‘কিউলেক্স মশা নিধনে আমরা খাল পরিষ্কার কার্যক্রম শুরু করেছি। উত্তরার রাজউক খালে প্রচুর কচুরিপানা যার ফলে উত্তরা এলাকায় কিউলেক্স মশা ব্যাপক বেড়ে গেছে। এই খালটির মালিকানা রাজউকের (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ)। আজ এসে জানতে পারলাম এটিতে ওয়াসারও মালিকানা আছে। আমি অনেকবার বলেছি খালটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর করে দেয়ার জন্য। কিন্তু এখনো খালটি হস্তান্তর করা হয়নি। এই এলাকায় নিয়মিত ওষুধ ছিটালেও, খালের কচুরিপানা থেকে প্রচুর মশা জন্মায়। স্থায়ী সমাধানের জন্য খাল পরিষ্কারের কোন বিকল্প নাই৷ তাই মশা নিধনের লক্ষ্যে ডিএনসিসির খাল না হওয়া সত্ত্বেও আমরা পরিষ্কার করছি।’
বুধবার (২০ মার্চ) সকালে রাজধানীর উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের রাজউক খালে ডিএনসিসি কর্তৃক মশক নিধন ও পরিষ্কার কার্যক্রম পরিদর্শনকালে এসব কথা বলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
পরিদর্শনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। শুরুতে ডিএনসিসি মেয়র ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খালের পাড় দিয়ে হেঁটে খালের কিছু অংশ ঘুরে দেখেন। এসময় তারা খালের কচুরিপানায় ব্যাপক কিউলেক্স মশা দেখতে পান।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ঢাকা শহরে সাধারণত কিউলেক্স ও এডিস এই দুই ধরনের মশা। কিউলেক্স মশা আমাদের অনেক বিরক্ত করে, কামড় দেয়। কিউলেক্স মশার কামড়ে মানুষের মৃত্যু হয় না। কিন্তু এডিস মশার কামড়ে মানুষের মৃত্যুঝুঁকি আছে। এডিস মশা মানুষের বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতের জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে জন্মে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য যার যার ঘর, বাড়ি, অফিস, আদালত তাদেরই কিন্তু দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ আমাদের পক্ষে দেখা অসম্ভব কারও বাড়ির ছাদে পানি জমে আছে কি না, কারও ছাদে, বারান্দায় নারিকেলের খোসা, রঙের কৌটা, অব্যবহৃত টায়ার পড়ে আছে কি না। ভবনের বেজমেন্টে গাড়ির গ্যারেজে পানি জমে আছে কি না- সেটি দেখা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। এগুলো নিজেদের দায়িত্ব।’
গতবছর মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটিতে এবং কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলাসহ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের বেজমেন্টে প্রচুর লার্ভা পেয়েছি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মেয়র বলেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ শুধু একা সিটি করপোরেশনের পক্ষে সম্ভব নয়। সবাইকে সচেতন হতে হবে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন। আর কিউলেক্স মশার জন্য খালগুলো পরিষ্কার করছি। গুলশান লেকে, বারিধারা লেকেও প্রচুর মশা। আমরা সেগুলো পরিষ্কার করছি। অন্যান্য সংস্থাকে যার যার জায়গা পরিষ্কার করতে হবে। খালগুলোতে সরাসরি পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ দেওয়ার ফলে অনেক মশার জন্ম হয়। উত্তরা এলাকায় ওয়াসা একটি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ করবে। এটি নির্মাণে কয়েক বছর সময় লেগে যাবে। কিন্তু এই অন্তর্বর্তীকালীন খালগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি।
এসময় তিনি বলেন, উত্তরার রাজউক খালটি আমাদের হস্তান্তর করলে পরিষ্কার করে এখানে একটি নান্দনিক জায়গা করে দেবো। এখানে ওয়াটার বোট চলবে। মাছ চাষও সম্ভব হবে। কিন্তু তার জন্য অবশ্যই পয়ঃবর্জ্যের ব্ল্যাক ওয়াটার (দূষিত পানি) খালে আসা বন্ধ করতে হবে। ওয়াসা ও রাজউককে এগিয়ে আসতে হবে। সব সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঈদের পর থেকেই ব্যাপকভাবে ক্যাম্পেইন শুরু করবো। গতবার মশার লার্ভা নিধনের জৈব কীটনাশক বিটিআই (বাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস) আমিদানির উদ্যোগ নিয়েছিলাম কিন্তু আপনারা জানেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতির কারণে সেটি ব্যবহার করা যায়নি। তাই এবার আমরা সিটি করপোরেশন থেকে সরাসরি বিটিআই আমদানি করছি। আশা করছি আগামী দুই মাসের মধ্যে বিটিআই নিয়ে আসবো। ওষুধ ছিটানোর জন্য অত্যাধুনিক মেশিনও (হুইলবারো মেশিন) আনার প্রক্রিয়া চলছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা বর্ষার আগেই প্রস্তুতি নিয়েছি।
এসময় ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম ডিএনসিসির অঞ্চলগুলো থেকে এডিসের লার্ভা জন্মাতে পারে এমন চিপসের প্যাকেট, আইসক্রিমের কাপ ও অন্যান্য বস্তু অর্থের বিনিময়ে সংগ্রহ করার সিদ্ধান্তের কথা জানান।