গৌরনদী টেক্সটাইল‘র অধ্যক্ষ হুমায়ুনের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ।। স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট এর অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে।
রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাসে অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে ২২টি অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করে পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। দুপুরে কলেজের একাডেমিক ভবনের সম্মুখে বক্তব্য রাখেন শিক্ষার্থী সিয়াম মোল্লা, জুবায়ের জিম, উত্তম হালদার, আবির হোসেন, জাবের আহম্মেদসহ অন্যান্যরা।
অধ্যক্ষ হুমায়ুন অনতিবিলম্বে পদত্যাগ না করলে কঠিন আন্দোলনের হুমকি দেন আন্দোলনকারীরা। অভিযোগের ব্যাপারে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট এর অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির মুঠো ফোনে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যো ও ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, গত ২৭ আগস্ট থেকে কতিপয় শিক্ষার্থী আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে আসছে।
ইঞ্জিঃ মো হুমায়ুন কবির, অধ্যক্ষ (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এর থাকা অবস্থায় অনিয়ম, দূর্নীতি ও অর্থ আত্বসাতের নানা অভিযোগ আসলেও রহস্যজনক কারনে অধক্ষ্যর বিরুদ্ধে এখন পযর্ন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এসময়ে শিক্ষার্থীরা কিছু দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেন সাংবাদিকদের কাছে, অভিযোগগুলো হচ্ছে।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স (পাশ,ফেইল,ইয়ারলস) বিস্তারিত
অভিযোগ নং-১: ১ম সেমিস্টারে ভর্তিকৃত নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য ৫ হাজার ৮’শ টাকা নিলেও মূল ভর্তি রশিদ না দিয়ে ফটোকপি রশিদ দেয়া হয়। পরবর্তিতে নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীরা এস.এস.সি এর মূল মার্কশীট দিতে না পারলে তার ভর্তি বাতিল হয় এবং ৫ হাজার ৮’শত টাকা ফেরৎ দেয়া হয় না এবং তা সরকারি ক্যাশবুকে তোলা হয় না। প্রতি বছর এরকম ৬-৭ জন থাকেই।
অভিযোগ নং-২: ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তির সময় ১টি টাই ৩’শত টাকা এবং ১টি ব্যাজ ৩০ টাকা নেওয়া হয়। তার কোনো রশিদ দেয়া হয় না। যদিও টাই ও ব্যাচের বাজার মূল্য ৮০-১০০ টাকা, (টাই), ১০ টাকা (ব্যাজ)। এটা অধ্যক্ষের নিজস্ব ব্যবসা বলে পরিচিত।
অভিযোগ নং-৩: ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময় ১টি শার্ট এর মাপ নেয়া হয়। সাধারণত টেইলার্সের দোকানে শার্ট বানাতে ৪শত টাকা লাগলেও নেয়া হয় ৬৫০ টাকা, টাকার কোনো রশিদ দেয়া হয় না। উক্ত শার্ট কলেজের অ্যাপারেল ল্যাবে তৈরী করলেও শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিকের সময় কোনো কাচামাল ও কাপড় দেয়া হয় না। কোনো ছাত্র/ছাত্রী সুইং মেশিন চালাতে পারে না। এটা অধ্যক্ষের নিজস্ব ব্যবসা বলে পরিচিত।
অভিযোগ নং-৪: ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময় ১ সেট নতুন বই নিতে বলা হয়। লাইব্রেরীতে মূল্য ১৩০০-১৪০০ টাকা হলেও ব্যক্তিভেদে তা ১৬০০-১৮০০ টাকা রাখা হয়।
অভিযোগ নং-৫: প্রাইম/হক পাবলিকেশন হতে ২০২৩ সালে জোরপূর্বক ৩০ হাজার এবং ২০২৪ সালে ১৫ পনের হাজার টাকা গোপনে নেয়া হয়। পাবলিকেশন থেকে এ ব্যাপারে শিক্ষকদের জানানো হলেও অধ্যক্ষ তা অস্বীকার করেন।
অভিযোগ নং-৬: ভর্তি বাতিল শিক্ষার্থীর অধিকার। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল করতে চাইলে অধ্যক্ষকে বোর্ডের ফি ব্যতীত ৫ হাজার দিতে হয়। টাকা না দিলে তিনি ভর্তি বাতিলের আবেদনে স্বাক্ষর করেন না। এ ব্যপারে জবাবদিহি করলে তিনি বলেন ভর্তি বাতিলে নিরুস্বাহিত করতে এ টাকা নেয়া হয়, যার সম্পূর্ণ বেআইনী। ২০২২-২০২৪ সাল পর্যন্ত ৩৫-৪০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
অভিযোগ নং-৭: ২০২২-২০২৪ সাল পর্যন্ত ১ম পর্বে নতুন ভর্তি হয়ে ৩৫-৪০ জন শিক্ষার্থী আর কলেজে আসেনি। তাদের ভর্তি থেকে ফি বাবদ প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা সরকারী ক্যাশ বইতে উল্লেখ না করে টাকা আতœসাৎ করেন অধ্যক্ষ।
নতুন করিকুলাম || অষ্টম শ্রেণির বাংলা অধ্যায় ২ নজরে ‘রেলের পথ
অভিযোগ নং-৮: ১ম পর্বে আসন সংখ্যা ২ শিফটে ২৫০ জন হলেও ক্লাশ নেয়া হয় একসাথে। যা ক্লাশ রুমের ধারণ ক্ষমতার তুলনায় অনেক বেশী। ফলে শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে ক্লাশ করে।
অভিযোগ নং-৯: ভর্তি প্রচারণায় বাজেট থাকলেও উক্ত খাত হতে খরচ না করে পরীক্ষা খাত হতে নিয়ে যান এবং বাজেট হতে আলাদা বিল করে নিজে টাকাটা আতœসাৎ করেন।
অভিযোগ নং-১০: প্রতি পর্বে ভর্তিতে রশিদ ছাড়া রেড ক্রিসেন্ট ফি ১০০ টাকা ও স্কাউট ফি ১০০ টাকা করে নেয়া। উক্ত টাকা অধ্যক্ষের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকের কাছে দিলেও তাদের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জনসেবামূলক কাজে খরচ করার ক্ষমতা দেন না। অধ্যক্ষ নিজে বিভিন্ন প্রোগ্রামের অতিথিদের আপ্যায়ন বাবদ শিক্ষকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নেন। এটাকে তিনি ব্যাক-আপ খাত হিসেবে ব্যবহার করেন। আপ্যায়ন বাজেট হতে আলাদা বিল করে নিজে আতœসাৎ করে।
অভিযোগ নং-১১: ১ম পর্বের ভর্তিতে ৩০০ টাকা মেডিক্যাল ফি নিলেও ১ দিন একজন ডাক্তার এনে সবাইকে ক্লাশরুমে/পরীক্ষার হলে এক পলক দেখিয়েই সকলের নামে মেডিক্যাল রিপোর্ট দেয়া হয়। ডাক্তারকে দেন ৮-১০ হাজার, যিনি ডাক্তার নিয়ে আসেন তাকে দেন ২ হাজার ৫’শত টাকা। গত ৫ বছরে উক্ত খাত হতে অধ্যক্ষ প্রায় ২ লাখ টাকা আতœসাৎ করেন।
অভিযোগ নং-১২: ১ম পর্বের ভর্তিতে ৫শত টাকা অরিয়েন্টেশন ফি নিলেও শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০-১৫০ টাকার বেশি খরচ করেন না। শিক্ষকদের চাপে ২৩-২৪ সেশনে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা খরচ করেন। এভাবে গত ৫ বছরে উক্ত খাত হতে অধ্যক্ষ অনেক অর্থ আতœসাৎ করেন।
অভিযোগ নং-১৩: ক্রীড়া ও সংস্কৃতিক ফি বাবদ ৫’শত টাকা নিলেও তিনি গত বছর স্পোর্টস করেননি। ব্যাট ভেঙ্গে গেলে, বল ফেটে গেলে দিতে চান না। মাঠ খেলার অনুপযাগী, তিনি তা সংষ্কার করেননি। গোল পোস্ট বানিয়ে দেননি। দলীয় খেলা দিয়ে সামান্য কিছু খরচ করে বাকি টাকা আতœসাৎ করেন। এমন স্পোর্টস শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা চান না। এসব নিয়ে কথা বলতে গেলে তিনি রেগে যান।
অভিযোগ নং-১৪: ধর্মীয় ফি বাবদ ২৫০ টাকা নিলেও ধর্মীয় ও ক্রয় কমিটিকে অবমূল্যায়ন করে নিজে কেনাকাটা করে বাকি টাকা আতœসাৎ করেন। রমজানে ১ দিন জন প্রতি ৩০-৪০ টাকার ইফতার দিলেও বিল করেন ৮০-৯০ টাকা। ৮ম পর্বে ধর্মীয় ফি নিলেও শিক্ষার্থীরা এর সুবিধা পান না। কারণ তারা মিল ট্রেনিং-এ থাকে। ৮ম পর্বের সকল অর্থ আতœসাৎ করেন।
অভিযোগ নং-১৫: পূজায় কোনো বরাদ্ধ দিতে চান না। নিজ অর্থায়নে মাঠে পূজা করতে বলেন। ২০২৪ সালে ২-১ জন শিক্ষক অধ্যক্ষকে অনেক অনুরোধ করে পূজার জন্য ৫০০০/- নিয়ে দেন।
ডিপ্লোমা করে বিএসসি নাকি HSC করে বিএসসি করা উচিৎ
অভিযোগ নং-১৬: পরিচয় পত্র বাবদ ১৫০ টাকা ও লাইব্রেরী কার্ড বাবদ ১০০ টাকা নেয়া হয়। পরিচয়পত্র অধ্যক্ষ নিজে ঢাকা থেকে বানিয়ে আনেন। কোনো শিক্ষার্থীর পরিচয় পত্র/লাইব্রেরী কার্ডে ভুল হলে তাদের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে নিলেও ১-২ বছরে তা সংশোধন করে দেন না। উক্ত খাত হতেও অধ্যক্ষ বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেন।
অভিযোগ নং-১৭: আইসিটি ফি বাবদ ১৫০ টাকা নেয়া হলেও তা হতে ১ টাকা খরচ না করে সকল অর্থ আতœসাৎ করেন।
অভিযোগ নং-১৮: একাডেমিক ভবনে শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই।
অভিযোগ নং-১৯: পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বাবদ ৩৫০ টাকা (১ম পর্ব) ও ১৫০ (২-৭ম পর্ব) নিলেও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাজের জন্য পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও বন নিধনের কীটনাশক দেয়া হয় না। বর্তমানে সম্পূর্ণ কলেজ বন-জঙ্গল-আগাছায় ছেয়ে গেছে, বিষাক্ত সাপও আছে। অনেক ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা বাবদ খরচ পরীক্ষা খাত থেকে নেয়া হয়। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বাজেট হতে সমপরিমাণ টাকা আলাদা বিল করে নিজে আতœসাৎ করে।
অভিযোগ নং-২০: প্রতি সেমিস্টারে বিবিধ খাতের প্রায় ১ লক্ষ টাকা করে আতœসাৎ করেন তিনি। এ খাতে ১ম পর্বে-৩৫০ টাকা ২য়-৭ম -২১০ টাকা ও ৮ম পর্বে ১৬০ টাকা করে ধরা হয়।
অভিযোগ নং-২১: ৮ম পর্বে কোর্স সমাপনী ফি-১০০টাকা ও প্রসংশাপত্র ফি ১৫০ টাকা নিলেও তার প্রিন্টিং খরচ মাত্র (৮০ টাকা)। অবশিষ্ট সকল অর্থ নিজে আতœসাৎ করে। রেজিষ্টার শাখা হতে এসব প্রস্তুত করে দিলেও তাদের কোনো পারিশ্রমিক দেন না। অধ্যক্ষ রেজিস্ট্রার হতে প্রস্তুতকৃত সফট কপি নিয়ে ঢাকা হতে প্রিন্ট করিয়ে আনেন।
এছাড়াও অধ্যক্ষ’র বিরুদ্ধে অফিস ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত দুর্নীতির অপর ফিরিস্তিগুলো হচ্ছে- অধ্যক্ষ প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ৪-৫ দিন অফিস করেন। একদিন এসে ৭-৮ দিনের স্বাক্ষর করেন। অধিকাংশ সময় তিনি ঢাকায় অবস্থান করেন। জুন-জুলাই-২০২৪ মাসে তিনি মাত্র ২ দিন অফিস করেছেন। অধ্যক্ষ কলেজে অনুপস্থিত থাকাকালীন কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যান না।
অধিকাংশ চিঠি/নোটিশ অধ্যক্ষের অনলাইন স্বাক্ষরে দেয়া হয়। অধ্যক্ষ নিজে অনুপস্থিত থাকলেও যেদিন তিনি আসেন সেদিন নিয়মিত অফিস মেনে চলা কোন কর্মকর্তা/কর্মচারী না আসলে আদের ছুটির আবেদন না নিয়ে সি/এল দেয়া হয়। অধ্যক্ষ কলেজে উপস্থিত থাকাকালীন কখনও কোনো শিক্ষককে ক্লাশের বিষয়ে জবাবদিহি করেন না।
অনেক শিক্ষক ক্লাশ না নিয়ে ঘুরে বেড়ান। অধ্যক্ষকে সাপ্তাহিক ক্লাশ মনিটরিং রিপোর্ট দিলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেন না। তিনি নিজে কলেজে না এসে নর্দান ইউনিভার্সিটি ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অতিথি শিক্ষক হিসেবে ক্লাশ নেন।
ডিপ্লোমা করে বিএসসি নাকি HSC করে বিএসসি করা উচিৎ
ল্যাবের কাঁচামাল ও ক্রয় সংক্রান্ত দূর্নীতি: ব্যবহারিক ল্যাবের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট থাকা সত্ত্বেও তিনি দেন না। ডাইং ল্যাবের জন্য বছরে ১২-১৩ হাজার টাকার কেমিক্যাল কিনলেও বিল করেন ২৪-২৫ হাজার। তারপর বলে দেন বাজেট শেষ।
ডাইং ল্যাবের জন্য গ্যাস সিলিন্ডার পরীক্ষার খাত ও রেড ক্রিসেন্ট খাত হতে কিনতে হয়। কটন স্পিনিং ও টেস্টিং ল্যাবের কিছূ মেশিন মেরামত করে রক্ষণাবেক্ষণ খাতের সকল টাকা আতœসাৎ করেন। ডাইং ল্যাবের অধিকাংশ মেশিন নষ্ট। দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক মেরামতের কথা বললে বাজেট নেই বলে সমাধান দেয়। কম্পিউটার ল্যাব মেরামতের অধিকাংশ টাকা আতœসাৎ করেন। ফটোকপি মেশিন দীর্ঘদিন নষ্ট থাকায় তা দ্বারা প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করলে কালি উঠে যায়।
পরবর্তিতে শিক্ষক ও ছাত্র/ছাত্রীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঠিক করলেও তার খরচ পরীক্ষা খাত হতে নেয়া হয়। মেরামত খাতের বাজেট হতে পুনরায় বিল করে টাকা আতœসাৎ করেন। নিজস্ব জেনারেটর থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষার হলে কারেন্ট চলে গেলে তা চালু করেন না। ডিজেল ক্রয় করেন ১৫-২০ লিটার কিন্তু বিল করেন ৮০-১০০ লিটার, কোনো কোনো পরীক্ষার বিলে ১৮০ লিটার ও দেখানো হয়েছে। বাকি টাকা আতœসাৎ করেন।
প্রতিষ্ঠানের ক্রয় কমিটিসহ সকল কমিটি নামে মাত্র রাখা হয়। কমিটির সদস্যদের কোনো ক্ষমতা দেয়া হয় না। কলেজের সকল মালামাল, কাচাঁমাল, কেমিক্যাল, অধ্যক্ষ নিজে ঢাকা থেকে ক্রয় করে লোকাল বাজার দর অনুযায়ী বিল করেন।
হিসাব/ রেজিস্ট্রার শাখায় কখনও অফিস ব্যবস্থাপনা বা আপ্যায়নের জন্য কোন টাকা রেখে যান না। জরুরী প্রয়োজনের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ব্যক্তিগত টাকা হতে খরচ করতে বলেন এবং তিনি পরে পরিশোধ করেন।
শিক্ষার্থীর তুলনায় ক্লাশরুমে চেয়ার কম থাকায় ২০২৪ সালে ১লক্ষ টাকা বরাদ্ধ থাকলেও তিনি বিশ হাজার টাকার মধ্যে নি¤œ মানের ৩০টি চেয়ার ক্রয় করেন। ইতোমধ্যে ৭-৮ টি চেয়ার ভেঙ্গে গেছে। বাকি টাকা আতœসাৎ করেন। অধ্যক্ষ তার সকল অবৈধ হিসাব রাখার জন্য ব্যক্তিগত একজন হিসাব সহকারী রেখেছেন। যার পারিশ্রমিক তিনি প্রতিষ্ঠান হতে বেনামে বিল করে ব্যবস্থা করেন। কলেজে ১টি ব্যায়ামাগার স্থাপন করে লক্ষ টাকা আতœসাৎ করেন। সব যন্ত্রপাতি পরে আছে। শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে দেন না।
হোস্টেল সংক্রান্ত দুর্নীতি: ছাত্র হোস্টেলে আসন সংখ্যা ১৩৬ কিন্তু সিট দেয়া হয় ১৫৬ জনকে। অতিরিক্ত টাকা আতœসাৎ করেন। রশিদ ছাড়া ৭ শত করে ভুয়া বিল নেয়া হয়। অধ্যক্ষের নিজস্ব আউটসোর্সিং জনবল দ্বারা হোস্টেলের বাজার করিয়ে টাকা মেরে মিল রেট বাড়িয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়।
বিদ্যুৎ এর অপচয় রোধ দেখিয়ে প্রচন্ড গরমে দিনে ৭-৮ ঘন্টা কারেন্ট বন্ধ করে রাখা হয়। কিন্তু কলেজের প্রশাসনিক ভবনের নিচ তলায় অধ্যক্ষের থাকার রুমে দিন রাত এসি, ফ্যান ও লাইট চালানো থাকে।
স্ট্যাফ কোয়ার্টারে স্ট্যাফরা এসি চালায়, হোন্ডা চার্জ দেয়। উক্ত ঘটনা নিয়ে অভিযোগ করলে অধ্যক্ষ পুলিশ দিয়ে ভয় দেখায়, মানসিক নির্যাতন করে, অভিবাবককে শাসান।
দীর্ঘদিন বিশুদ্ধ খাবার পানির সমস্যা ইস্যুতে ২ জন হোস্টেল সুপার যথেষ্ট চেষ্টার পরও অধ্যক্ষ টিউবওয়েল বসানোর টাকা দেননি। বরং হোস্টেল সুপারদের অপসারণ করেন। পরবর্তিতে অধ্যক্ষ নিজে ৪৯০০০/- টাকায় টিউবওয়েল বসিয়ে ৯০০০০/- বিল করে টাকা হাতিয়ে নেন। বর্তমানে পানিতে প্রচুর আয়রণ।
অধ্যক্ষ প্রতি মাসে হোস্টেল হতে ২ হাজার ৫ শত ভাতা নেন। বিগত ২৪ মাসে একত্রে ৬০ হাজার সম্মানী নেন। ২০২২ সালে সদ্য অবসরে যাওয়া ডিজি স্যার প্রতিষ্ঠান ভিজিটে আসলে অধ্যক্ষ নানান খরচ দেখিয়ে ১ম ধাপে ৭০ হাজার ২য় ধাপে ভাউচার ব্যতিত ২০ হাজার হাতিয়ে নেন। হোস্টেল সুপারদের হোস্টেল পরিচালনা ও অর্থ খরচের ক্ষেত্রে কোনো ক্ষমতা দেয়া হয়নি। অধ্যক্ষ নিজে হোস্টেলের সিট বরাদ্ধ করেন।
ভারী বৃষ্টিতে হোস্টেলের বিভিন্ন তলায় পানি প্রবেশ করলেও তিনি তা সংষ্কারের কোনো উদ্যোগ নেননি। কোনো লাইট নষ্ট হলে শিক্ষার্থীদের নিজ অর্থায়নে কিনতে বলেন। ২টি হোস্টেলের জন্য মাত্র একজন সহঃ হোস্টেল সুপার রাখা হয়েছে। যদিও কলেজে পর্যাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারী আছে।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর সাধারণ জ্ঞান (পর্ব – ১)
ছাত্রী হোস্টেলে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা না থাকায় ছাত্রীদের ছাত্র হোস্টেল এর নিকট হতে পানি নিতে হয়। ফলে ছাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় থাকে। হোস্টেলের ছাত্রদের সকালের নাস্তা বন্ধ করে কেন্টিন চালু করা হয়। বাহিরের হোটেলের তুলনায় কেন্টিনে খাবারের দাম বেশী রাখা হয়। এ ব্যপারে অধ্যক্ষকে অভিযোগ করলে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
কেন্টিন হলো অধ্যক্ষের ব্যবসা। যদিও উক্ত কেন্টিন চালু করতে প্রারম্ভিক মূলধন কলেজ ফান্ড হতে নেয়া তথাপি কেন্টিন হতে মুনাফার সকল টাকা অধ্যক্ষের পকেটে যায়। তিনিসহ তার ব্যক্তিগত হিসাব সহকারী উক্ত কেন্টিনে ২ বছর যাবৎ ফ্রি খায়।
পরীক্ষা সংক্রান্ত দূর্নীতি: পরীক্ষার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তিনি পরীক্ষা চলাকালীন অধিকাংশ সময় ঢাকায় অবস্থান করেন। ২০২৪ সালের পর্ব সমাপনী পরীক্ষায় ১ মাসে তিনি মাত্র ২ দিন অফিসে ছিলেন। উক্ত কারণে প্রশ্নপত্র পেতে সমস্যা হয়। ২০২৪ সালের পর্ব সমাপনী পরীক্ষায় ১জন পরীক্ষার্থীকে ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট পর প্রশ্ন দেয়া হয়।
