রোজা থেকেই শক্তি প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেলেন মিশরীয় নারী

বিশ্বের মধ্যে অন্যতম কঠিন শক্তি প্রতিযোগিতা হিসেবে ধরা হয় ওয়ার্ল্ড স্ট্রংম্যান চ্যাম্পিয়নশিপকে। আর সেই প্রতিযোগিতায় সারাদিন রোজা রাখার পর অংশ নিয়ে তাক লাগিয়েছেন এক মিশরীয় নারী। দিনভর পানাহার থেকে বিরত থেকেও শক্তির এ প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতেছেন তিনি।

দুবাইভিত্তিক সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমসের খবর অনুসারে, গত বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুবাইয়ের এমিরেটস স্পোর্টস হোটেলে অনুষ্ঠিত হয় ওয়ার্ল্ড স্ট্রংম্যান চ্যাম্পিয়নশিপ। এতে অংশ নিয়েছিলেন সারাবিশ্বের শক্তিশালী নারী ও পুরুষ প্রতিযোগীরা। কিন্তু তাদের মধ্যে বিশেষভাবে নজর কেড়েছেন মিশরের ভারোত্তলক ফাতিমা আল-জাজার।

৩৮ বছর বয়সী ফাতিমা নারীদের অনূর্ধ্ব-৭৫ কেজি বিভাগে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারতের শক্তিশালী নারী ও ভারোত্তোলন চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে।

এ আসরে পুরুষদের মতো নারী প্রতিযোগীদেরও তিনটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়৷ অনূর্ধ্ব-৭৫ কেজি বিভাগে প্রথম পর্যায়ে ছিল ৬০ কেজি লগ লিফট (তিনবার পুনরাবৃত্তি), তারপরে ১৩০ কেজি অ্যাক্সেল ডেডলিফট (তিনবার পুনরাবৃত্তি); ৩৫ কেজি ডাম্বেল লিফট (তিনবার; এক হাত, সোজা শরীর); এবং ৭০ কেজি স্টোন ১১০ সেন্টিমিটার বারের ওপর তোলা (তিনবার)। এই পুরো পর্যায়টি সম্পূর্ণ করতে সময় দেওয়া হয়েছিল মাত্র দুই মিনিট।

দ্বিতীয় পর্যায়ে ছিল ৮০ কেজি বালির ব্যাগ ১৫ মিটার বহন করা; এরপর ১৫ মিটার ২০০ কেজি ইয়ক রেস; এবং আরও ১৫ মিটার ১৫০ কেজি ফার্মারস ওয়াক। এর সব কিছু এক মিনিটের মধ্যে করতে হতো। এই পর্যায়টি ফাতিমা সম্পন্ন করেছিলেন মাত্র ৪০ সেকেন্ডে।

দৃঢ়তা এবং সংকল্প
এদিন দর্শকরা শক্তিশালী প্রতিযোগীদের দৃঢ়তা দেখে বিস্মিত হন। কিন্তু ফাতিমা আল-জাজার জন্য এটি কেবল দৃঢ়তা এবং সংকল্পের প্রদর্শনই ছিল না। তিনি দেখিয়েছেন, রমজান মাসে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখার পরও মুসলিম ক্রীড়াবিদরা শক্তির খেলায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেন।

প্রতিযোগিতা চলাকালীন বিরতির সময় ফাতিমার সঙ্গে কথা বলেছিল খালিজ টাইমস। এই সময়ও তার মধ্যে দম ফুরিয়ে আসা বা শারীরিকভাবে কোনো দুর্বলতার লক্ষণ দেখা যায়নি।

ফাতিমা বলেছেন, তিনি প্রতিযোগিতার জন্য নিবিড়ভাবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন এবং রমজানের প্রথমদিন থেকেই রোজা রাখছেন।

তিনি বলেন, প্রথম সপ্তাহে প্রশিক্ষণের সময় সামঞ্জস্য করা আসলেই কঠিন ছিল। কারণ আমাকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুশীলন করতে হতো। কিন্তু আমি একটি রুটিন করে নেওয়ার পরে শরীর মানিয়ে নেয় এবং আগের চেয়েও শক্তিশালী বোধ করি। রোজা আমাকে সেই মানসিক শক্তি পেতে সাহায্য করেছে।

ওয়ার্ল্ড স্ট্রংম্যান চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়ার আগে ‘মিশরের সবচেয়ে শক্তিশালী নারী’ হিসেবে পুরস্কার জিতেছিলেন ফাতিমা। এবার দুবাই থেকে ব্রোঞ্জ জিতে বাড়ি ফিরছেন তিনি।

Check Also

রাফায় ইসরায়েলি হামলায় একই পরিবারের ৯ জনের মৃত্যু

ফিলিস্তিনের রাফায় ইসরাইলি হামলায় একই পরিবারের ৯ সদস্য নিহত হয়েছেন। তবে বেঁচে গেছে ওই পরিবারের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *