সুফি সাগর সামসকে কমবেশি অনেকেই চেনেন একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে। আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা বলে তিনি নিজেকে পরিচয় দিতেন। এই পরিচয়ে সামস মূলত বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জিম্মি করে চাঁদাবাজি ও অর্থ কামিয়ে আসছিলেন। দীর্ঘদিন ধরেই তার এই প্রতারণা চলছিল। এছাড়াও সামস নিজেকে একজন ডক্টরেটধারী বলে দাবি করতেন। আদতে তিনি কোনো পড়াশুনাই করেননি। মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেই তিনি ডক্টর বনে যান।
সম্প্রতি ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুল ওয়াহেদের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন। পরে তিনি যখন বিষয়টি নিয়ে পুলিশকে অভিযোগ দেন তখন তদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্তে বেরিয় আসে এমন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য। এরপর সেই ভুয়া মানবাধিক সংগঠনের উপদেষ্টা সুফি সামসকে গ্রেফতার করে ডিবি। রোববার (৩১ মার্চ) অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সোমবার (১ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর ডিবি কার্যালয়ে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। সংবাদ সম্মেলনে ডিবির মতিঝিল বিভাগের ডিসি রাজীব আল মাসুদ, মতিঝিল জোনের সাইবার বিভাগের এডিসি নাজমুল ইসলাম ও এসি এরশাদুল রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, সেই এমপির কাছে সুফি সামস চাঁদা দাবি করেন। এরপর তাকে হেনস্তা করার জন্য তিনি পাপুয়া নিউ গিনির নাগরিক বলে প্রচার করতে থাকেন। এজন্য তার নামে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে মিথ্যা অভিযোগে চিঠি দেন সামস। তারপর মোটা অংকের চাঁদা দাবিও করেন। চাঁদা না দেওয়ায় সামস ও তার সহযোগীরা এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা শিরোনামে উচ্চ আদালতে মীমাংসিত বিষয়ে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এটি নজরে এলে সংসদ সদস্যের ব্যাক্তিগত সহকারী বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলার তদন্তে নেমে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ডিবির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, সামস নিজেকে একজন ডক্টর দাবি করলেও তার সত্যতা পাওয়া যায়নি। আমরা তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তিনি আমেরিকার যে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বলেছেন সেটির কোনো অস্তিত্ব নেই। মূলত তার একজন আত্মীয় আমেরিকায় থাকেন। তার পরামর্শে তিনি এই সার্টিফিকেটটি তৈরি করেন এবং নিজেকে ডক্টরধারী বলে প্রচার করতে থাকেন।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, তিনি নিজেকে বাংলাদেশ হিউম্যানিষ্ট পার্টি বিএইচপি’র মহাসচিব হিসেবে দাবী করতেন। প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন কমিশনে এরকম নামের কোনো দলের নিবন্ধন নেই। মূলত বিভিন্ন জনকে জিম্মি করে চাঁদাবাজি করাই ছিল তার পেশা। কারও নামে কোনো পত্রিকায় দুর্নীতির সংবাদ হলেই তার নম্বর সংগ্রহ করে দুদকে অভিযোগ দায়ের করা হবে বলেও ভয় দেখানো হতো। এভাবে সামস বিভিন্ন জনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা চাঁদাবাজি করতেন। তাকে মানবপাচারের অভিযোগে আমেরিকান অ্যাম্বাসির করা একটি মামলায় গ্রেফতার করেছিলো ডিবি। তার বিরূদ্ধে বিভিন্ন থানায় চারটি মামলা আছে। এই চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সামসকে সাত দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদনসহ আদালতে পাঠানো হয়েছে।
ডিবি জানায়, সুফি সামস সম্প্রতি কিছু মানুষকে আমেরিকায় পাঠানোর নাম করে প্রতারণা করেন। এছাড়াও তার নামে অসংখ্য মানুষের সাথে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।