পরীক্ষার সময় ৩ ঘন্টা। প্রশ্নের জন্য অধ্যক্ষকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ধৈর্য ধারন করতে বলেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও যখন অধ্যক্ষ কোনো ব্যবস্থা করতে পারেননি তখন প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিতরা সরাসরি বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অবগত করলে চেয়ারম্যান ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট পর ব্যবস্থা নেন। উক্ত সময় অধ্যক্ষ ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।
ইনস্টিটিউটের ১ জন স্টাফকে (অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠ) মিথ্যা অুস্থতা দেখিয়ে আলাদা রুমে পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে ২০২৩ সালে শুপারিশ করে। কিন্তু ২০২৪ সালে পরীক্ষা কমিটির সদস্যদের সততার কাছে ১ম ধাপে হার মানতে বাধ্য হয়। ২য় ধাপে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শুধুমাত্র ৫ম পর্বকে একত্রে এক হলে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে সহঃ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে অনুরোধ করেও ব্যর্থ হন। উক্ত স্ট্যাফ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ছাত্র।
সম্পূন্ন কারিগরি বোর্ডের বিধি অনুসরণ করে পরীক্ষার বিল করা হয় না। অধ্যক্ষ যে যে খাতে টাকা পাবেন ঔ খাত গুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়। বেজোড় সেমিস্টারে শিক্ষাথীদের অর্থায়নে আয়োজিত মিল ভিজিটে অধ্যক্ষ ১ টা মিলের বেশী ঠিক করেন না ও শিক্ষার্থীদের সাথে যাননা তথাপি তিনি প্রতি গ্রুপ হতে ৪৫০০-৫০০০ টাকা করে সম্মানী নেন। অথচ যে শিক্ষক / কোর্স কো-অর্ডিনেটর সব ব্যবস্থাপনা করেন তিনি পান মাত্র ২০০০-২৫০০ টাকা।
মিল ভিজিটে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা দিয়ে অধ্যক্ষ পানি এনে রাখেন। উক্ত পানি তিনি ভিজিটে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের নিকট বিক্রি করেন। পানি ক্রয়-১২ টাকা, বিক্রি-১৫ টাকা। অধ্যক্ষের কোনো মূলধন নাই। বিনা চালানে ব্যবসা করে টাকা হাতিয়ে নেন।
পরীক্ষা চলাকালীন যত আপ্যায়ন করা হয় তা তিনি আপ্যায়ন খাতে পর্যাপ্ত বাজেট থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা খাত হতে কেটে নেন। এবং উক্ত টাকা পূনরায় আপ্যায়ন বাজেট হতে বিল করে আতœসাৎ করেন। ৮ম পর্বের সমাপনী ব্যবহারিক পরীক্ষায় ৮ম পর্বের কোর্স কো-অর্ডিনেটরকে রাখা হয় না, অধ্যক্ষ নিজে থাকেন এবং ৫০ টাকা/শিক্ষার্থী তিনি নিয়ে যায়।
স্টাফরা কর্মকর্তাদের সাথে খারাপ আচরন করলেও তিনি তার বিচার করেন না। উল্টা পিয়নদেরকে বলে দেন শিক্ষকদের চাপে রাখতে এব ছাড় না দিতে।
শিক্ষার্থীদের উপরোক্ত সকল অভিযোগের পেক্ষিতে তার পদত্যাগ ও সমুদয় হিসাব বুঝিয়ে দেয়ার জন্য তাহাকে বারবার ফোন করা সত্ত্বেও গত ২৭-০৮-২৪ থেকে ০১-০৯-২০২৪ ইং পর্যন্ত তিনি কলেজে আসেন নি। তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং পদত্যাগ করবেন না বলে জানান।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শহীদদের তালিকা সংগ্রহ চলছে-২০২৪
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে