস্থ্য পর্যন্ত হলে বাবা খবর নেয়না,সে ফ্ল্যাটে থেকেই পড়ালেখা চালাতে চায়,নাহলে কোথায় থাকবে তা ভেবে আবার কেঁদে দেয়।এবিষয়ে রশীদ বেপারীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।

Check Also

ই-অরেঞ্জের মামলায় তিন আসামীকে ৫ দিনের রিমান্ড

ই-অরেঞ্জের মামলায় তিন আসামীকে ৫ দিনের রিমান্ড

স্টাফ রিপোর্টার :: বহুল আলোচিত ই-অরেঞ্জের গুলশান থানার ১৪ (৮) ২১ নং মামলায় সোমবার (১৩ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *