রাজধানীতে এক তরুণীকে তার কথিত প্রেমিক ও দুই বন্ধু মিলে ২৫ দিন ধরে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে আসছিল। তাকে বেঁধে রাখা হয়েছিল শেকলে। আর তাতে সাহায্য করতেন এক প্রবাসীর স্ত্রী। জাতীয় জরুরি সেবা ট্রিপল নাইনে কল করলে অবশেষে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করেছে। সেই সাথে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
রোববার (৩১ মার্চ) মোহাম্মদপুর থানার নবীনগর হাউজিং এলাকা থেকে সেই তরুণীকে উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, এই ঘটনায় ভুক্তভোগী ২৩ বছর বয়সী তরুণী রোববার বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেছেন। সেই মামলায় তিনি তার প্রেমিকসহ ৪ জনের নামও উল্লেখ করেছেন।
আসামিরা হলেন- তরুণীর প্রেমিক সান (২৬), হিমেল (২৭) ও রকি (২৯)। আসামি নারীর নাম সালমা ওরফে ঝুমুর (২৮), যিনি এক প্রবাসীর স্ত্রী। সালমার সহায়তায় এই তরুণীর সঙ্গে পৈচাশিক আচারণ করেছে ধর্ষণকারীরা।
ভুক্তভোগী তরুণীর অভিযোগ, নবীনগরে সালমার চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে গত ৫ মার্চ থেকে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল। ওই তিন যুবকের ধর্ষণের ঘটনায় সহায়তা করেন সালমা।
মামলায় ওই তরুণী আরও জানিয়েছেন, বাবা-মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ এবং পরে তারা অন্যত্র বিয়ে করায় ওই তরুণী তার বড় বোনের বাসায় থাকছিলেন। সে সময় ভগ্নিপতির মাধ্যমে এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে ওই যুবকের মাধ্যমে এক প্রবাসীর স্ত্রী সালমা ওরফে ঝুমুরের সঙ্গে পরিচয় হয় তরুণীর। এক পর্যায়ে বোনের বাসা ছেড়ে তার (সালমা) সঙ্গে নবীনগরের ভাড়া ফ্ল্যাটে ওঠেন ওই তরুণী। পরে ঝুমুরের মাধ্যমে সান নামের এক যুবকের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নবীনগরের ওই বাসায় গত ৩ ফ্রেব্রুয়ারি প্রথম ধর্ষণ করেন সান। একইভাবে ২৭ ফেব্রুয়ারি বিয়ের আবারও ধর্ষণ করে সান। পরবর্তীতে বিয়ের জন্য চাপ দিলে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন প্রেমিক সান।
এরপর গত ৫ মার্চ দুপুরে দুই বন্ধু হিমেল ও রকিকে নিয়ে ওই বাসায় এসে সান তাকে সারপ্রাইজ দেবে বলে চোখ বন্ধ করতে বলে। সালমা এ সময় খাবার আনার কথা বলে রুম থেকে বের হয়ে যায়। সানের কথায় চোখ বন্ধ করলে তারা তিনজন মিলে তরুণীর হাত, পা ও চোখ বেঁধে ফেলে এবং মুখে কসটেপ লাগিয়ে ফেলে। পরে সালমার কথায় হিমেলকে পাহারায় রেখে অন্যরা শেকল আনার জন্য বাইরে চলে যায়। এ সময় একা পেয়ে হিমেল তাকে ধর্ষণ করে।
সেই দিন থেকে শেকল দিয়ে তার হাত ও পা বেঁধে রাখা হয় দাবি করে ওই তরুণী মামলায় অভিযোগ করেন, এক দিন পর ৭ মার্চ রকি বাসায় এসে তাকে ধর্ষণ করে। খাবার এবং বাথরুমে যাওয়া সময় বাসায় থাকা সালমা শুধু পায়ের শেকল খুলে দিতেন। পরদিন সানের ধর্ষণের চিত্র ভিডিও তার মোবাইল ফোনে ধারণ করেন সালমা। এরপর থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ওই তিনজন তাকে ধর্ষণ করেন এবং একে অপরের ভিডিও করেন। এসময় সালমা তাদের সহায়তা করে। গত ৩০ মার্চ রাতে বাসায় কেউ না থাকার সুযোগে জানালা দিয়ে চিৎকার করে স্থানীয় এক ব্যক্তির দৃষ্টি কারণ করতে সক্ষম হন নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী। পরে ওই ব্যক্তি ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে পুলিশ এগিয়ে আসে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আজিজুল হক।
তিনি জানান, ফোন পেয়ে নবীনগর হাউজিং এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে এক তরুণীকে উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক তোফাজ্জল বলেন, ৯৯৯ এর মাধ্যমে খবর পেয়ে শেকল দিয়ে হাত-পা বাঁধা ওই তরুণীকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।