ভাষাসৈনিক-আশাসৈনিক নুরুল ইসলাম খান ।। ভাষাসৈনিক-আশাসৈনিক নুরুল ইসলাম খানের প্রতি শ্রদ্ধা অবিরাম
মোমিন মেহেদী,
নুরুল ইসলাম খান। নতুন প্রজন্মের কাছে অপরিচিত হলেও ইতিহাসে স্মরণিয় হয়ে আছেন নিজের কাজের জন্য। নীতি-আদর্শ-সম্ভাবনার রাস্তা ধরে রাজনীতিতে তিনি করেছিলেন নিজের অবস্থান নির্মাণ। অল্পকথায় যদি বলতে চাই, তাহলে বলা যায়- নুরুল ইসলাম খান ওরফে এন. আই. খান বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের কর্মী ও বরেণ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
অনলাইন প্রেস ইউনিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও দৈনিক আজকের সময়ের বার্তার সম্পাদক এম লোকমান হোসেঈন-এর প্রেরণায় আমার এই লেখা লিখতে গিয়ে প্রচন্ডরকম হতাশ হয়েছি। কারণ, বরেণ্য রাজনীতিক-ভাষাসৈনিক নুরুল ইসলাম খান-এর স্মৃতিকে ধরে রাখতে রাষ্ট্রিয়ভাবে কোন উদ্যেগ নেই। নেই তার উপর কোন গ্রন্থ বা স্মৃতি জাদুঘর। যা হওয়া প্রয়োজন রাষ্ট্রিয় অর্থায়নে ও তত্বাবধায়নে। এ বিষয়ে আবারো লিখবো-বলবো বলে আশা করছি।
২৪ নভেম্বর ১৯২১ সালে লোভ মোহহীন নিরন্তর গণকল্যাণে নিবেদিত বনেদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন নুরুল ইসলাম খান। তাঁর পিতার ইতিহাস যদি দেখি তাহলে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তান এবং বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতি-শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির রেখাচিত্র ভেসে উঠবে। খান বাহাদুর হাশেম আলী খান ছিলেন বাংলাদেশের অবিভক্ত বাংলার মন্ত্রী ও বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য ছিলেন। এছাড়া তিনি একজন রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, সমাজসেবক ছিলেন। তিনি শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন এবং ১৯৪১ সালে এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাকে ব্রিটিশ সরকার হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করায় ১৯৩৫ সালে খান বাহাদুর উপাদি দেয়।
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-অতিসংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-সংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-১
নুরুল ইসলাম খানের রাজনৈতিক আবহও ছিলো দেশ-মাতৃকার জন্য নিরলস-সাহসগাঁথা। তিনি তাঁর বাবা খান বাহাদুর হাশেম আলী খানের রাজনীতি-শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির পথ ধরে সারাজীবন নিবেদিত ছিলেন। বনেদি পরিবারের সদস্য হওয়ার সুবাদে দেশ-মানুষ-মাটির জন্য নিবেদিত থেকে কাজ করেছেন শিক্ষার উন্নয়নে-সংস্কৃতির উত্তরণে। ধর্ম-মানবতা-সমাজ-সভ্যতায় অগ্রসর মননপুরুষ নুরুল ইসলাম খান রাজনীতি ছাড়াও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সক্রিয় ছিলেন সবসময়।
পিতা মাতা উভয়ের কাছ থেকেই প্রেরণা লাভ করে নুরুল ইসলাম খান ছাত্র জীবন থেকেই দেশ ও সমাজসেবায় ব্রতী হন এবং ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগদান করেন। বিপ্লবী দলে যোগদান করে তিনি জেলা ফরওয়ার্ড ব্লকের অফিস সেক্রেটারী এবং জেলা ছাত্র ফেডারেশনের সহকারী সেক্রেটারী পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৪২ সালের “ভারত ছাড় আন্দোলন”-এ সক্রিয় অংশ নেন এবং তখন তাঁর সম্পাদনায় কোলকাতা থেকে “পলাশী” নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের হয়।
আমাদের রাজনীতিতে তিনি নিজের যে অবস্থান নির্মাণ করেছিলেন, তা কেবলই জনকল্যাণের জন্য নিবেদিত থাকতো। আর একারণেই দেশ বিভাগোত্তর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে আলোকিত হয়েছিলেন ধর্ম-মানবিক-কর্মবীর নুরুল ইসলাম খান। আমরা আজ যে বাংলা ভাষায় অবিরাম মুগ্ধতায় কথা বলি, সেই বাংলা ভাষার জন্য, বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন নুরুল ইসলাম খান। এসময় তিনি অন্যান্য ভাষাসৈনিকদের মত আন্দোলন-সংগ্রামের রাস্তা ধরে এগিয়ে চলার পাশাপাশি বরিশালের ছাত্র যুবকদের নিয়ে “পাঠক মজলিস” এবং “সাহিত্য মাহফিল” প্রতিষ্ঠা করেন।
মুগ্ধ করা সত্য কথা হলো এই যে, জাতিকে আলোকিত করতে তিনি ছিলেন বদ্ধ পরিকর। আর তারই ধারাবাহিকতায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে আলোর মশাল জ¦ালানো নিপুন আলোর কারিগর নুরুল ইসলাম খান ১৯৫৪ সাল থেকে বরিশালে তিনি “সাপ্তাহিক খাদেম” নামে একটি পত্রিকা বের করেন।
তিনি বরিশাল প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বাকেরগঞ্জ জেলা সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫৮ সনে তিনি মরহুম জননেতা মৌলানা ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি এই পার্টির বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন। ১৯৭৪ সালে গঠিত ইউনাইটেড পিপলস পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং জাতীয় কার্যকরী কমিটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও বরিশাল জেলা কমিটির সভাপতি ছিলেন।
ভাষাসৈনিক-আশাসৈনিক নুরুল ইসলাম খান
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-৩
পৃথিবীব্যাপী মানবতা-সমাজ-সভ্যতার আমন্ত্রণ পৌছে দেয়ার জন্য নিরন্তর রাজপথে থাকা আলোর মানুষ নুরুল ইসলাম খান বার্মার রাজধানী রেঙ্গুনে অনুষ্ঠিত “এশিয়ান স্যোসালিষ্ট কনফারেন্স”-এ তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান স্যোসালিষ্ট পার্টির প্রতিনিধি হয়ে যোগ দেন। শুধু এখানেই শেষ নয়; আমাদের দেশকে আলোকিত রাখতে আলোর পথে ডাকতে তিনি জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন এর জেলা শাখার সেক্রেটারী এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জেলা শাখার চেয়ারম্যান ও পাকিস্তান ন্যাশনাল ইয়ুথ কাউন্সিলের জাতীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান-এর দায়িত্ব পালন করেছেন।
আধুনিক বরিশালের এখন যে চিত্র তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা দেখতে পায়, এক কথায় সেই আধুনিক বরিশালের গোড়াপত্তন যারা করেছিলেন নুরুল ইসলাম খান তাদের অন্যতম। মানুষের মৌলিক কাজগুলো তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখে যুগের পরে যুগ। তাঁর প্রমাণ খান বাহাদুর হাশেম খান যেমন রেখেছেন, তেমন রেখেছেন তাঁর সন্তান নুরুল ইসলাম খান।
একবিংশ শতাব্দীর রেখাচিত্রে এসে সমৃদ্ধ দেশ গড়ার রাজনীতিকে বুকে লালনের পাশাপাশি সমাজ-সংস্কৃতির উত্তরণে নুরুল ইসলাম খানের সন্তান নজরুল ইসলাম খান-এর কাজ জাতিকে আন্দোলিত করছে। ছাত্র-যুব-জনতার মৌলিক দাবি বাস্তবায়নে নুরুল ইসলাম খানের অসংখ্য শুদ্ধ কাজের সাথে সাথে এই আলোকিত মানুষ বেঁচে থাকবেন নজরুল ইসলাম খানের নীতি-আদর্শ-সততার পথ ধরে। আলোকিত থাকুন নুরুল ইসলাম খান নতুন প্রজন্মের প্রত্যয়ী পথচলায় অবিরাম মুগ্ধতাসহ এই প্রত্যাশা শুদ্ধতার রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে বরাবরের মত অবিরত…
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি
—————————-
৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা ১০০০, ০১৭১২৭৪০০১৫
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।