নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মে থেকে ধাপে ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে রংপুর সদরসহ আট উপজেলায় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে নিজেকে জাহির করতে সরব হয়ে উঠেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতা। এর মধ্যে কেউ উপজেলা চেয়ারম্যান, কেউ ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক। তারা শুভেচ্ছা পোস্টারসহ বিভিন্ন কায়দায় নিজের প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে দোয়া ও সমর্থন চাইছেন। জাতীয় পার্টিসহ অন্য দলীয়-নির্দলীয় ব্যক্তিরাও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করছেন। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের এ নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি।
আওয়ামী লীগ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। এসব সম্ভাব্য প্রার্থী প্রতিদিনই সভা, সমাবেশ, ওয়াজ মাহফিল, ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে হাজির হচ্ছেন। বিভিন্ন উপায়ে তারা সাধারণ মানুষের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। অনেকে এরই মধ্যে প্রচার শুরু করেছেন। এতে সরগরম হয়ে উঠেছে রংপুরের আট উপজেলার গ্রাম-গঞ্জ ও হাটবাজার। এদিকে স্থানীয় সংসদ-সদস্যের আশীর্বাদসহ কেন্দ্রীয় লবিং করছেন অনেকেই। কেউ কেউ শীর্ষ নেতার আস্থা অর্জনের জন্য ঢাকায় অবস্থান করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে রংপুরের আট উপজেলার মধ্যে পীরগাছা উপজেলায় জাতীয় পার্টি সমর্থিত চেয়ারম্যান রয়েছে। বাকি রংপুর সদর, কাউনিয়া, গঙ্গাচড়া, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ, মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যানরা আওয়ামী লীগ সমর্থিত। এর মধ্যে মিঠাপুকুর উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকার পদত্যাগ করে সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র অংশ নিয়ে জয়ী হন ও রংপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান নাছিমা জামান ববি সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ-সদস্য মনোনীত হয়েছেন। বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগ দলীয়সহ শতাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর নাম শোনা যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় কোনো নির্দেশনা নেই বলে জানিয়েছেন রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা।
এবারের নির্বাচনে সম্ভাব্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন-রংপুর সদর উপজেলার ডা. দেলোয়ার হোসেন, রংপুর সদরের অ্যাড. ফিরোজ কবির চৌধুরী গুঞ্জন, জাহাঙ্গীর হোসেন বকসি, চন্দনপাট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান, মফিজার রহমান রাজু, হরিদেবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এমএম সাব্বির হোসেন, কাউনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মায়া, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম দুলাল, পীরগাছার মনোয়ারুল ইসলাম মাসুদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তসলিম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্ল্যাহ আল মাহমুদ মিলন, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আরিফুল হক লিটন, গঙ্গাচড়ার চেয়ারম্যান রুহুল আমিন, জোনায়েত চৌধুরী, নোহালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ টিটুল, আরিফুজ্জামান লিখন, ব্যবসায়ী কামেল সেরাফি রাজিব, বদরগঞ্জ উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বী সুইট, বদরগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র উত্তম কুমার, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম, তারাগঞ্জ উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান লিটন ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ বাবুল, মিঠাপুকুর উপজেলার বাবু নিরঞ্জন মহন্ত, কামরুজ্জামান কামরু।
তবে এখানে জামায়াতে ইসলামী স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। পীরগঞ্জের বর্তমান চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মণ্ডল, একেএম শায়াদত হোসেন বকুল, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী নির্বাচন করবেন। এর বাইরে স্বতন্ত্র ও বিভিন্ন দল থেকে দুই-একজনের নাম শোনা যাচ্ছে।
এদিকে জাতীয় পার্টির সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে গঙ্গাচড়া উপজেলায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলার সাবেক সভাপতি সামছুল আলম, তারাগঞ্জে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান মার্শাল, পীরগঞ্জে উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুর আলম যাদু, কাউনিয়ায় শাহিনুজ্জামান শাহিন, বদরগঞ্জে মোফাজ্জল হোসেন মাস্টার ও মাসুদ রানা, পীরগাছা উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা কমিটির সভাপতি শাহ মাহবুবার রহমান, মিঠাপুকুর উপজেলায় আনিছুল ইসলাম আনিছ ও রংপুর সদরে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদ নবী মুন্নাকে প্রাথমিকভাবে প্রার্থী হিসাবে মনোনীত করা হয়েছে।
তবে স্থানীয় বিএনপি নেতা বা সমর্থিত কোনো সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম এখনো শোনা যায়নি। দলের রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু বলেন, বিএনপির কেন্দ্র থেকে এখন পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা এলে বলা যাবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কি না। তবে এই ডামি সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক একেএম ছায়াদত হোসেন বকুল ও রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল বলেন, এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে না। তবে উন্নয়নের স্বার্থে উপজেলার ভোটাররা আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বেছে নেবেন।